ক্রীড়া প্রতিবেদক
‘কোচ চেয়েছিল আমরা যেন খারাপ করি’
পিটার বাটলারকে আবার ফিরিয়ে আনা হবে কি না- বাংলাদেশের ফুটবলে এটাই এখন বড় প্রশ্ন। শুরু থেকেই আসলে মেয়েদের সঙ্গে সুর-তালটা মেলেনি বাটলারের। তাই সাফের মাসখানেক আগে বাফুফের কর্তাদের কাছে মেয়েদের দাবি ছিল এই কোচকে বিদায় করার। সেই দাবি কানে তোলেননি ফুটবল কর্তারা। বলেছিলেন সমাধান করে দেবেন। সমাধান হয়নি কিছুই। সাফ যত এগিয়েছে, মেয়েদের সঙ্গে কোচের দূরত্ব কেবল বেড়েছে। একপর্যায়ে বেশ ক’জন অভিজ্ঞ ফুটবলারের সঙ্গে কোচের সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে। সাফ চলাকালে ভেতরকার সেই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসে। পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিযানের প্রথম ম্যাচে বাটলার মাসুরা পারভীন ও মারিয়া মান্ডাকে বাইরে রেখে একাদশ সাজিয়েছিলেন। সেই ম্যাচে বাংলাদেশকে দেখা যায়নি চেনারূপে। কোনোমতে হার এড়ায় তারা। নইলে দশরথে ৩০ অক্টোবরের গল্পটা অন্যরকম হতে পারত।
পাকিস্তানের সঙ্গে ১-১ ড্রয়ের পরে কোচের একাদশ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মিডফিল্ডার মনিকা চাকমা। ভারতের বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে মনিকা দুই সিনিয়রকে একাদশে রাখার দাবি তোলেন। অভিজ্ঞদের সঙ্গে কোচের দূরত্বের বিষয়টিও জানা যায় তার কথায়। মনিকার মতো দলের আরও কয়েকজন অভিজ্ঞ কোচের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তোলেন। অন্যদিকে কোচও মেয়েদের নিয়ে নানা কটূক্তি করতে শুরু করেন। ভারত ম্যাচের আগে দলের স্বার্থে অভিজ্ঞরা কোচকে বাধ্য করেন দুই সিনিয়রকে একাদশে রাখতে।
এতে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে বাটলার আরও আবোল তাবোল কথা বলতে শুরু করেন। মেয়েদের সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় বেশি দেওয়া নিয়েও কথা বলতে ছাড়েননি তিনি। এছাড়া সাবেক কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিরুদ্ধে বানোয়াট অভিযোগ তোলেন। এ সবের পরও মেয়েরা চোয়ালভাঙা পণ করে মাঠে নেমে ঠিকই একে একে সব বাধা ডিঙিয়ে দেশকে দ্বিতীয়বারের মতো এনে দেন সাফ শিরোপা। দেশে ফেরার দিনই বাটলার জানিয়েছিলেন তিনি আর মেয়েদের সঙ্গে কাজ করবেন না। অথচ তাকেই দীর্ঘমেয়াদে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন কিরণ এবং নবনির্বাচিত নির্বাহী কমিটির বাকিদের মতামত না নিয়েই সংবাদমাধ্যমে একাধিকবার নিজের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেন।
এতে ভীষণ ক্ষুব্ধ মাসুরা বাংলাদেশের গণমাধ্যকে বলেন, ‘আমার কিছু প্রশ্ন- প্রথমত কেন আমাকে পাকিস্তানের বিপক্ষে একাদশে রাখা হয়নি? কোচ বলেছিলেন পারফরম্যান্সের কারণে আমাকে বাদ দিয়েছেন। যদি তাই হয়, তবে তিনদিন পর কী এমন হলো যে আমি ফর্মের তুঙ্গে পৌঁছে গেলাম? কেন ভারতের ম্যাচে খেলানো হলো? কেনই বা সেমিফাইনাল, ফাইনালে পুরো সময় খেলাল? যদি আবারও ওনাকে কোচ করা হয়, তবে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমাকে ওনার দিতে হবে।’ বাদ পড়েছি কোচের ক্রোধের শিকার হয়ে। আসল কারণটা হলো আমরা ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচ দেখে হোটেলে ফিরে সরাসরি ডিনারে চলে গিয়েছিলাম। বাইরে অনেক ঠান্ডা ছিল। আর আমার ঠান্ডা সহ্য হয় না। তাই শীত টুপি ও গ্লাভস পরা ছিলাম। ডিনারে যাওয়ার পর খাবার নিয়ে বসেছি। হঠাৎ কোচ এসে আমাকে টুপি খোলার নির্দেশ দেন। কেন টুপি খুলব? জানতে চাওয়াটাই ছিল আমার অপরাধ। উনি রেগে গিয়ে আমাকে পাকিস্তানের বিপক্ষে একাদশ থেকে বাদ দেন। এরপর ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা সবাই আমাকে আর মারিয়াকে একাদশে নেওয়ার দাবি জানায়। কোচ এতে আরও বিরক্ত হয়ে চেয়েছিলেন দলের সব সিনিয়রদের নিয়ে একাদশ সাজাতে। এমনকি একাদশের গুরুত্বপূর্ণ তরুণদেরও বাদ দিতে চেয়েছিলেন। উনি আসলে চেয়েছিলেন যেন আমরা খারাপ করি। বিশ্বাস করবেন না, কোচ আমাদের কী পরিমাণ মানসিক চাপে রেখেছিলেন। প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও একতাবদ্ধ হয়ে আমরা দেশকে সাফ এনে দিতে পেরেছি। কোচই দলের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। এক জুনিয়রকে বলেছেন অভিজ্ঞদের সঙ্গে না মিশতে! ভাবুন তো, একজন পেশাদার কোচ এটা করতে পারে? সাফ জয়ে সত্যি বললে তার কোনো ভূমিকা নেই। এখন তাকেই যদি আবার রাখা হয়, তাহলে আমাদেরও নতুন করে ভাবতে হবে।’
"