ক্রীড়া ডেস্ক
তবু তপ্ত নন ফ্লিক
টানা সাত জয়ে শীর্ষে বার্সা
অনেক সুযোগ হাতছাড়া করা বার্সেলোনার জয়রথ থামানোর সুযোগ পেয়েছিল গেতাফে। কিন্তু বোর্হা মায়োরালের নিদারুণ ব্যর্থতায় সেটি পারেনি সফরকারীরা। রবের্ত লেভানডভস্কির গোলে স্পেনের শীর্ষ লিগে শতভাগ জয়ের ধারা ধরে রাখল হান্সি ফ্লিকের দল। লা লিগার ম্যাচে বুধবার রাতে ১-০ গোলে জিতেছে বার্সেলোনা। ২০১৭ সালের পর এই প্রথম লিগের প্রথম সাত ম্যাচেই জিতল তারা। ৭ ম্যাচে টানা সপ্তম জয়ে ২১ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে বার্সেলোনা। ১৭ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে আছে শিরোপাধারী রিয়াল। আসরে তৃতীয় হারের স্বাদ পাওয়া গেতাফের পয়েন্ট ৪।
পয়েন্ট টেবিলের ১৯ নম্বর দল গেতাফে এখন পর্যন্ত আসরে গোল করতে পেরেছে কেবল তিনটি। এর দুটি কর্নার ও অন্যটি পেনাল্টি থেকে। ওপেন প্লে থেকে প্রথম গোলে বার্সেলোনার মাঠ থেকে মহামূল্য একটি পয়েন্ট পেতে পারত তারা। কিন্তু অন্তিম সময়ে হুয়ান ইগলেসিয়াসের ক্রসে পেনাল্টি স্পটের কাছে বল পেয়েও ঠিকমতো শট নিতে পারেননি মায়োরাল। রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক ফরোয়ার্ডের ব্যর্থতায় অনেক সুযোগ হাতছাড়ার মাশুল থেকে বেঁচে গেল ফ্লিকের দল।
আগের পাঁচ ম্যাচের তিনটিতেই বার্সেলোনার সঙ্গে ড্র করা গেতাফের শুরুটা ছিল আশা জাগানিয়া। প্রথম ১৫ মিনিটে তিনটি সুযোগ তৈরি করে তারা। এর সেরাটা পান কার্লোস পেরেস। ৮ মিনিটে তার হেড ডাইভ দিয়ে গোললাইনের সামনে ঠেকিয়ে দেন ইনাকি পেনা। এরপর আর তেমন কোনো পরীক্ষায় পড়তে হয়নি তাকে।
নিজেদের গুছিয়ে নিতে একটু সময় নেওয়া বার্সেলোনা এগিয়ে যায় ১৯ মিনিটে। জুল কুন্দের ক্রস অনেকটা লাফিয়েও নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি গেতাফে গোলরক্ষক দাভিদ সোরিয়া। বল পেয়ে যান অরক্ষিত লেভানডভস্কির অনায়াসে জাল খুঁজে নেন অভিজ্ঞ পোলিশ স্ট্রাইকার। আসরে এটি তার সপ্তম গোল। চার মিনিট পর বাড়তে পারত ব্যবধান। রাফিনিয়ার চমৎকার কাট ব্যাকে লামিনে ইয়ামালের চেষ্টা একটুর জন্য লক্ষ্যে থাকেনি। ২৯ মিনিটে আলেহান্দ্রো বালেদর বাড়ানো বলে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পান রাফিনিয়া। তবে আগস্টের সেরার পুরস্কার জেতা ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি। দুই মিনিট পর ফের জালে বল পাঠান লেভানডভস্কি। কিন্তু তিনিই অফসাইডে থাকায় মেলেনি গোল।
৩৩ মিনিটে কাছের পোস্টে লেভানডভস্কির শট হাঁটু দিয়ে ঠেকিয়ে দেন গেতাফে গোলরক্ষক। ৮ মিনিট পর ইয়ামালের শট বেরিয়ে যায় পোস্টের পাশ দিয়ে। দ্বিতীয়ার্ধে আবার সুযোগ পান ইয়ামাল। ৫৯ মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে এই তরুণের বাঁকানো শট ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান সোরিয়া। ৭১ মিনিটে রাফিনিয়ার ফ্রি-কিক কোনোমতে হাত বাড়িয়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন গেতাফে গোলরক্ষক। সেই কর্নার থেকেই বল পেয়ে বুলেট গতির শট নেন ইয়ামাল। যা বেরিয়ে যায় ক্রসবার ছুঁয়ে।
৭ মিনিট পর ব্যবধান বাড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন এরিক গার্সিয়া। রাফানিয়ার ফ্রি কিকে বল পেয়ে খুব কাছ থেকে বিস্ময়করভাবে ক্রসবারের ওপর দিয়ে মারেন তিনি। ৮২ মিনিটে আবার সুযোগ হাতছাড়া করে বার্সেলোনা। কুন্দের দারুণ ক্রসে অরক্ষিত রাফিনিয়ার হেড যায়নি লক্ষ্যের ধারে কাছে। শেষ দিকে বার্সেলোনাকে ভীষণ চাপে রাখা গেতাফে সমতা ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু যোগ করা সময়ের চতুর্থ মিনিটে পেনাল্টি স্পটের কাছে ক্রস পেয়েও ঠিকমতো পা ছোঁয়াতে পারেননি মায়োরাল। লিগে আগের তিন ম্যাচে ১৬ গোল করা ফ্লিকের দলে আসরে দ্বিতীয়বারের মতো অক্ষত রাখতে পারল জাল।
এদিকে ম্যাচ থেকে প্রত্যাশিত তিন পয়েন্ট পাওয়ার স্বস্তি ফ্লিকের আছে। টানা জয়ের উচ্ছ্বাসও তার সঙ্গী। তবে দল এখনো সম্ভাব্য সেরা চেহারায় আসতে পারেনি বলেই মনে করেন কোচ। সাত ম্যাচে সাত জয় মানে ‘পারফেক্ট’ শুরু। তবে এখনো কিছু জায়গায় আমাদের আরো ভালো করতে হবে। আজকে আমাদের মানসিকতা ভালো ছিল। আমি ব্যাপারটাকে যেভাবে দেখি, উন্নতি করার পথে আমাদের শুরুটা ভালো হয়েছে। গেতাফের বিপক্ষে ম্যাচের ৭৮ শতাংশ সময় বল ছিল বার্সেলোনার কাছে। ১৫টি শট তারা নিয়েছে গোলে। তবে লক্ষ্যে ছিল কেবল চারটি। রাফিনিয়া একাই হাতছাড়া করেছেন অন্তত তিনটি ভালো সুযোগ। এই দায় দেওয়া যায় লেভানডভস্কি, লামিনে ইয়ামালদেরও। গোলকিপার দাভিদ সরিয়ার ভুলে ম্যাচের একমাত্র গোলটি খেয়েছে গেতাফে। তবে ম্যাচজুড়ে অনেকবার দলকে বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন তিনি। ব্যবধান বাড়াতে না পারার খেসারত প্রায় দিতে হচ্ছিল বার্সেলোনাকে। ৯০ মিনিট শেষে যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে দারুণ এক সুযোগ হাতছাড়া করে গেতাফে। শেষ পর্যন্ত তিনটি পয়েন্ট পাওয়ায় ও দলের লড়িয়ে মানসিকতায় খুশি কোচ ফ্লিক।
আমাকে বলা হয়েছিল, গেতাফের বিপক্ষে সবসময়ই এরকম, আমাদের ভুগতে হয়। তারা রক্ষণে খুব ভালো। আজকে আমি আমার ফুটবলারদের নিয়ে খুবই গর্বিত, যেভাবে তারা ৯৫ মিনিট লড়েছে। আমি শুধু ওই ফুটবলারদের নিয়েই কথা বলি, যারা আমার দলে আছে। ইনিয়াকি পেনিয়া এখন আমাদের এক নম্বর গোলকিপার এবং তাকে নিয়ে আমি খুশি। সে এটার যোগ্য। আমরা আমরা গোল হজম করিনি, এতে সবাই খুশি।
"