ক্রীড়া ডেস্ক
ইউএস ওপেন
এ কেমন বিদায় জকোভিচের
৫টি-১০টি নয়, ১৪টি ডাবল ফল্ট। এছাড়া কোর্টে গতি মন্থর, শটে ধার নেই। চোখ কচলে বারবার দেখতে হচ্ছিল, নোভাক জকোভিচই তো। ম্যাচ শেষে এ কিংবদন্তি নিজেই বলছেন, ‘ভয়ানক বাজে পারফরম্যান্স।’ ফলাফলটা তাই বোঝাই যাচ্ছে। কার্লোল আলকারাজের বিদায়ের পর আরেকটি বড় অঘটনের মঞ্চায়ন হলো ইউএস ওপেনে। তৃতীয় রাউন্ডেই বিদায় নিলেন জকোভিচ। ২৫টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে নারী-পুরুষ মিলিয়ে রেকর্ড গড়ার অভিযানে আবারও থমকে গেলেন জকোভিচ। দ্বিতীয় বাছাই তারকাকে ৬-৪, ৬-৪, ২-৬, ৬-৪ গেমে হারিয়ে চমক উপহার দিলেন ২৮তম বাছাই অ্যালেক্সেই পপিরিন। ২৫ বছর বয়সি অস্ট্রেলিয়ান এ খেলোয়াড় প্রথমবার কোনো গ্র্যান্ড স্ল্যামের চতুর্থ রাউন্ডে উঠতে পারলেন। জকোভিচ তো এ স্বাদ প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন। সেই ২০০৬ সালের পর প্রথমবার ইউএস ওপেনের চতুর্থ রাউন্ডে উঠতে ব্যর্থ হলেন তিনি। রেকর্ড ২৪টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা জয় করা তারকা ২০১৭ সালের পর প্রথমবার কোনো গ্র্যান্ড স্ল্যাম ট্রফি ছাড়াই শেষ করবেন বছর।
এ পতনের দুই সপ্তাহ আগেই নতুন উচ্চতা ছুঁয়েছিলেন জকোভিচ। প্যারিস অলিম্পিকসের সোনা জিতে ক্যায়িয়ারের বড় একটি অপূর্ণতা ঘোচান তিনি। অর্জন-রেকর্ডে সমৃদ্ধ ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন বলেছিলেন তিনি সেটিকেই। এবার ইউএস ওপেন থেকে এত দ্রুত বিদায়ের পর জকোভিচ দায় দিলেন অলিম্পিকসের সেই শ্রান্তিকেই। সোনা জয়ের সেই প্রক্রিয়ায় প্রচুর প্রাণশক্তি ক্ষয় হয়েছে আমার। নিউইয়র্কে যখন আসি, শারীরিক ও মানসিকভাবে তরতাজা ছিলাম না। তারপর ইউএস ওপেন বলেই ভেবেছি যে চেষ্টা করেই দেখি এবং সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেছি। শারীরিক কোনো সমস্যা বা চোট ছিল না, তবে অনুভব করছিলাম ভেতরে কোনো শক্তি অবশিষ্ট নেই এবং যেভাবে খেলেছি, তাতেই তা ফুটে উঠেছে।
জকোভিচের কথার সত্যতা অবশ্য তার পারফরম্যান্সেই বোঝা গেছে। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই তাকে বেশ খাপছাড়া মনে হয়েছে। প্রথম দুই রাউন্ডে জিতলেও অনেক কষ্ট হয়েছে, ভুলের পর ভুল করেছেন। পপিরিনের বিপক্ষে এ ম্যাচে ১৪টি ডাবল ফল্ট করেছেন, তার গ্র্যান্ড স্ল্যাম ক্যারিয়ারেই যা সবচেয়ে বেশি। এ ম্যাচে নিজের পারফরম্যান্স, এবারের আসরে তার পারফরম্যান্সের হতাশা, সবই অকপটে বললেন ৩৭ বছর বয়সি তারকা নিজেই। গতিময় সারফেসে যদি সার্ভ উধাও হয়ে যায়, ফ্রি পয়েন্টস আদায় করা না যায়, এত ডাবল ফল্ট হয়, তাহলে ম্যাচ জেতা যায় না। আমার জন্য ভয়ানক বাজে ম্যাচ ছিল। এবার আসলে এখানে প্রথম ম্যাচ থেকেই কোর্টে নিজেকে খুঁজে পাইনি। এটাই বলতে পারি শুধু। অনেক বেশি কিছু চেষ্টা করেছি। এটাও কখনো কখনো বড় সমস্যা। কারণ, মৌলিকত্ব থেকে সরে গেছি। মৌলিক জায়গা থেকে সরে গেলে ভিত এলোমেলো হয়ে যায়। এখানে যে তিনটি ম্যাচ খেললাম, মানসিকভাবে আমার জন্য ছিল বড় একটা লড়াই। কারণ নিজের সেরা পারফরম্যান্সের ধারে কাছেও থাকতে পারিনি। জকোভিচের উল্টো অনুভূতি পপিরিনের। এ বছরের উইম্বলডনের তৃতীয় রাউন্ডে এ জকোভিচের কাছেই হেরেছেন তিনি।
উইম্বলডন ছাড়া অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে তিনবার তৃতীয় রাউন্ডে ওঠাই ছিল তার ক্যারিয়ারের সেরা সাফল্য। এবার উইম্বলডন ছাড়া অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেও জকোভিচের কাছে হেরেই ছিটকে গেছেন পপিরিন। এবার তিনি পেলেন ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় জয়। অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড় জানালেন, জকোভিচের কাছে আগের দুই হার থেকে শিক্ষা তার কাজে লেগেছে এবারের জয়ে।
থার্ড টাইম লাকি। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ও উইম্বলডনে তার সঙ্গে লড়াই করতে পেরেছিলাম আমি। তবে তখন সুযোগ কাজে লাগাতে পারিনি। আজকে সুযোগগুলো নিতে পেরেছি। সত্যি বলতে, আজকে এমন কিছু হয়েছে, যা করতে পারি বলে বিশ্বাস আমার ছিল। এ বছর অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ও উইম্বলডনের অভিজ্ঞতার পর কিছুটা আত্মবিশ্বাস পেয়েছিলাম যে আজকে আমি জিততে পারি। সেই বিশ্বাসই আমাকে এগিয়ে নিয়েছে। তৃতীয় বাছাই ও ফেভারিট আলকারাসের বিদায়ের পর জোকোভিচের এ পরাজয়ে অনেকটাই রঙ হারাল ইউএস ওপেন। টেনিস বিশ্বের পালাবদলের ছবিটাও স্পষ্ট হলো আরও। টেনিসের ‘বিগ থ্রি’ রজার ফেদেরার, রাফায়ল নাদাল ও জোকোভিচের কেউ কোনো গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারলেন না ২০০২ সালের পর প্রথমবার।
"