ক্রীড়া প্রতিবেদক
কানপুরে বৃষ্টিবিঘ্নিত প্রথম দিন
মুশফিক-মুমিনুল লড়াইয়ে ফেরার আভাস
কানপুরে সচরাচর টস জিতে ব্যাটিং নিতে দেখা যায় না দলগুলোকে। তবে বৃষ্টিতে দেরিতে খেলা শুরু হওয়ার পর মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়াকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে শুরুতেই চেপে ধরতে সেই সিদ্ধান্ত নিলেন রোহিত শর্মা। রোহিতের সিদ্ধান্ত সঠিক কি না তা সময়ই বলে দিবে। তবে প্রথম দিনে বৃষ্টির কারণে খেলা আগেই থেমে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের সেই পরিকল্পনা ভালোই সামাল দিয়েছে বাংলাদেশ।
বুমরাহ-সিরাজ জুটিকে রয়েসয়ে সামাল দিয়ে শুরু করেছিলেন দুই ওপেনার। সাদম্যান বল খুঁজে বাউন্ডারি বের করতে পারলেও অন্য প্রান্তে জাকির রানের খাতাই খুলতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। অষ্টম ওভারের মাথায় স্পিন আনার পর অন্য প্রান্তে পেসার আকাশ দ্বীপকে আক্রমণে আনতেই অবশ্য ফিরতে হয় জাকিরকে। ধারাভাষ্যকক্ষে রবি শাস্ত্রী বলছিলেন, কেন কানপুরের লো-বাউন্সে স্টাম্প লক্ষ্য করে বল করে যাওয়া দ্বীপ ভালো করবেন। বলতে বলতেই বেশ বাইরে এসে খেলা জাকিরের ব্যাটের কানা খুঁজে নেন দ্বীপ। রিপ্লেতে জয়সওয়ালের সামনে ঝুঁকে পড়া ক্যাচটার পরিষ্কার কোনো চিত্র দেখা না গেলেও মাঠের সিদ্ধান্তেই অটল থাকেন থার্ড আম্পায়ার। ২৪ বল খেলেও রানের খাতায় শূন্য নিয়ে ফেরেন জাকির।
শুরুটা ভালো করেও এরপর আরো একবার সাদমান থামেন মাঝপথেই। ২৪ রানের মাথায় সেই দ্বীপের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ফেরেন তিনি। বাকি সময়টুকু দারুণভাবেই সামলে নেন শান্ত-মুমিনুল। আরো একবার পেসারদের বিপক্ষে শান্ত ইতিবাচক মানসিকতাই দেখিয়েছিলেন। লাঞ্চে ৭২ রানে থেকে বাংলাদেশ শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়েই ফেলেছিল। তবে লাঞ্চের ঠিক আগে হালকা বৃষ্টির পর খেলা শুরু হতেই আশ্বিনের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ৩১ রানে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। পরে আলোকস্বল্পতায় খেলা বন্ধ হলে দুপুরের দিকে ঝুম বৃষ্টি নামায় আগেভাগেই স্টাম্পস ঘোষণা করে দেন আম্পায়াররা।
এদিকে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হতে বিলম্বিত হয়েছে। তবে তাতে কানপুরে উত্তেজনার কোনো ঘাটতি নেই। কারণ স্কুলের শিক্ষার্থীদের একটি বিশাল দল এ টেস্ট ম্যাচ দেখতে হাজির হয়েছেন। কানপুরের গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আলাদা নিজস্ব ছাত্র গ্যালারি রয়েছে। সেখানে সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের ঢল নামে। এমনিতেই কানপুরের স্থানীয়রা ক্রিকেটবান্ধব। তার উপর শুক্রবার অর্ধদিবস স্কুল ছুটি থাকায় ভিড় আরো বেড়েছে। যে কোনো রাস্তা থেকে স্টেডিয়ামে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসিত জনতার ভিড় বাড়তে দেখা গিয়েছে। বিশেষকরে ভারতের প্রতি তাদের সমর্থন দেখানোর জন্য বিশাল লাইন দেখা যায়। ২০২১ সালে সর্বশেষ এ শহরে টেস্টের আয়োজন করেছিল। তাদের প্রিয় দলকে তাদের নিজস্ব শহরে খেলতে দেখতে তিন বছর পেরিয়ে গেছে প্রত্যাশিত ভক্তদের। এটা অনেক আনন্দের ব্যাপার। দল আবার এখানে এসেছে। এখানে একটি ম্যাচ হওয়ায় সব মানুষ খুশি। আমি নিয়মিত ম্যাচগুলোয় উপস্থিত থাকি এবং ২০২৩ সালের বিশ্বকাপের ম্যাচেও ছিলাম। আমি প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দেখতে গোয়ালিয়রেও যাচ্ছি- এমনটাই বলেছেন ধরম কুমার মোদি নামে এক ভারতীয় ভক্ত। এদিকে ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। সাকিবের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করছেন ধরম, ‘আমি কি বলতে পারি, আপনার প্রচেষ্টা যাই হোক না কেন ভবিষ্যতের জন্য শুভ হোক স্যার।’
আনন্দ নামে আরেক ভক্ত বলেছেন যে তারা এর মধ্যে সিরিজের বাকি অংশের জন্য ফ্লাইট এবং হোটেল বুক করেছেন। যদিও বাংলাদেশ কঠিন প্রতিপক্ষ হবে বলেই ধারণা করেছিলেন তারা। এখন তারা ভিন্ন কিছু অনুভব করছেন, ‘এটা সত্যিই দারুণ কিছু যে অনেকদিন পর কানপুর আবার টেস্ট ম্যাচ পেল। আমরা ভারতকে সমর্থন করতে এসেছি।’ আমাদের হোটেল এবং ফ্লাইট বাকি সিরিজের জন্যও বুক করা আছে। বাংলাদেশ যেভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে খেলেছে, তাতে বোঝা যাচ্ছিল তারা চ্যালেঞ্জ জানাবে। কিন্তু প্রথম ম্যাচের পর মনে হচ্ছে এটা দুই-তিন দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে, যোগ করেন আনন্দ।
মাঠে ছাত্রদের বিশাল একটি দল উপস্থিত হয়েছে। অনেকেই স্কুল ইউনিফর্ম পরে মাঠে এসেছেন। খেলা দেখতে আসায় ক্লাস ব্যাংক হবে কিনা জানতে চাইলে এক ছাত্র বলেন, স্কুল বন্ধ। প্রথম দিনে ভারতের ব্যাটিং দেখতে এসেছেন মায়াঙ্ক নামের এক ছাত্র, অবশ্যই বুমরাহকে অ্যাকশনে দেখতে চাই কিন্তু আমি চাই ভারত আগে ব্যাট করুক। সারিতে আসা শিক্ষার্থীদের দলের সঙ্গে স্কুলের শিক্ষকদেরও লাইনে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে। গুরু হার রাই অ্যাকাডেমি থেকে রাজপাল নামে এক স্কুল শিক্ষক বলেছেন যে হাজার হাজার লোক খেলায় অংশ নিলেও স্কুল আসলে খোলা রয়েছে।
"