ক্রীড়া প্রতিবেদক
বিসিবির অভিযোগ
খোলা চিঠিতে হাথুরুর জবাব
সম্প্রতি প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে বরখাস্ত করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। লঙ্কান কোচকে চাকরিচ্যুত করার আগে তাকে কারণ দর্শানো নোটিশও দিয়েছে বোর্ড। নোটিশে হাথুরুর বিরুদ্ধে গুরুতর কয়েকটি অভিযোগ তোলা হয়েছে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত শুক্রবার খোলা চিঠি দিয়েছেন তিনি। পাঠকের জন্য চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
আমি এই চিঠি লিখতে বসেছি গত বছর (আইসিসি ওয়ানডে) বিশ্বকাপের সময় একজন ক্রিকেটারের ওপর কথিত হামলা, অনুমতি ছাড়া বাড়তি ছুটি নেওয়ার দাবি, আমার সততা এবং পেশাদারত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা প্রসঙ্গে। আমি এসব অভিযোগের ব্যাখ্যা এবং সমাধানের জন্য চিঠিটি লিখেছি। অভিযোগের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার আগে আমার কাছে প্রতিক্রিয়া জানানো জরুরি মনে হয়েছে। বিষয়গুলো পরিষ্কার করা দরকার। আমি সেটিই চেষ্টা করছি।
প্রথমত, কথিত ঘটনাটি বিশ্বকাপ চলাকালীন ডাগআউট বা ড্রেসিংরুমে ঘটেছিল। বিশ্বকাপের ম্যাচ চলাকালীন সবসময় ৪০-৫০টির বেশি ক্যামেরা সজাগ থাকে। আমি এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে কোনো সাক্ষ্যি বা অভিযোগকারীকে পাইনি। ঘটনাটি গুরুতর হলে ওই খেলোয়াড় কেন তখন টিম ম্যানেজার বা কর্তৃপক্ষকে জানায়নি। অভিযোগ যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে তখন কেন আমাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়নি? একজন লোকজন ইউটিউবে কথিত ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। এখন কেন বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠল?
আমি আমার ছুটির বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে চাই। আমার যখন ছুটি নেওয়ার প্রয়োজন পড়েছে তখন (বিসিবি) প্রধান নির্বাহী এবং ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির চেয়ারম্যান দুইজনের কাছ থেকেই আমি অনুমতি নিয়েছি এবং ছুটি পেয়েছি। কিন্তু বিসিবি কখনও আমাকে জানায়নি তারা আমার ছুটি কাটানোর বিষয় নিয়ে অসন্তুষ্ট। আমি কখনো বিসিবির অনুমোদন ছাড়া ছুটি কাটাইনি। প্রতিবারই বিসিবি আমার ছুটি মঞ্জুর করেছে।
বোর্ডের নতুন সদস্যরা (পরিচালকরা) এসে আমার বাড়তি ছুটি কাটানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু আমারমনে হয় তারা সাধারণ ছুটির হিসেব করেননি। যেমন ঈদের দিন বা শুক্রবার। শুক্রবার ছুটির দিনে আমি যখন কাজে করেছি তখন বিসিবি আমাকে সেটির কৃতিত্ব দেয়নি। বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী সপ্তাহে আমি দেড় দিন (শুক্রবার পুরো দিন এবং বৃহস্পতিবার অর্ধেক দিন) ছুটি প্রাপ্য। এটাও উল্লেখ করা প্রয়োজন, বিপিএল চলার সময় বিদেশি কোচদের ছুটি নেওয়ার বিষয়টা খুব সাধারণ এবং এটি নিয়মিত হয়ে আসছে। এ ধরনের ছুটি সাধারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।
বিসিবির তোলা অভিযোগগুলো আমার কাছে পূর্বপরিকল্পিত মনে হয়েছে। নতুন প্রেসিডেন্ট (ফারুক আহমেদ) প্রথম দিনেই আমাকে ছাঁটাই করার ইচ্ছে প্রকাশ করে গণমাধ্যমকে বিবৃতি দিয়েছেন। কিন্তু এতে বিসিবি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অথচ নতুন কোচ (ফিল সিমন্স) নিয়োগের মাত্র চার ঘণ্টা আগে আমাকে কারণ দর্শানো নোটিশ পাঠানো হলো। আমি খুব অবাক হয়েছি। নিজেকে সঠিক প্রমাণ করতে আমাকে ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছে। এসব কাজ পর্যায়ক্রমিক হয়েছে। এতে প্রশ্ন উঠছে এবং পেছনে যে, কোনো উদ্দেশ্য আছে সেটির ইঙ্গিত বোঝা যাচ্ছে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে আমাকে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসব অভিযোগ, নতুন কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়া, আমাকে ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়ার যথাযথ পদক্ষেপের ঘাটতি, বিসিবির ভেতরে কর্তাদের আচরণ আমার কাছে গভীর উদ্বেগের। আমি নিজের সম্মান ধরে রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে যে কোনো তদন্তে আমি সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি। আমার বিশ্বাস শেষ অবধি সত্যের জয় হবে। আমি খেলাটিতে ইতিবাচক অবদান রাখতে চাই এবং খেলাটিকে ভালোবসি।
"