পাকিস্তানের বিপক্ষে আসন্ন দুই টেস্ট সিরিজে সাকিব আল হাসানকে তার মেধা ও অভিজ্ঞতার কারণেই স্কোয়াডে রাখা হয়েছে বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন জাতীয় দল নির্বাচক কমিটির প্রধান গাজি আশরাফ হোসেন লিপু। এ বছর বাংলাদেশ দলের সূচিতে থাকা ৮ টেস্টের সব ক’টিতেই অভিজ্ঞ এ অলরাউন্ডারকে পাওয়া যাবে বলেও নিশ্চিত করেছেন প্রধান নির্বাচক। শেষ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর মাঠের ক্রিকেটের বাইরেও সাকিবকে নিয়ে রয়েছে অন্য দুশ্চিন্তা। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাকিব। বর্তমানে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাস্ট্রে অবস্থান করছেন এ অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার।

মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে লিপু বলেন, ‘বর্তমান অবস্থা নিয়ে অবশ্যই আমরা চিন্তিত। তার নিরাপত্তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের শীর্ষ একজন খেলোয়াড় সাকিব। সে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তবে আমরা মূলত তার মেধার ভিত্তিতেই তাকে দল রেখেছি।’ তার পারফরম্যান্সই তার সম্পর্কে বলে দেয়। ক্রিকেটের বিভিন্ন ভার্সন এবং বিভিন্ন কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার তার ক্ষমতা অতুলনীয়। পাকিস্তানের বিপক্ষেও তার রেকর্ড দুর্দান্ত এবং এখানে সত্যকে অস্বীকার করা যায় না। লিপুর নেতৃত্বাধীন নির্বাচক প্যানেল পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই টেস্ট সিরিজের জন্য গতকাল দল ঘোষণা করেছে। মুশফিকুর রহিম এবং তাসকিন আহমেদও দলে ফিরেছেন। অবশ্য তাসকিন কেবলমাত্র দ্বিতীয় টেস্ট খেলবেন। গত মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের শেষ টেস্টে দলে থাকা ব্যাটার শাহাদাত হোসেন দিপু বাদ পড়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতনের সময় কানাডায় গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি লিগ খেলতে ব্যস্ত ছিলেন সাকিব। ক্রিকেট বোর্ড থেকে তাকে দেওয়া অনাপত্তিপত্রের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১২ আগস্ট। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণেই এখানে আনুষ্ঠানিক কোনো অনুশীলন ছিল না। নির্ধারিত সূচির চার দিন আগেই আজ লাহোরের উদ্দ্যেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন দল। প্রথম টেস্টের ভেন্যু রাওয়ালপিন্ডিতে ১৭ আগস্ট যাওয়ার আগে ১৪ থেকে ১৬ আগস্ট লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে অনুশীলন করবে টাইগাররা। ২১ আগস্ট রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম এবং করাচিতে ৩০ আগস্ট শুরু হবে দ্বিতীয় টেস্ট। ১৫ আগস্টের আগেই সাকিব দলের সঙ্গে যোগ দেবেন বলেও জানান আশরাফ।

বাংলাদেশ দলের সাবেক এ অধিনায়ক বলেন, ‘দেশের বাইরে থাকাকালে সাকিবের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল। দেশের বাইরে কোনো খেলোয়াড় থাকলে তার সঙ্গে নিয়মিত যোগায়োগ রাখা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আমি শরিফুলের সঙ্গেও কথা বলেছি। তিনি আরো বলেন, আমরা যতদূর জানি ১৪ অথবা ১৫ আগস্ট সাকিব পাকিস্তানে দলের সঙ্গে যোগ দেবে এবং বিষয়টি লজিস্টিক ডিপার্টমেন্ট দেবে।’ বিসিবির সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে ক্রিকেট থেকে দূরে থাকা তামিম ইকবালের সঙ্গেও কথা বলেছেন লিপু। তিনি বলেন, যেহেতু সব কিছুতেই পরিবর্তন এসেছে তাই আমি মনে করি তার মতামত (ক্রিকেটে তার ফেরার বিষয়ে) জানতে চাওয়ায় কোনো সমস্যা নেই। আমরা আগে শুনেছিলাম সভাপতির (নাজমুল হাসান পাপন) সঙ্গে সে কথা বলবে। ২০২৩ বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার পর আর কোনো ভার্সনেই তামিমকে দলে বিবেচনা করা হয়নি। বিসিবি বারবার তার সঙ্গে বৈঠকের কথা বলেছে, তবে কখনোই সেটা হয়নি। এখন অবস্থার পরিবর্তন হওয়ায় নির্বাচকদের জন্য সহজ হয়ছে।

সর্বশেষ ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের শেষ ওয়ানডে খেলেছেন তামিম। এর আগে একই বছর এপ্রিলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একটি টেস্ট খেলেছেন অভিজ্ঞ এ ওপেনার। জাতীয় দলে সুযোগ না পেলেও ঘরোয়া ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে ব্যন্ত ছিলেন তামিম। তার নেতৃত্বে এ বছর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ( বিপিএল) টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের শিরোপা জয় করে ফরচুন বরিশাল। এছাড়া ঢাকা পিমিয়ার লিগেও (ডিপিএল) খেলেছেন তিনি।

এদিকে কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টিতে বাংলা টাইগার্স মিসিসাগা ও টরোন্টো ন্যাশনালসের মধ্যকার ম্যাচটি নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছে। এ ম্যাচটিতে শেষপর্যন্ত না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। তার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল বলেই মনে করেন শরিফুল ইসলাম। ম্যাচটি প্রথমে সুপার ওভার না খেলতে চাওয়ায় সাকিব ও শরিফুলদের বাংলা টাইগার্সকে টুর্নামেন্ট থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সংশ্লিষ্টরা। তবে কিছুক্ষণ পরই বদলে যায় সেই সিদ্ধান্ত। গ্রুপপর্বের সবগুলো ম্যাচ শেষে পয়েন্ট তালিকার তিন নম্বরে ছিল বাংলা টাইগার্স।

এতেই চারে থাকা টরোন্টোর বিপক্ষে তাদের ম্যাচ পড়ে এলিমিনেটরে। যদিও ৯ আগস্ট বৈরি আবহাওয়ার কারণে ম্যাচটি মাঠে গড়ায়নি। হিসেব অনুযায়ী দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে উঠে যাওয়ার কথা ছিল সাকিবদের। কেননা পয়েন্ট তালিকায় এগিয়ে ছিল তারা। তবে ম্যাচ অফিশিয়ালসদের কাছ থেকে আসে ভিন্ন সিদ্ধান্ত। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, ম্যাচের ফলাফল আনতে হলে অন্তত ম্যাচ হতে হবে প্রতি ইনিংস ৫ ওভারের। অন্তত পাঁচ ওভার করে না হলে কোনোভাবেই ম্যাচটি সুপার ওভারে নেওয়া যাবে না। যদিও আম্পায়াররা তখন প্রস্তাব রাখেন সুপার ওভারের। আর তাই ক্ষুব্ধ হয়ে সুপার ওভারে না খেলার সিদ্ধান্ত জানান সাকিব। কানাডা থেকে দেশে ফিরে সাকিবের এ সিদ্ধান্তের পক্ষেই যুক্তি দেন শরিফুল।

"