ক্রীড়া প্রতিবেদক
আগামীর পথ দেখানোর চ্যালেঞ্জ নিতে চান সালাহউদ্দিন
জাতীয় দলের কোচিং প্যানেলে স্থানীয় কোচদের যুক্ত করার দাবিটা অনেক দিনের। সর্বশেষ বিসিবির সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও আশ্বাস দিয়েছিলেন স্থানীয় কোচদের সুযোগ দেওয়ার। তবে তার সেই আশ্বাস আর বাস্তবে রূপ নেয়নি। উল্টো প্রধান কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহের চাওয়ায় সহকারী কোচ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় নিক পোথাসকে। দক্ষিণ আফ্রিকান কোচকে নিয়োগ দেওয়ার পর পাপন জানিয়েছিলেন, স্থানীয়দের তেমন আগ্রহ দেখেননি। যারা আবেদন করেছিলেন, তাদেরও যোগ্য মনে করেনি বিসিবি।
স্থানীয় সহকারী কোচ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিলেও সেবার আবেদন করেননি মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। দেশসেরা কোচ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, এত বছর কাজ করার পর এখন তার সহকারী কোচ হওয়ার ইচ্ছা নেই। অথচ সেই তিনিই কদিন আগে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সিনিয়র কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। চাকরি পেয়ে কাজেও নেমে পড়েছেন। পাপনের বোর্ডের সময় সহকারী কোচ হতে না চাওয়া সালাহউদ্দিন হুট করেই কেন একই পজিশনে চাকরি নিলেন- এমন প্রশ্নের উত্তর মিলেছে তারই কথায়। ফারুক আহমেদ বিসিবি সভাপতি হওয়ার পর থেকেই স্থানীয় কোচদের সুযোগ করে দিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। স্থানীয়দের জন্য প্ল্যাটফরম তৈরির বিষয়টি মনে ধরেছে সালাহউদ্দিনের। সেই সঙ্গে দেশের কোচদের আগামী পথ দেখানোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে ফিল সিমন্সের সহকারী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে স্থানীয় কোচরাও যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করতে পারেন মানুষ ও স্থানীয় কোচদের মাঝে সেই বিশ্বাস তৈরি করতে চান সালাহউদ্দিন।
বিসিবির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে এ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমার এখন নতুনভাবে আসার মূল কারণ হচ্ছে, যেহেতু অনেক দিন ধরে শুনছি- দেশি কোচদের একটা প্ল্যাটফরম হয়তো করে দেবে। আমি যদি তাদের সেই পথটা দেখাতে পারি, সেটা যতদিনের জন্যই হোক। আমার দেশি কোচরাও হয়তো এখানে ভালো করবে। পরবর্তী সময়ে যারা কোচ আসবেন, তাদের প্রতি বোর্ডের বিশ্বাস বাড়বে, মানুষের, জনগণের বিশ্বাস বাড়বে। সেই সঙ্গে কোচদের নিজেরও বিশ্বাস বাড়বে যে আমরাও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো করতে পারি। আমার মনে হয়, এ বিশ্বাসটা কাউকে না কাউকে তো নেওয়া উচিত ছিল। আমি যদি সেটা ঠিকভাবে করতে পারি, অন্তত পরবর্তী কোচদের জন্য একটা বড় পথ খোলা হয়ে যাবে। একজন কোচ হিসেবে আমার যে কোচের সমাজ সেই কোচদের এখন পথ দেখানোর বড় দায়িত্ব কিন্তু আমার ওপর পড়ে গেছে এবং সেটাকেই আমি একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। এখানে যদি আমি ভালো করতে পারি, তাহলে আমাদের পরবর্তী কোচদের অনেক দিকে পথ খুলে যাবে। যেটাতে আমি পরবর্তী জীবনে হয়তো অনেক বেশি তৃপ্ত থাকব।’ স্থানীয় কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনায় ছিলেন সালাহউদ্দিন। সর্বশেষ এক মাসে বেশ কয়েকবার বিসিবির কার্যালয়ে এসেছেন তিনি। নতুন করে বিসিবির চাকরি নেওয়ার পেছনে সভাপতি ফারুকের অনেক বেশি অবদান দেখেন দেশসেরা এ কোচ। তবে নিজের যে ইচ্ছা ছিল না, এমনও নয়। বিভিন্ন ক্লাব, ফ্র্যাঞ্চাইজি ও একাডেমিতে চাকরি থাকায় বিসিবিতে এতদিন আসতে পারছিলেন না, সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই আসলে কথা হচ্ছিল। আমার মনে হয়, আমার এ চাকরিটা নেওয়ার পেছনে ফারুক ভাইয়ের অবদান বেশি। কারণ উনি আমাকে অনেকবার ডেকেছেন, অনেকবার বুঝিয়েছেন কেন আমাদের স্থানীয় কোচদের আসলে দরকার বাংলাদেশ দলে। আমি মনে করি, এটাতে ফারুক ভাইয়ের সবচেয়ে বেশি অবদান। সেই সঙ্গে আমারও যে ইচ্ছে ছিল না, তা না। কিন্তু অনেক দিকের কারণেই হয়তো আমি আসতে পারছিলাম না। আমার মনে হয়েছে, এখনই হয়তো বেশ (উপযুক্ত) সময়।’ ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ফিল্ডিং কোচ ও সহকারী কোচের ভূমিকায় ছিলেন সালাহউদ্দিন। ২০১০-১১ সময়ে বিসিবি একাডেমির বিশেষজ্ঞ কোচ হিসেবেও কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তার। জাতীয় দলের হয়ে নিজের প্রথম ধাপে কাজ করতে গিয়ে সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মতো ক্রিকেটারদের পেয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে দেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন তারা।
সাকিব-তামিমদের রেখে যাওয়া জায়গা থেকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ থাকবে সালাহউদ্দিনের সামনে। সেই প্রজন্মকে ছাড়িয়ে যেতে ক্রিকেটারদের মানসিকতার উন্নতি চান তিনি। দেশসেরা এ কোচ বিশ্বাস করেন, সাকিব-তামিদের ছাড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব নয়। এদিকে ক্রিকেটাররা আগের তুলনায় শারীরিক ও আর্থিকভাবে অনেক বেশি স্বাবলম্বী হওয়ায় এগিয়ে যাওয়ার সুযোগও দেখছেন বাংলাদেশের সিনিয়র সহকারী কোচ। সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা যারা বলি- সাকিব, তামিম, মুশফিকরা একটা পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে গেছে, ওটা যদি না ভাঙতে পারি, তাহলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি বাংলাদেশের ক্রিকেট এগোয়নি। (আমাদের কাজ) পরবর্তী প্রজন্ম যেন তাদের চেয়ে ভালো খেলোয়াড় হতে পারে, বড় হতে পারে। সেটা অসম্ভবও নয়। এখন তারা মেন্টালি, ফিজিক্যালি ও আর্থিক দিক থেকে অনেক স্বাবলম্বী। এখন ভালো করার সুযোগ বেশি।’
"