ক্রীড়া ডেস্ক
জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেন পাকিস্তান অধিনায়ক
ঘরের মাঠে পাকিস্তান ছিল ফেভারিট, বাংলাদেশ তাদের মাঠে গিয়ে টেস্ট জিতবে এমন অনুমান করা লোকের সংখ্যাই ছিল কম। সেখানে বাংলাদেশ রীতিমতো পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে দিয়েছে। এমন পারফরম্যান্সে সমর্থকদের রোষানলে পড়েছে পাকিস্তান দল, গণমাধ্যমেও ধেয়ে আসছে তীব্র সমালোচনা। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে তাদের পুরো জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন পাকিস্তান অধিনায়ক শান মাসুদ।
‘কিভাবে বর্ণনা করবেন, কিভাবে তুলে ধরবেন- গত তিন দশকের মধ্যে দেশের মাঠে পাকিস্তানের সবচেয়ে অন্ধকার কয়েকটি দিন সংবাদ সম্মেলনে প্রথম প্রশ্নটিই শুরু হলো এভাবে। এরপর একের পর এক তির ছুটে গেল শান মাসুদের দিকে। আক্রমণাত্মক সব প্রশ্নে জর্জরিত করা হলো পাকিস্তান অধিনায়ককে। তিনি চেষ্টা করলেন নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করতে। অকপটে স্বীকার করে নিলেন ভুলগুলো। ক্ষমা চাইলেন তিনি গোটা জাতির কাছে। পাকিস্তানের ক্রিকেটে সমালোচনার ধরন এমনিতেই প্রচণ্ড তীব্র। সাবেক ক্রিকেটার, বিশ্লেষক থেকে শুরু করে সংবাদমাধ্যম, বেশ আগ্রাসী থাকেন সবাই। বাংলাদেশের কাছে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর পরিস্থিতিটা সহজেই অনুমেয়। সংবাদ সম্মেলনে অনুমিতভাবেই তোপের মুখে পড়তে হলো শান মাসুদকে। ‘এ ধরনের প্রতিপক্ষের কাছে পাকিস্তানকে এভাবে হারতে কখনো দেখিনি’, এমন প্রশ্ন করলেন একজন। পাকিস্তান অধিনায়ক প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশকে খাটো করে দেখতে চাইলেন না, বরং প্রাপ্য কৃতিত্বটুকু দিয়ে নিজেদের ঘাটতি তুলে ধরলেন।
আমরা এরকম বলতে পারি না যে ‘এ ধরনের প্রতিপক্ষ।’ সব প্রতিপক্ষকেই সম্মান করা উচিত। বাংলাদেশের একটা বড় গুণ ছিল, দুই টেস্ট ম্যাচেই আমাদের চেয়ে বেশি শৃঙ্খলা ছিল ওদের। আমাদের উচিত নিজেদের দিকে দেখা, আমরা কত ভুল করেছি- অনেক ভুল আমরা করেছি।’ টেস্ট ক্রিকেটের যে চাহিদা, যে শারীরিক ও মানসিক ফিটনেস লাগে, সেটা চার-পাঁচ দিন ধরে রাখতে হয়। বেশ কয়েকটি সিরিজেই আমরা যা দেখেছি, এ জায়গাটায় আমাদের উন্নতি করতে হবে। আরেকটা ব্যাপার, ১০ মাস পর টেস্ট খেললে এরকম হবেই। এত বড় বিরতি দেওয়া যাবে না।
মাসুদের মতে, অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল। নিজ দলে সেই অভিজ্ঞতার অভাব অনুভব করেছেন তিনি। ওদের দুজন ক্রিকেটার আছে, যারা ৭০-৮০টি টেস্ট খেলেছে (মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান)। এছাড়া লিটন ও মেহেদি (মিরাজ) ৪০টির বেশি টেস্ট খেলেছে। আমাদেরও লাল বলের ক্রিকেটে এমন অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। এভাবেই আমাদের রসদ গড়ে তুলতে হবে। টেস্ট ম্যাচ হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্করণ। এখানে অভিজ্ঞতা লাগবেই। অধিনায়ক নিজেও প্রচণ্ড চাপের মুখে আছেন। তার ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্নটা ছিল সবসময়ই। দলে জায়গাই সেভাবে নিশ্চিত ছিল না। তাকে যখন অধিনায়ক করা হলো, পাকিস্তানের ক্রিকেটে তা নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল বেশ। এখন তা আরো উচ্ছসিত হয়েছে। তার নেতৃত্বে পাঁচ টেস্টের সবকটি হারল পাকিস্তান। অধিনায়ত্বের ১০ ইনিংসে তিনি নিজে ফিফটি করেছেন তিনটি। একটিতেও ৬০ পার হতে পারেননি। ব্যাটিং গড় এ সময়ে ২৮.৬০। তার ক্যারিয়ার ব্যাটিং গড়ও প্রায় একই (২৮.৫৩)।
মাসুদ অবশ্য দাবি করলেন, নেতৃত্ব হারানো নিয়ে তিনি শঙ্কিত নন। বরং দলকে এগিয়ে নিতে চান লক্ষ্যের দিকে। এ দায়িত্বটা যখন নিয়েছি, আমি চেয়েছি কিছু পরিবর্তন আনার জন্য, যেটায় আমি বিশ্বাস করি, দল বিশ্বাস করে। দায়িত্বের নিশ্চয়তা নিয়ে চিন্তিত নই। আমার লক্ষ্য হলো যে, যদি বিশ্বাস করি দল কোনো একটি সুনির্দিষ্ট দিকে এগোতে পারে, সেখানে নিজে ব্যর্থ হলেও আমি খুশি হব দলের জন্য। যতটুকু সময়ই আমাকে দেওয়া হোক, কৃতজ্ঞ থাকব ও সেরাটা দিয়েই চেষ্টা করব। প্রশ্নের পর প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে এক পর্যায়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেন অধিনায়ক। অনুরোধ করলেন দেশের ক্রিকেটের ভালোর জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে। আগের টেস্টের পরও বলেছিলাম, যখন হারব, ভুল হবে, সেটার দায় নেব। জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আগের ম্যাচের পরও এটা বলেছিলাম, এখনো বলছি। আমাদের সবার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত, কীভাবে দেশের ক্রিকেটের আরো ভালোর জন্য কাজ করতে পারি। যখন ভালো খেলব না, নিজে থেকেই হাত উঁচু করে বলব যে, ভালো করতে পারিনি। তবে এ মুহূর্তে মূল ব্যাপার হলো, আরো ভালো কিছুর জন্য কাজ করা।
"