ক্রীড়া প্রতিবেদক
ব্যর্থতার কারণ জানেন না শান্ত!
নিদারুণ ব্যাটিং বিপর্যয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে ইনিংস ও ২৭৩ রানের বিশাল হার জুটেছে বাংলাদেশের। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও ন্যূনতম লড়াই করতে পারেননি ব্যাটাররা। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত পরিষ্কারভাবে স্বীকার করে নিয়েছেন সেই ব্যর্থতা। যে পিচে প্রোটিয়ারা ৬ উইকেটে ৫৭৫ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছিল, সেই একই পিচে দুই ইনিংসেই বাংলাদেশ ব্যাটিং ধসে পড়ে। আগের দিনের ৪ উইকেটে ৩৮ রান নিয়ে খেলতে নেমে বৃহস্পতিবার ১৬ উইকেট হারায় তারা। প্রথম ইনিংসে ১৫৯ রানে অলআউট হওয়ার পর ফলোঅনে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে টাইগাররা থামে ১৪৩ রানে। ফলে তিন দিনের মধ্যে হেরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে স্বাগতিকরা।
ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ব্যাটারদের ভীষণ হতাশাজনক পারফরম্যান্স নিয়ে শান্ত বলেন, ‘এটা তো অবশ্যই খুবই হতাশাজনক। এগুলো থেকে বোঝা যায় আমাদের কত উন্নতির জায়গা আছে। পাকিস্তানে ভালো ক্রিকেট খেলেই জিতেছি। মাঠে, মাঠের বাইরে অনেকগুলো জায়গা আছে, যেখানে আমাদের উন্নতি করতে হবে।’ প্রথম ইনিংসে এক পর্যায়ে ৪৮ রানে ৮ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। স্বীকৃত ব্যাটারদের মধ্যে শুধু মুমিনুল হক লড়াই করেন। তার ৮২ রানের ইনিংসের পাশাপাশি ৩০ রান করেন দশে নামা বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ উইকেট পড়ে যায় ৭৮ রানে। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৮ রানে অপরাজিত থাকেন সেই দশে নামা পেসার হাসান মাহমুদ। টপঅর্ডার থেকে নিয়মিত রান না পাওয়া নিয়ে বাংলাদেশের অধিনায়কের মন্তব্য, ‘লম্বা সময় ধরেই এরকম হচ্ছে। টেস্টে টপঅর্ডার থেকে যদি জুটি না হয়, তাহলে পরের ব্যাটারদের জন্য কাজটা খুবই কঠিন। ওপরে যারা ব্যাটিং করে, তারা কী চিন্তা করে বা কী ধরনের প্রস্তুতি নেয়, আমি জানি না। তবে এভাবে চলতে থাকলে এরকম ফলই হবে।’
এ টেস্ট শুরুর আগে শান্তর তিন সংস্করণের অধিনায়কত্ব ছাড়ার ইচ্ছার কথা জানা যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সূত্র থেকে। সেটার সত্যতা মিলেছে এরই মধ্যে। শান্তর সঙ্গে কথা বলতে গত বুধবার রাতে চট্টগ্রামে গেছেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। টিম হোটেলে দুজনের মধ্যে আলাপ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এ প্রসঙ্গে এখনই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি শান্ত। তিনি থাকতে বলেছেন আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষায়, ‘আমার অধিনায়কত্বের ব্যাপারে বোর্ড প্রেসিডেন্ট সম্ভবত আপনাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ ব্যাপারে এখানে আমি আর কোনো মন্তব্য না করি। হয়তো ক্রিকেট বোর্ড থেকেই একটা (বার্তা পাবেন)। সেনুরান মুথুসামির বল ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ গেল লেগ গালির হাতে। একবার পেছনে ঘুরে দেখলেন নাজমুল হাসান শান্ত। এরপর মাথা নিচু করে হাঁটা দিলেন ড্রেসিংরুমের পথে। চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসের এ চিত্র চলতি বছরের প্রায় নিয়মিত দৃশ্য। শান্ত ধুঁকছেন ব্যাট হাতে। তার এমন ফর্ম যে দলকেও বিপাকে ফেলছে, সেটিও মেনে নিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসেও হতাশ করেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। বাকিদের ব্যর্থতার ভিড়ে কিছুটা ব্যতিক্রম ছিলেন শান্ত। একপ্রান্তে ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু বড় করতে পারেননি নিজের ইনিংস। ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৬ রানে থামেন তিনি।পরে বাংলাদেশও বেশি দূর যেতে পারেনি। ইনিংস ব্যবধানে হেরে অনভিজ্ঞ দক্ষিণ আফ্রিকা দলের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয় তারা। শুধু এ চট্টগ্রাম টেস্টই নয়, বছরজুড়েই শান্তর ব্যাট খুবই শান্ত। গত বছর চার ইনিংসে তিন সেঞ্চুরি করা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ২০২৪ সালে ১৫ ইনিংসেও পাননি তিন অঙ্কের দেখা। ঘরের মাঠে সর্বোচ্চ এ ৩৬ রান। ভারত সফরে চেন্নাই টেস্টে তিনি ৮২ রানের ইনিংস খেললেও পরাজয়ের ব্যবধান কমানো ছাড়া কোনো কাজে লাগেনি সেটি। পাকিস্তান সফরে দলগত পারফরম্যান্সে দারুণ সাফল্য এলেও নিষ্প্রভ ছিলেন শান্ত। সব মিলিয়ে ২০২৪ সালে ৮ ম্যাচের ১৫ ইনিংসে এক ফিফটিতে ২১.১৩ গড়ে মাত্র ৩১৭ রান করেছেন শান্ত। এ আট ম্যাচের ছয়টিতেই হেরেছে দল। চট্টগ্রাম টেস্টে হারের পর শান্ত তাই মেনে নিলেন, ব্যাটিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে তিনি ব্যর্থ হওয়ায় দলও ভুগছে। (নিজের পারফরম্যান্সে দলের ওপর প্রভাব পড়ে থাকতে পারে কি না) হ্যাঁ, অবশ্যই। যেহেতু ওপরের দিকে ব্যাট করি, আমার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রান করা। যেটা হচ্ছে না।’
‘সবচেয়ে খারাপ যে জিনিসটা, সর্বশেষ বেশ কয়েকটা ইনিংসে ২০ থেকে ৪০ রানের মধ্যে আউট হচ্ছি। অর্থাৎ সেট হয়ে আউট হচ্ছি, যা দলের জন্য ক্ষতির কারণ। এ জায়গায় আরো মনোযোগ দিয়ে ব্যাটিং করা উচিত। ইনিংসগুলো কীভাবে বড় করা যায়, তা গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয়, আমার ব্যাটিংটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’ গত বছরের ডিসেম্বরে নিউ জিল্যান্ড সিরিজ থেকে টানা টেস্ট দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শান্ত। এ সময়ে ১০ ম্যাচের ১৯ ইনিংসে তার সেঞ্চুরি ও ফিফটি শুধু একটি করে। সাতবার আউট হন দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগেই। মাত্র ২৫.৪২ গড়ে মোট সংগ্রহ ৪৮৩ রান। অধিনায়কত্ব পাওয়ার আগে ২৩ ম্যাচের ৪৪ ইনিংসে তিনটি ফিফটির সঙ্গে চারটি সেঞ্চুরি করেন শান্ত। ওই সময় ২৯.৮৩ গড়ে করেন ১ হাজার ২৮৩ রান। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, অধিনায়কত্বের চাপেই ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হচ্ছেন কি না। তিনি অবশ্য এটি মানতে চাইলেন না। আমার কাছে একবারও মনে হয়নি (অধিনায়কত্ব কোনো চাপ)। আজকেও যখন আমি ব্যাটিং করেছি, আমার মনে হয়নি যে অধিনায়ক হওয়ায় সবকিছু আমার একা করতে হবে। আমি শুধু বল দেখি আর ব্যাটিং করি। ব্যাটসম্যান হিসেবে ব্যাটিংটা উপভোগ করি। ব্যাটিং করতে তো সবারই ভালো লাগে। চিন্তা থাকে কীভাবে বড় রান করতে পারব। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে অধিনায়কত্বের কোনো চাপ এখন পর্যন্ত মনে হয়নি।’
"