ক্রীড়া ডেস্ক
মায়ামির পরাজয়ে মেসির স্বপ্নভঙ্গ
কখনও দুই হাত কোমরে রেখে দাঁড়িয়ে রইলেন লিওনেল মেসি। কখনও আকাশের দিকে মুখ করে তাকিয়ে রইলেন শূন্যতায়। ম্যাচে এরকম হতাশার অভিব্যক্তি বেশ কবারই দেখা গেল তার মধ্যে। শেষ বাঁশি বাজার পরপর তিনি মুখ ঢাকলেন দুহাতে। গ্যালারির গোলাপী সমুদ্র তখন যেন বেদনায় নীল। মেসি ও ইন্টার মায়ামির এমএলএস কাপ জয়ের স্বপ্ন শেষ প্রথম রাউন্ডেই!
এমন অঘটনই জন্ম দিয়েছে আটলান্টা ইউনাইটেড। মেজর লিগ সকারে ‘বেস্ট অব থ্রি’ প্লেঅফের তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ সময় রোববার সকালে তারা ৩-২ গোলে হারিয়ে দিয়েছে মেসির মায়ামিকে। মেসি একটি গোল করেছেন হেড থেকে। তবে মায়ামির মাঠে এ দিন নায়ক জামাল চিয়াহ ও বার্তোস স্লিশ। আটলান্টার সেনেগালিজ ফরোয়ার্ড চিয়াহ দুটি গোল করেন প্রথমার্ধে। ২-২ সমতায় থাকা অবস্থায় জয়সূচক গোলটি করেন পোলিশ মিডফিল্ডার স্লিশ।
প্লেঅফের আগের দুই ম্যাচে দুই দল একটি করে ম্যাচ জিতলেও তৃতীয় ম্যাচে পরিষ্কার ফেভারিট ছিল মায়ামিই। নিয়মিত মৌসুমে রেকর্ড পয়েন্ট নিয়ে তারা জিতেছে সাপোর্টার্স শিল্ড। তারকা ঝলমলে দলটি ছিল বেশ ছন্দে। প্রথম রাউন্ডে তিন ম্যাচের প্লেঅফ তারা দুই ম্যাচেই জিতে নেওয়ার কাছাকাছি ছিল। প্রথম ম্যাচে জয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচে এগিয়ে ছিল প্রায় শেষ সময় পর্যন্ত। পরে চার মিনিটে মধ্যে দুই গোল করে নাটকীয়ভাবে জিতে নেয় আটলান্টা। ঘরের মাঠে তৃতীয় ম্যাচে তবু মেসিদের জয়ই ছিল অনুমিত। কিন্তু আটলান্টা এবারও উল্টে দিল ছক।
নিয়মিত মৌসুমে মায়ামির চেয়ে ৩৪ পয়েন্ট পেছনে ছিল তারা। ইস্টার্ন কনফারেন্সে নবম হয়ে কোনোরকমে উঠতে পারে প্লেঅফে। সেখানেও দুই ম্যাচেই বিদায় নেওয়া থেকে মিনিট দুয়েকের দূরত্বে ছিল তারা। কিন্তু ওই ম্যাচে শেষ সময়ে হার না মানা মানসিকতা দেখিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর পর তৃতীয় ম্যাচও তারা জিতে নিল অভাবনীয়ভাবে।
নিজেদের মাঠে গ্যালারি ঠাসা দর্শকদের উল্লাসে ভাসিয়ে ম্যাচে ১৭ মিনিটে মায়ামিকে এগিয়ে নেন মাতিয়াস রোহাস। দিয়োগো গোমেসের পাস থেকে বক্সের ভেতর মেসির শট দারুণ রিফ্লেক্সে ফিরিয়ে দেন আটলান্টার গোলকিপার ব্র্যাড গুজ্যান। কিন্তু কাছেই থাকা রোহাস বল পাঠিয়ে দেন জালে। আটলান্টা পাল্টা জবাব দিতে সময় নেয়নি। ১৯ আর ২১তম মিনিটে পরপর গোল করে মায়ামিকে হতচকিত করে দেন চিয়াহ।
৬৫তম মিনিটে কাছ থেকে মেসির হেড আবার প্রাণ ফেরায় ম্যাচে। কিন্তু মায়ামির শেষ রক্ষা হয়নি। ৭৫তম মিনিটে দারুণ হেডে গোল করেই আটলান্টাকে এগিয়ে নেন স্লিশ। ওই গোল আর শোধ করতে পারেননি মায়ামি। শেষ দিকে দুটি ফ্রি কিক পেয়ে কাজে লাগাতে পারেননি মেসি।
জয়সূচক গোলটি নিয়ে অবশ্য বিতর্ক ছড়ায় কিছুটা। মায়ামির আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার তমাস আভিলেস নিজেদের বক্সের ভেতর পড়ে ছিলেন বেশ কিছুক্ষণ ধরেই। তার সতীর্থরা বলছিলেন খেলা থামাতে। আক্রমণে থাকা আটলান্টা খেলা চালিয়ে যায়। রেফারিও খেলা থামাননি।
তবে আভিলেস পড়ে থাকলেও বক্সের ভেতর একগাদা ফুটবলার ছিল মায়ামির। কিন্তু তারা কেউ রক্ষা করতে পারেননি দলকে। ম্যাচজুড়েই রক্ষণের ব্যর্থতার খেসারত শেষ পর্যন্ত দিতে হলো দলকে। আলাদা করে বলতে হবে আটলান্টার গোলকিপার গুজ্যানের কথাও। আগের দুই ম্যাচে দুর্দান্ত পারফর্ম করা ৪০ বছর বয়সী গোলকিপার এই ম্যাচেও দলের ত্রাতা হয়েছেন কয়েক দফায়।
সাপোর্টার্স শিল্ড জয়ের পর মেসি কয়েক দফায় বলেছেন, এমএলএস কাপ জিততে চান তিনি। এবার তা অধরাই রইল। আটলান্টার গোটা স্কোয়াডের সম্মিলিত পারিশ্রমিকের চেয়ে মেসির একার পারিশ্রমিকই ৫০ লাখ ডলারের মতো বেশি। এই মৌসুমে রেকর্ড ৪ কোটি ১৭ লাখ ডলার খরচ করেছে মায়ামি। তবে মাঠের ফুটবলের বাস্তবতা যে আলাদা, তা ফুটে উঠল আরেকবার। আটলান্টা এখন খেলবে কনফারেন্স সেমি-ফাইনালে। প্রথম রাউন্ডে হেরে গেলেও আগামী বছর ক্লাব বিশ্বকাপে খেলবে মায়ামি। এই ক্লাবে আরও এক বছর চুক্তি আছে মেসির। আরেকটি সুযোগ অন্তত তাই তিনি পাবেন এমএলএস কাপ জয়ের। লুইস সুয়ারেসের চুক্তি শেষ এই মৌসুমেই। তবে নতুন চুক্তির আলোচনা ক্লাবের সঙ্গে চলছে বলে জানিয়েছেন উরুগুয়ের এই ফরওয়ার্ড।
"