ক্রীড়া ডেস্ক
১৬ বছর পর ফ্রান্সকে বিধ্বস্ত করল ইতালি
রেফারি ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজাতেই চোখের পলকে ইতালির জালে বল। প্যারিসের গ্যালারিতে তখন ফরাসি সমর্থকদের উল্লাস। তবে সেটি বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি ফ্রান্স। দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে উয়েফা নেশন্স লিগের নতুন আসরে শুভসূচনা করেছে ইতালি। প্যারিসে শুক্রবার রাতে ‘এ’ লিগের দুই নম্বর গ্রুপের ম্যাচে ফ্রান্সকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে ইতালি।
নিজেদের ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষের ভুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রথম মিনিটেই ফ্রান্সকে এগিয়ে দেন বারকোলা। সতীর্থের ব্যাক-পাসে বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে অপেক্ষায় ছিলেন ইতালির ডিফেন্ডার জিওভান্নি দি লরেন্সো। তার সামনে থেকে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন বারকোলা। ডান পায়ের শটে এগিয়ে আসা গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন তিনি। ১৩ সেকেন্ডে করা এ গোলটি ফ্রান্সের ইতিহাসে এবং নেশন্স লিগে দ্রুততম।
ফ্রান্সের হয়ে আগের দ্রুততম গোলের রেকর্ড ছিল বের্নাদ লাকুম্বের। ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে ইতালির বিপক্ষেই ৩৭ সেকেন্ডে গোল করেছিলেন তিনি। অন্যদিকে নেশন্স লিগে এ রেকর্ডটি ছিল সুইজারল্যান্ডের হারিস সেফেরোভিচের। তিনি ২০২২ সালে পর্তুগালের বিপক্ষে ম্যাচের ৫৭ সেকেন্ডে গোলটি করেছিলেন। ম্যাচের শুরুতে গোল হজম করে পিছিয়ে পড়ে ইতালি। অবশ্য ষষ্ঠ মিনিটেই সমতায় ফিরতে পারতো তারা। সতীর্থের হেড পাসে কাছ থেকে ডিফেন্ডার ফ্রাত্তেসির হেড ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বলে মাতেও রেতেগির হেড চলে যায় ওপর দিয়ে। পরের মিনিটে সুযোগ তৈরি করে ফ্রান্স। এমবাপ্পের নিচু শট ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোনারুমা। ৩০ মিনিটে চমৎকার গোলে সমতায় ফেরে ইতালি। টোনালির ফ্লিকে বল পেয়ে দারুণ ভলিতে জাল খুঁজে নেন ডিমারকো। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে রাসপাদোরির শট ঠেকান ফ্রান্সের গোলরক্ষক মাইক মাইগনান। ৫০তম মিনিটে দারুণ আক্রমণ থেকে এগিয়ে যায় ইতালি। রেতেগির পাসে ছুটে গিয়ে বক্সে প্রথম স্পর্শে বাঁ পায়ের শটে গোল করেন ফ্রাত্তেসি। ৭৪ মিনিটে ব্যবধান বাড়ায় ইতালি। সতীর্থের পাস বক্সে পেয়ে ফরাসি ডিফেন্ডারের বাধা এড়িয়ে ডান পায়ের শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন রাসপাদোরি। এর মাধ্যমে ২০০৮ সালের পর এ প্রথম ফ্রান্সের বিপক্ষে জয় পেল ইতালি। মাঝে তিন ম্যাচের দেখায় সবগুলোতেই হেরেছিল ইতালি।
এদিকে বেলজিয়াম সহজ জয় পেয়েছে হাঙ্গেরির মাঠে। এ ম্যাচেও গোল হয়েছে চারটি। ইসরায়েলের বিপক্ষে দাপুটে জয়ের ম্যাচটা বেলজিয়ানরা খেলেছে ফাঁকা গ্যালারিতে। ম্যাচের সবকটি গোলই করেছেন বেলজিয়ানরা। জোড়া গোল করেন ম্যানচেস্টার সিটি মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনে। দুই অর্ধে গোল দুটি করেন সিটি মধ্যমাঠের প্রাণ।
২১ মিনিটে কেবিডির প্রথম গোলে লিড নেয় বেলজিয়াম। ৩৫ মিনিটে ক্যাস্টাগনের আত্মঘাতী গোল সমতায় ফেরায় ইসরায়েলকে। বিরতি থেকে ফিরেই চার মিনিটের ব্যবধানে দুই গোলে জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় ইউরোপের কালো ঘোড়াদের জয়। দলটি দ্বিতীয়বার লিড নেয় টেলিমানসের গোলে। ৫২ মিনিটে পেনাল্টি থেকে ডাবলস পূরণ করেন ডি ব্রুইনে।
ইউরোর হতাশা ভুলে নেশন্স লিগ শুরুর আগে দেশম বলেছিলেন, এ টুর্নামেন্টটি তার কাছে নতুন ফুটবলারদের পরখ করার সুযোগ। সেই ভাবনায় তিনি ইতালির বিপক্ষে অভিষেক করান ফরোয়ার্ড মিকেল ওলিজ ও মিডফিল্ডার মাঁনু কোনের। কিন্তু প্রথম পরীক্ষায় ব্যর্থ দেশম। ইতালির বিপক্ষে হারের পর তিনি মেনে নিয়েছেন, তরুণ দল নামানোর ঝুঁকি কাজে লাগেনি।
এখানে মূলত ভারসাম্য বা ভারসাম্যহীনতার প্রশ্ন। এ দলটি তরুণ এবং কয়েকজনের আজ অভিষেক হয়েছে। আমি জানি, মাঠে শুরুর (মূল) একাদশকে না নামিয়ে ঝুঁকি নিয়েছি এবং এতে সার্বিক পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়েছে। ইউরোতে ৬ ম্যাচে মাত্র ৩ গোল হজম করে ফ্রান্স। আর এবার নেশন্স লিগের প্রথম ম্যাচেই তাদের জালে বল জড়ায় ৩ বার। রক্ষণভাগেও নিয়মিত ফুটবলারদের বাইরে রেখে তুলনামূলক নতুন ইবাহিমা কুনাতে ও ইয়োনাথান ক্লসকে সুযোগ দেন দেশম।
ম্যাচ শেষে এসব পরিবর্তনের প্রভাব দলের ফলাফলে পড়ার কথা স্বীকার করেন দেশম। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে সরে আসার পক্ষে নন অভিজ্ঞ এ কোচ। আমি আগেও বলেছি, রক্ষণভাগ বদলে গেছে। এখন সময় যত বেশি সম্ভব ফুটবলারকে ম্যাচ খেলার সুযোগ দেওয়ার। আর আজ উঁচুমানের দলের বিপক্ষে আমরা বাজেভাবে খেসারত দিয়েছি। পরের ম্যাচেও এ লক্ষ্যটা বদলাবে না। এটি (পরীক্ষা-নিরীক্ষা) করার এখনই সময়। হতাশাজনক শুরুর ধাক্কা সামলে ওঠার সুযোগটা দ্রুতই পাচ্ছে ফ্রান্স। সোমবার রাতে ঘরের মাঠে তারা স্বাগত জানাবে বেলজিয়ামকে।
"