ক্রীড়া ডেস্ক
৪৬তম শিরোপায় থামতে চান না মেসি
ম্যাচটি ছিল অলিখিত ফাইনাল। প্রতিপক্ষ ছিল টুর্নামেন্টের অন্যতম শক্তিশালী কলম্বাস ক্রু। সাপোর্টার্স শিল্ড জয়ের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীও তারা। ম্যাচটিও তাদের মাঠে। সেই দলটির বিপক্ষে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিলেন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। জোড়া গোলে ইন্টার মায়ামিকে দিলেন আরো একটি ট্রফি জয়ের স্বাদ। একই সঙ্গে নিজেও পেলেন ক্যারিয়ারের ৪৬তম শিরোপার দেখা।
গত বৃহস্পতিবার মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) কলম্বাস ক্রুকে ৩-২ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে এবারের সাপোর্টার্স শিল্ড জিতে নিয়েছে ইন্টার মায়ামি। মেসির জোড়া গোলে প্রথমার্ধেই ২ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে যায় তারা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই একটি গোল শোধ করে ম্যাচে ফিরে আসার ইঙ্গিত দেয় কলম্বাস। তবে ফের ব্যবধান বাড়ান লুইস সুয়ারেজ। এরপর একটি গোল করে ব্যবধান কমালেও ম্যাচে ফেরা হয়নি স্বাগতিকদের। তবে পুরো ম্যাচটি ছিল দারুণ উত্তেজনাপূর্ণ। শুরু থেকেই আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠে লড়াই। প্রথমার্ধে মেসির জোড়া গোলে মনে হয়েছিল সহজেই জিতে যাবে মায়ামি। কিন্তু হাল ছাড়েনি তিনবারের সাপোর্টার্স শিল্ডজয়ী কলম্বাস। এমনকি ম্যাচে ফিরে আসার দারুণ সুযোগও ছিল তাদের সামনে। কিন্তু পেনাল্টি থেকে গোল আদায় করে নিতে পারেননি। দারুণ সেভে মায়ামিকে রক্ষা করলেন গোলকিপার ড্রেক ক্যালেন্ডার।
তবে ম্যাচের অষ্টম মিনিটেই মায়ামির জালে বল পাঠিয়েছিল কলম্বাস ক্রু। তবে অফসাইডের কারণে গোল হয়নি। ২৪ মিনিটে মায়ামিও বল পাঠায় প্রতিপক্ষের জালে। কিন্তু তাদের গোল মিলেনি ফাউলের কারণে। তবে ৪৫ মিনিটে দলকে এগিয়ে দেন মেসি। নিজদের অর্ধ থেকে জর্দি আলবার বাড়ানো বল বুক দিয়ে নামিয়ে প্রতিপক্ষ ডি-বক্সে ঢুকে আগুয়ান গোলরক্ষক পেট্রিক স্কাল্টের পাশ দিয়ে বল জালে পাঠান আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। এর ৫ মিনিট যেতেই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মেসি। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে ফ্রিকিক থেকে সরাসরি বল জালে পাঠান তিনি। মানব দেয়ালে পাশ দিয়ে নিখুঁত বাঁকানো শটে একেবারে বারপোস্ট ঘেঁষে প্রবেশ করলে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না গোলরক্ষক পেট্রিকের।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই একটি গোল শোধ করে দেয় কলম্বাস। মোহামেদ ফার্সির পাস থেকে লক্ষ্যভেদ করেন দিয়াগো রসি। তবে এর মিনিট দুয়েক পরই গোলরক্ষকের ভুলে ফের ব্যবধান বাড়ান সুয়ারেজ। উঁচু হয়ে আসা বল ধরতে গিয়ে হাত থেকে ফসকে যায় পেট্রিকের। সামনেই থাকা সুয়ারেজ হেড দিয়ে জালে পাঠাতে কোনো ভুল করেননি। ৬১ মিনিটে সফল স্পটকিক থেকে ফের ব্যবধান কমান হুয়ান হার্নান্দেজ। তবে ২ মিনিট পর রুডি কামাচো লাল কার্ড দেখলে ১০ জনের দলে পরিণত হয় স্বাগতিকরা। তারপরও ম্যাচে ফেরার সুযোগ ছিল তাদের। ৮৪ মিনিটে আরো একটি পেনাল্টি পায় তারা। কিন্তু এবার আর লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি হার্নান্দেজ। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে তার শট রুখে দেন মায়ামি গোলরক্ষক ক্যালেন্ডার। শেষ পর্যন্ত স্বস্তির জয় পায় মায়ামি। ৩২ ম্যাচে ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে সাপোর্টার্স শিল্ড নিশ্চিত করে মায়ামি। এমএলএসে এটাই তাদের প্রথম ট্রফি। গত বছর মেসি যোগ দেওয়ার পর লিগস কাপ জিতেছিল তারা।
অলিখিত ফাইনালে কলম্বাসের বিপক্ষে জোড়া গোল করে জয়ের মূলনায়ক মেসি। তবে সাপোর্টার্স শিল্ড জয়ের কৃতিত্ব দলের সবাইকে দিয়েছেন অধিনায়ক। ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘আমি এ দল নিয়ে খুব খুশি। আমরা এটা বলেছিলাম, আমরা জানতাম যে এটা লড়াই করার মতো একটি দল। আমরা শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রণ নিয়েছি। এটা করার জন্য আমাদের দলে খেলোয়াড় রয়েছে। আর জয়েই থেমে থাকতে চান না মেসি। পরবর্তী শিরোপায় তার নজর বলে জানান, ‘প্রথম লক্ষ্য অর্জন করতে পেরে খুশি এবং এখন সামনে কী আসছে, তা নিয়ে ভাবছি। আজ খুব কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ ছিল, যারা লীগ কাপ চ্যাম্পিয়ন এবং অন্য ফাইনালও খেলেছে। তারা দুর্দান্ত একটি দল, খুব ভালো কাজ করেছে। আমরা শেষ পর্যন্ত ভুগেছি।’
উল্লেখ্য, মেজর লিগ সকারে মূলত ট্রফি দুটি। একটি সাপোর্টার্স শিল্ড, অপরটি এমএলএস কাপ। এমএলএস কাপ মূলত একটি নকআউট রাউন্ড। যেটা ১৮টি দলের প্লে-অফ রাউন্ড। ইস্টার্ন ও ওয়েস্টার্ন কনফারেন্সের নিজ নিজ অংশের অষ্টম ও নবম দলগুলো ওয়াইল্ড কার্ড ম্যাচ জিতে যোগ দিবে শীর্ষ সাত দলের সঙ্গে।এরপর দুই অংশে আটটি দল প্লে-অফের প্রথম রাউন্ডে বেস্ট অব থ্রি নকআউট ম্যাচে অংশ নেবে। পরে নিজ নিজ কনফারেন্সের সেমিফাইনাল ও ফাইনাল শেষে দুই অংশ থেকে দুই দল উঠবে এমএলএস কাপের ফাইনালে। সেই ফাইনাল শেষেই নির্ধারিত হবে মেজর লিগ সকারের মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন।
"