ক্রীড়া ডেস্ক
ব্রাজিলের স্বপ্ন ভেঙে স্বর্ণ জিতল যুক্তরাষ্ট্র
মাঠে বল গড়ানোর পরপরই আরেকটি খেলা শুরু হলো গ্যালারিতে। সেটি কণ্ঠের জোর দেখানোর খেলা। পিএসজির মাঠে দর্শক ছিল প্রায় গ্যালারি ভরা। ‘ব্রাজিল ব্রাজিল’ চিৎকারে চারপাশ প্রকম্পিত করে তুললেন ব্রাজিলিয়ান সমর্থকরা; পরমুহূর্তেই গগনবিদারী আওয়াজে তাদের ছাপিয়ে গেল ‘ইউএসএ ইউএসএ’ গর্জন। ম্যাচজুড়েই দর্শকদের এ লড়াই চলল। মাঠের ফুটবলেও লড়াই হলো ভালোই। শেষ পর্যšত্ম এ দুই দলকে আলাদা করল একটি গোল। অলিম্পিকসের নারী ফুটবলে আরো একবার স্বর্ণজয় করল যুক্তরাষ্ট্র। প্যারিসে গত শনিবার ফাইনালে ১-০ গোলে ব্রাজিলকে হারাল তারা। নারী ফুটবলে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণজয়ের রেকর্ড তাদেরই ছিল। এবারের জয়ে পাঁচ স্বণে রেকর্ড আরো সমৃদ্ধ হলো তাদের। ব্রাজিলের এ স্বর্ণ রইল অধরাই। এবার নিয়ে তিনবার তারা পেল র¤œপা। প্রতিবারই ফাইনালে তারা হারে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। ২০০৪ ও ২০০৮ সালের পর এবার তিনবারই ব্রাজিল দলে ছিলেন মার্তা। ব্রাজিলের সর্বকালের সেরা নারী ফুটবলার, ব্রাজিলের সফলতম স্কোরার বিশ্ব ফুটবলের সর্বকালের সেরাদের একজন এ মহাতারকার ক্যারিয়ার শেষ হচ্ছে বড় কোনো দলীয় সাফল্য ছাড়াই। খেলা শেষ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলাররা যখন মেতে উঠলেন উদযাপনে, হতাশ ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের অনেকেই এগিয়ে গেলেন মার্তার দিকে। হয়তো কিংবদšিত্মকে তাকে সাšত্ম¡না দিতে চাইছিলেন তারা। কিন্তু মার্তাকে বেশ শক্তই দেখা গেল। ভেঙে পড়লেন না এ ফরোয়ার্ড। উল্টো তিনিই সতীর্থদের কাছে গিয়ে পিঠ চাপড়ে আলিঙ্গনে জড়িয়ে সাšত্ম¡না দিলেন। তবে নিজের ভেতরটা নিশ্চয়ই ফাঁকা অনুভব করছিলেন তিনি! রেকর্ড টানা পাঁচবারসহ মোট ছয়বার ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলার হওয়ার রেকর্ড তার। ছেলেমেয়ে মিলিয়েই বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন তিনি। বিশ্বকাপে জিতেছেন গোল্ডেন বল ও গোল্ডেন বুট। ছেলেমেয়ে মিলিয়ে পাঁচটি বিশ্বকাপে গোল করা প্রথম ফুটবলার তিনি। পাঁচটি অলিম্পিকসে গোল করার অনন্য কীর্তিও তার। অবিশ্বাস্যভাবে এবার ষষ্ঠ অলিম্পিকস খেললেন এ ৩৮ বছর বয়সে।শেষ বেলায় এসে অপূর্ণতা ঘোচানোর আরেকটি সম্ভাবনা জেগেছিল। কিন্তু শেষ পর্যšত্ম হলো না। এখনো আšত্মর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানাননি তিনি। তবে জানিয়ে দিয়েছেন, এ বছরই শেষ। তাই বড় কোনো আসরও তাই শেষ এ অলিম্পিকস দিয়েই। ব্যক্তিগত সাফল্য আর রেকর্ডে টইটম্বুর তার ক্যারিয়ার। কিন্তু দলীয় অর্জনে প্রাপ্তি একবার বিশ্বকাপে রানার্সআপ আর অলিম্পিকসে তিনটি র¤œপা।
ব্রাজিলের অবশ্য এবার ফাইনালে আসাও কম বিস্ময়কর ছিল না। প্রথম ম্যাচে নাইজেরিয়াকে কোনোরকমে হারাতে পারলেও পরের দুই ম্যাচে জাপান ও স্পেনের বিপক্ষে হেরে বসে তারা। পরে তৃতীয় সেরা দুই দলের একটি হয়ে তারা কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে পারে। সেখানে ফ্রান্সকে হারানোর পর সেমিফাইনালে স্পেনকে ৪-২ গোলে হারিয়ে তারা পা রাখে ফাইনালে। নকআউটের আগের দুই ম্যাচে অবশ্য ছিলেন না মার্তা। গ্র¤œপ পর্বের শেষ ম্যাচে লাল কার্ড দেখায় নিষিদ্ধ ছিলেন তিনি দুই ম্যাচে। ফাইনালে তাকে দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামান কোচ। নেতৃত্বের আর্মব্যান্ডও পরিয়ে দেওয়া হয় তাকে। খুব বড় প্রভাব অবশ্য রাখতে পারেননি তিনি। দুয়েকবার বল পায়ে কারিকুরি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের গোলমুখে খানিকটা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছেন। তবে ব্যবধান গড়তে পারেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের খেলা ছিল তুলনামূলক গোছানো, আক্রমণেও ছিল একটু বেশি ধার। গোটা আসরেই তাদের পথচলা ছিল ব্রাজিলের পুরো উল্টো। শুর¤œ থেকেই তারা এগিয়ে যায় দাপটে। গ্র¤œপ পর্বের তিন ম্যাচে জাম্বিয়া, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পর নকআউটে জাপান ও জার্মানিকে হারিয়ে তারা ফাইনালে ওঠে। অপ্রতিরোধ্য পথচলায় স্বর্ণও জিতে নিল তারা। যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে শততম ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখেন ম্যালোরি সোয়ানসন। দ্বিতীয়ার্ধের দ্বাদশ মিনিটে গোল করে তিনি পার্থক্য গড়ে দেন ম্যাচে। গোলটিও ছিল দেখার মতো। করবিন আলবার্টের দার¤œণ পাস থেকে বল পেয়ে দুর্দাšত্মভাবে এগিয়ে গিয়ে নিখুঁত ফিনিশিংয়ে বল জালে জড়ান ২৬ বছর বয়সি ফরোয়ার্ড।
ম্যাচের শুর¤œতে যদিও ব্রাজিলের একটু দাপট ছিল। শেষ দিকে ভালো কিছু আক্রমণও তারা করে। কিন্তু গোল বের করতে পারেননি কেউ। ম্যাচ শেষে মাঠ ছেড়ে যাওয়ার সময় অবশ্য একটু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন মার্তা। তাকে জড়িয়ে তখন সাšত্ম¡না দেন কোচ।
"