ক্রীড়া প্রতিবেদক
মিরাজরা শোনাচ্ছেন যদি-কিন্তুর গল্প...
শারজাহর মাঠে টস হয়ে গিয়েছিল বড় ফ্যাক্টর। আগের দুই ম্যাচে টস জিতে যারা আগে ব্যাট করেছে, ম্যাচও জিতেছে তারাই। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে টসভাগ্য পক্ষে এলো বাংলাদেশের, আগে ব্যাটিংও নিল। তবে এ হিসাব এবার কাজে আসেনি। রহমানুল্লাহ গুরবাজ আর আজমতুল্লাহ ওমরজাইর ব্যাটে সিরিজ জিতে নিয়েছে আফগানিস্তান। বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের মতে, এদিন পরে বল করা নাকি ছিল কিছুটা সমস্যার! ১০ বল বাকি থাকতে বাংলাদেশের ২৪৪ রান টপকে ৫ উইকেট ম্যাচ ও সিরিজ জিতে যায় আফগানরা। সেঞ্চুরি করেন গুরবাজ। ৭০ রানের ইনিংস খেলেন ওমরজাই, যিনি বল হাতেও নেন ৪ উইকেট।
ম্যাচ শেষে হারের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মিরাজ বলেন, শিশিরের কারণে নাকি রাতের বেলা ওদের ব্যাট করতে সুবিধা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা গত দুই ম্যাচে দেখেছি উইকেটে বল ঘুরেছে এজন্য আমরা আগে ব্যাট করতে চেয়েছি। আজ কিছু শিশির পড়েছে। কাজেই বল খুব সহজে ব্যাটে আসছিল।’ এই যদি-কিন্তুর গল্প কবে শেষ হবে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের। যেখানে তারা যদি-কিন্তু পড়েন, সেখানে ক্রিকেটে তাদের পরে এসে তারা তাদের ভক্তদের শোনাচ্ছেন সফলতার গল্প। আমরা এখন শিখব- এ শেখা কি শেষ হবে না। বাংলাদেশের ক্রিকেটার আপেক্ষ শেষ হবে। নাকি যদি কিন্তু শেষ হবে আমাদের গল্প। অবশ্য প্রতিপক্ষের কৃতিত্ব দেন তিনি, ‘কৃতিত্বটা তাদের দিব। তারা খুব ভালো খেলেছে, বিশেষ করে গুরবাজ ও ওমরজাই।’
অথবা ম্যাচের দৃশ্যপট তার জানান দেয় না। উইকেটের আচরণ ছিল আগের দুই ম্যাচের মতোই বরং এদিন দিনের বেলাও ব্যাট করার জন্য বেশ ভালো ছিল ২২ গজ। পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ ও মিরাজ মিলে ১৪৫ রানের জুটির পরও দল পার করেনি আড়াইশ’। ১০৬ বলে মন্থর ফিফটি করেন মিরাজ। শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরির জন্য স্লগ শটের সংখ্যা ছিল কম। মিরাজের ঠিক বিপরীত মন্তব্য করেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক হাসমতুল্লাহ শহিদি। তার মতে, উইকেট রাতের বেলাতেই ব্যাট করা ছিল বেশি কঠিন। তিনি বলেন, ‘যখন আমরা টস হারলাম এটা ছিল কিছুটা হতাশার। আপনি যদি পিচের আচরণ দেখেন দ্বিতীয় ইনিংসে খুব কঠিন ছিল। কিন্তু আমাদের ছেলেরা দায়িত্ব নিয়েছে, যেভাবে গুরবাজ, ওমরজাই ও নবী ব্যাট করেছে। আমি সত্যিই তাদের জন্য গর্বিত।
এদিকে বাংলাদেশের প্রধান কোচ হওয়ার পর থেকেই হারের মধ্যে আছেন ফিল সিমন্স। দক্ষিণ আফ্রিকার কাজে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ হারের পর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজও হারল বাংলাদেশ। সামনে টাইগারদের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর। সেই সফর যে অনেক কঠিন হতে যাচ্ছে, সেটা আগে-ভাগেই মনে করিয়ে দিলেন সিমন্স। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আশানরূপ খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। ঘরের মাঠের সেই সিরিজটি বাংলাদেশের জন্য ছিল বেশ কঠিন। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জেও উইকেট সহজ হবে না বলেই বিশ্বাস সিমন্সের। ২২ নভেম্বর টেস্ট দিয়ে শুরু হবে দুই ম্যাচের এ সিরিজটি। সিরিজের প্রথম টেস্টের ভেন্যু রাখা হয়েছে অ্যান্টিগায়। আর দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচটি হবে ৩০ নভেম্বর থেকে জ্যামাইকায়। এরপর ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ হবে যথাক্রমে ৮, ১০ ও ১২ ডিসেম্বর। সব ম্যাচই হবে সেন্ট কিটসে। অ্যান্টিগা, জ্যামাইকা এবং সেন্ট কিটসের উইকেট নিয়ে আগে-ভাগেই সতর্কবার্তা দিলেন বাংলাদেশের প্রধান কোচ। শারজাহয় সদ্যসমাপ্ত সিরিজে বাংলাদেশ যেমন উইকেটে খেলেছে, তেমনটা দেখা যেতে পারে সেন্ট কিটসে, এমনটাও জানিয়ে দিলেন তিনি।
সিমন্স বলেন, ‘আমি কি প্রত্যাশা করব? আমি আশা করি, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজের মতো ক্রিকেট খেলাটা কঠিন হবে। আমার মনে হয় সেন্ট কিটসে আমরা এরকম কন্ডিশনেই ওয়ানডে খেলব। আমি জানি না, সেন্ট ভিনসেন্টের উইকেট এখন কেমন। অনেক দিন ধরেই আমি সেখানে নেই।’ ‘কিন্তু অ্যান্টিগা এবং জ্যামাইকার টেস্ট ম্যাচ ভালো উইকেটে হবে। আমার মনে হয় কঠিন একটা সফর হবে এবং ছেলেরা সেটার জন্য মুখিয়ে আছে। আমরা সুবাই মুখিয়ে আছি দেখা যাক আমরা কি করতে পারি। দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের বেশ কয়েকটা ইনজুরি সমস্যা আছে। কিন্তু এটা অন্যদের জন্য একটা সুযোগ যে তারা কতটা প্রস্তুত।’ একইসঙ্গে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে হারের কারণও জানিয়েছেন সিমন্স। ২৪৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ম্যাচের একপর্যায়ে ৫ উইকেটে ১৮৮ রান ছিল আফগানদের। সেখান থেকে ৫৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছান আজমতউল্লাহ ওমরযাই এবং মোহাম্মদ নবী।
"