ক্রীড়া প্রতিবেদক
দলের হতশ্রী পারফরম্যান্স দায় নিলেন শান্ত
শুরুর ধাক্কা সামলে আফগানিস্তান ছুড়ে দিয়েছিল চ্যালেঞ্জ। লক্ষ্যমাত্রা খুব কঠিন ছিল না। ২৩৬ রানের লক্ষ্য। রান তাড়ায় বাংলাদেশ কক্ষপথেই ছিল। কিন্তু আকস্মিক ব্যাটিং ধসে ম্যাচটা হেরে বসল টাইগাররা। বুধবার রাতে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আফগানদের কাছে ৯২ রানের বড় ব্যবধানে হেরে গেল নাজমুল হোসেন শান্তর দল।টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের দুই বল বাকি থাকতে ২৩৫ রানে অলআউট হয় আফগানরা। জবাবে দুই উইকেটে ১২০ তুলে ফেলেছিল বাংলাদেশ। সেই দলটাই কিনা ১৪৩ রানে অলআউট হয়ে গেল। আল্লাহ মোহাম্মাদ গাজানফার স্পিন-জাদুতে এলোমেলো হয়ে যায় টাইগারদের ব্যাটিং লাইন। ম্যাচ শেষে হারের দায় কাঁধে তুলে নিয়েছেন শান্ত।
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেছেন, ‘আমার উইকেটটাই ব্যবধান গড়ে দিয়েছে। আমি উইকেটে থিতু ছিলাম এবং আরও কিছুসময় আমার ব্যাট করা দরকার ছিল। আফগানিস্তানের বোলিংয়ে সবসময়ই বৈচিত্র্য আছে। তিনি (গাজানফার) দুর্দান্ত বোলিং করেছেন।’ ব্যাটিংয়ের মতো বোলিং ইনিংসেও মাঝের ওভারটাতে সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ। অথচ ৩৫ রানে আফগানদের চার উইকেট নিয়ে দারুণ শুরু হয়েছিল টাইগারদের। এরপর মোহাম্মদ নবি ও হাসমতউল্লাহ শাহিদি ষষ্ঠ উইকেটে ১০৪ রানের জুটি গড়েন। এই জুটির ওপর দাঁড়িয়ে দলীয় সংগ্রহ দুশো পার করে আফগানরা।
এই জুটির প্রশংসা করে শান্ত বলেছেন, ‘প্রথম ১৫-২০ ওভারে আমরা ভালো করছিলাম। কিন্তু মাঝের ওভারগুলোতে পরিকল্পনা কাজে লাগাতে পারিনি। নবি চৎমকার ব্যাটিং করেছেন। আমরা আরও আক্রমণের প্রয়োজন মনে করিনি। বোলাররা উইকেট থেকে সুবিধা পাচ্ছিলেন। শাহিদি এবং নবি দুজনই খুব ভালো ব্যাটিং করেছেন।’ আগামী শনিবার একই ভেন্যু শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজ বাঁচাতে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শান্ত। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি খুব ভালো ছিল। কিন্তু দিনটি আমাদের ছিল না। আশা করছি (দ্বিতীয় ওয়ানডেতে) আমরা ঘুরে দাঁড়াব।’ টাইগাররা ঘুরে দাঁড়াতে পারে কিনা সেটিই দেখার অপেক্ষা।মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত যখন ব্যাটিং করছিলেন তখন মনে হয়েছিল জয় পেতে খুব সমস্যা হবে না বাংলাদেশের। দুই উইকেট হারিয়ে ১২০ রান তুলেছিল দলটি। এরপর স্কোরবোর্ডে আর ২৩ রান যোগ হতেই অলআউট বাংলাদেশ। যেন উইকেট বিলিয়ে কে কার আগে সাজঘরে যাবেন, সেই প্রতিযোগিতায় নামেন টাইগার ব্যাটাররা। ফলাফল ৯২ রানে হার।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুতে তানজিদ হাসান তামিমকে হারালেও সৌম্য সরকারের সঙ্গে জুটি গড়ে ভালো সুচনায় আনেন অধিনায়ক। এরপর মিরাজের সঙ্গে আরও একটি জুটি। দারুণ সেট হয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। ঠিক তার মতো করেই আউট হয়ে যান মিরাজও। তারই খেসারৎ দেয় টাইগাররা।
দুই সেট ব্যাটারের বিদায়ের পর যেন মড়ক ধরে ব্যাটিং লাইনআপে। একের পর এক ব্যাটার আউট হন কিছুদিন আগেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে পা রাখা আল্লাহ মোহাম্মদ গাজাম্ফরের বলে। একাই ছয় উইকেট তুলে নেন এই স্পিনার। তার একের পর এক ক্যারম বলে বিধ্বস্ত হন টাইগাররা। গুগলির ভেলকি দেখান রশিদ খানও। তাতেই শেষ বাংলাদেশ।
এদিকে ম্যাচের মাঝবিরতিতে টিভি সাক্ষাৎকারে আফগানিস্তান কোচ জোনাথন ট্রটকে জিজ্ঞেস করা করা হলো, ‘২৩৫ রান নিয়ে কি জিততে পারবেন বলে মনে করছেন?’ রহস্যময় হাসি দিয়ে তার ছোট্ট উত্তর, আশা তো করছি।’ উত্তরটা পরে মাঠেই দিয়েছে ট্রটের দল। ওই রানকে যথেষ্টরও অনেক বেশি প্রমাণ করে ছাড়ে আফগানিস্তান। ম্যাচের পর অধিনায়ক হাশমাতউল্লাহ শাহিদি বললেন, পুঁজি আরও কিছু কম থাকলেও জয়ের ভরসা তাদের ছিল।ম্যাচের শুরুতে বাংলাদেশ যেভাবে বোলিং করছিল, তাতে অবশ্য ২৩৫ রানের পুঁজিকে অনেক দূরের পথই মনে হচ্ছিল আফগানিস্তানের জন্য। শারজাহতে বুধবার টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা আফগানরা ৩৫ রানের মধ্যে হারায় ৪ উইকেট।
ছোট্ট একটি জুটির পর হারাতে হয় আরেকটি উইকেট। দলের রান তখন ৫ উইকেটে ৭১। সেখান থেকে ১০৪ রানের জুটিতে দলকে উদ্ধার করেন শাহিদি ও মোহাম্মাদ নাবি। ৯২ বলে ৫২ রান করেন শাহিদি। নাবির ব্যাট থেকে আসে ৭৯ বলে ৮৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস।শেষ দিকে নানগেলিয়া খারোটের ২৭ রানের অপরাজিত ইনিংস আফগানদের পৌঁছে দেয় ২৩৫ রানে।সেই রান নিয়ে শেষ পর্যন্ত আফগানরা ম্যাচ জিতে নেয় ৯২ রানে। তরুণ স্পিনার আল্লাহ মোহাম্মাদ গাজানফার ২৬ রানে ৬ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ব্যাটিংকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন যেন।
ম্যাচ শেষে শাহিদি বললেন, মাঝবিরতিতেই জয়ের বিশ্বাস তাদের ছিল।সত্যি বলতে, আমি বিশ্বাস করছিলাম। ৫ উইকেট পড়ার পরও নাবি বেশ ইতিবাচক ছিলেন এবং খুব ভালো খেলেছেন। তার সঙ্গে উইকেটে যে আলোচনা হচ্ছিল, তাকে বলছিলাম যে, ২২০ রান করতে পারলেই যথেষ্ট হবে। সেখান থেকে ২৩৬ রানের লক্ষ্য দিতে পারা তো দারুণ ব্যাপার। এরপর বোলাররা নিজেদের কাজ করেছে। সব মিলিয়ে গোটা দলের জন্যই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। তবে বোলাররা, বিশেষ করে স্পিনাররা দারুণ করেছেন।
"