ক্রীড়া প্রতিবেদক
দলের ব্যাটিংয়ে সন্তুষ্ট নন শান্ত
ভারতের উইকেট যেমনই হোক, ব্যাটিংয়ে বড় রান তোলা যায়। কিন্তু সেখানে দুই টেস্টের সিরিজে ৪ ইনিংস মিলিয়ে দলীয় সংগ্রহ একবারও আড়াইশ’ ছুঁতে পারেনি বাংলাদেশ। তাহলে ভারত সফরে ব্যাটিং কি ভালো হলো? উত্তরটা কানপুর টেস্টে হারের পরই দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। যদিও সেই উত্তর সবারই জানা।
চেন্নাইয়ে ২৮০ রানের হার ভুলে শুধু কানপুরের গ্রিন পার্কে তাকানো যাক। মোট ১৭৩.২ ওভারের খেলা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাট করেছে ১২১.২ ওভার। ক্রিজে সময় কাটানো বিচারে ভারতের চেয়ে ভালো হলেও ম্যাচের দাবি মিটিয়ে খেলতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। যদি আমাদের ব্যাটসম্যানদের দেখেন- ৩০-৪০ বল খেলেই আউট হয়ে গেছে। ব্যাটসম্যান নামার পর বড় স্কোরের জন্য খেলাটা টেস্ট ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ।
যেমন ধরুন, ২ উইকেটে ২৬ রানে চতুর্থ দিন শেষ করা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে পিছিয়ে ছিল ২৬ রানে। আজ টেস্টের শেষ দিনে ম্যাচ বাঁচাতে তাই যতটা বেশি সময় সম্ভব ক্রিজে থাকতে হতো ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু চতুর্থ দিনে বাংলাদেশ ব্যাট করতে পেরেছে মাত্র ৩৬ ওভার। এ সময়ে বাকি ৮ উইকেট হারিয়ে ১২০ রান। দ্রুত উইকেট হারানোয় প্রথম সেশনের শেষ বলেই আউট হয় বাংলাদেশ। ভারত জয়ের জন্য হাতে পর্যাপ্ত সময় রেখে লক্ষ্য পেয়েছে মাত্র ৯৫।
ভারত ৭ উইকেটে জেতার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সম্প্রচারকারী টেলিভিশনের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল। দলের ব্যাটিংয়ে সন্তুষ্ট নন তিনি, ‘দুই টেস্টেই আমরা ভালো ব্যাট করতে পারিনি। এ কন্ডিশনে আমাদের ভালো ব্যাট করতে হবে। যদি আমাদের ব্যাটসম্যানদের দেখেন ৩০-৪০ বল খেলেই আউট হয়ে গেছে। ব্যাটসম্যান নামার পর বড় স্কোরের জন্য খেলাটা টেস্ট ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ।’
কানপুরে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে চল্লিশের বেশি বল খেলেছেন তিন ব্যাটসম্যান। দ্বিতীয় ইনিংসে সংখ্যাটা আরো কম। দুজন ব্যাটসম্যান চল্লিশের বেশি বল খেলতে পেরেছেন। অধিনায়ক নাজমুল নিজেও ভালো করতে পারেননি। ৩১ ও ১৯ রান করে আউট হন। নাজমুল এরপর চেন্নাই টেস্টে রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজার সেই কাব্যিক জুটির উদাহরণ টানেন। প্রথম ইনিংসে ভারত ১৪৪ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর ১৯৯ রানের জুটি গড়ে ভারতকে নিরাপদে পৌঁছে দিয়েছিলেন অশ্বিন-জাদেজা। নাজমুল সেই উদাহরণ টেনে বোলারদের প্রতি বলেন, ‘অশ্বিন-জাদেজা তখন যেভাবে ব্যাট করেছে- তারা সত্যিই দারুণ ব্যাট করেছে। বোলিং ইউনিট হিসেবে আমাদের এসব মুহূর্তে দেখতে হবে, কীভাবে উইকেট নিতে পারি। ওই জুটির কাছেই আমরা ম্যাচ হেরেছি।’ কানপুরে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে মুমিনুলের ১০৭ রানের ইনিংস ও মিরাজের বোলিংয়ের প্রশংসা করে নাজমুল বলেন, ‘মুমিনুল এ ইনিংসে যেভাবে ব্যাট করেছে সামনে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে। মিরাজ দুই ইনিংসেই ভালো বোলিং করেছে।’ কানপুর টেস্টে প্রথম দিনে দেড় সেশনের বেশি সময় ও পরের দুদিন বৃষ্টির কারণে খেলা হয়নি। টেস্ট ক্রিকেটে দুদিনে ৯০ ওভার করে মোট ১৮০ ওভার ধরলে কানপুরে খেলা দুদিনও হয়নি। এর মধ্যে বাংলাদেশের এমন হার ভুলে যাওয়ার মতোই।
এদিকে ম্যাচ জিতে রোহিত জানান এরপরই জেতার ছক করে ফেলেন তারা। চতুর্থ দিনের দ্বিতীয় সেশনে নেমে টি-টোয়েন্টির আমেজ নিয়ে আসে ভারত। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়ে ৩৪.৪ ওভারেই তুলে নেয় ২৮৫ রান। বিকেলে বাংলাদেশকে অন্তত ১১ ওভার ব্যাট করিয়ে ২ উইকেট তুলেও শেষ দিনে জেতার রাস্তা করে রাখে তারা। ভারত অধিনায়ক বলেন, বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস গুটিয়ে দিতে পর্যাপ্ত সময়ের জন্য প্রথম ইনিংসে অলআউট অ্যাটাকে গিয়েছেন তারা, ‘আমরা ভাবছিলাম খেলাটা কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়। আড়াই দিনের বেশি বৃষ্টির কারণে নষ্ট হয়ে গেলে চতুর্থ দিনে চেয়েছি ওদের দ্রুত গুটিয়ে দিতে। লাঞ্চের পর যখন ২৩০ রানে ওদের আটকে দিই আমরা চেয়েছি দ্বিতীয় ইনিংসে ওদের অলআউট করার জন্য পর্যাপ্ত ওভার রাখা।’
এরপর অশ্বিন জানান, ৫২ রানের লিড নিয়ে তাদের ধারণা ছিল বাংলাদেশকে ২৩০ রানের ভেতর আটকে জেতার মতন সময় বের করতে পারবেন, ‘গতকাল যখন ওদের গুটিয়ে দিলাম। রোহিত এসে বলল আমাদের ৮০ ওভার দরকার ওদের অলআউট করার জন্য। (যে চিন্তার আগ্রাসী ব্যাটিং)। আমাদের চিন্তা ছিল ওদের ২৩০ রানের ভেতর আটকে রাখলেও চলবে। রোহিত নেমেই প্রথম বলে ছক্কা মারল, সে টোন সেট করে দিল।’ কাজটা পরে হয়েছে আরো সহজ। দ্বিতীয় ইনিংসে শুধু ৪৭ ওভার টিকতে পেরেছেন শান্তরা। করতে পেরেছেন ১৪৬ রান। ভারতের জেতার জন্য দিতে পেরেছেন মাত্র ৯৫ রান। এজন্য তাদের বোলারদের কৃতিত্ব দিয়েছেন অশ্বিন, ‘আমাদের যেরকম বোলিং আক্রমণ আছে তার অংশ থাকতে পারা গর্বিত। জেসি (জাসপ্রিট বুমরাহ) যেভাবে বল করল, সিরাজ যেভাবে অংশ নিল, আকাশ যেভাবে অবদান রাখল। জাড্ডুকে (জাদেজা) নিয়ে বলার কিছু নেই।’
"