ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ১২ আগস্ট, ২০২৪

ক্রীড়াঙ্গন রাজনীতিমুক্ত রাখার আহ্বান সোহানের

ক্রিকেটার নুরুল হাসান সোহান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। আন্দোলনের শুরু থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাত্রদের পক্ষে সক্রিয় ছিলেন এ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। এবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এসে ক্রীড়াঙ্গনকে রাজনীতিমুক্ত রাখার কথা বললেন নুরুল। সেটা শুধু ক্রিকেট সংগঠক নয়, ক্রিকেটারদের জন্যও প্রযোজ্য হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুই বড় তারকা মাশরাফি বিন মর্তুজা ও সাকিব আল হাসান পেশাদার খেলোয়াড় থাকা অবস্থায়ই রাজনীতিতে জড়িয়েছেন। আওয়ামী লিগ থেকে সংসদ সদস্যও হয়েছেন। দুজনের কেউই রাজনীতিতে আসার পরও খেলা থেকে অবসর নেননি। নুরুল ভবিষ্যতে ক্রিকেটারদের মধ্যে এমন কিছু দেখতে চান না। তার যুক্তি, ‘এটা (খেলার পাশাপাশি রাজনীতি) অবশ্যই উচিত নয়। রাজনীতি একটা বড় জায়গা। রাজনীতির জায়গা থেকে মাঠে নিজেকে নিংড়ে দেওয়া কঠিন। খেলা থেকে অবসর নিয়ে রাজনীতি করুক। খেলা চালিয়ে যাওয়া অবস্থায় কিছু প্রটোকল অবশ্যই থাকা উচিত।’ সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মর্তুজা দুজনই খেলা চালিয়ে যাওয়া অবস্থায় সংসদ নির্বাচন করেছেন।

ক্রিকেট সংগঠকদের দিকেও আঙুল দিয়ে নুরুল বলেছেন, ‘কিছু মানুষকে নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে। এমন মানুষ আসা উচিত নয়, যারা খেলাকে নিয়ে ব্যবসা করতে চায়, ব্যক্তিগত লক্ষ্য নিয়ে আসে। এখান থেকে রুটিরুজি বের করে সংসার চালাতে হবে, এমন কেউ সংগঠক হিসেবে যেন না আসে। আমরা ক্রিকেটার, খেলাধুলা করে টাকাপয়সা পাই। আলহামদুলিল্লাহ, আজ আমার গাড়ি-বাড়ি সব ক্রিকেটের মাধ্যমে হয়েছে। কিন্তু সংগঠকরা যারা আসবে, তাদের প্রতিষ্ঠিত হয়ে আসা উচিত, ক্রিকেটের ভালোর জন্য আসা উচিত। এখান থেকে বাড়ি-গাড়ি করার কিছু নেই।’

নিচের ধাপে যেসব ক্রিকেটার আছেন, তাদের আর্থিক দূরবস্থার কথা জানিয়ে দেশের হয়ে তিন সংস্করণে ৬৪ ম্যাচ খেলা এ ক্রিকেটার বলেন, ‘আমি অনেক দিন ধরে জাতীয় দলের আশপাশে আছি। আলহামদুলিল্লাহ, চুক্তিতে থাকায় ভালো একটা বেতন পাচ্ছি। প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ, তৃতীয় বিভাগ- এগুলোর অবস্থা কী?’ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে টাকাপয়সা নিয়ে দুর্নীতির বিষয়টিও সামনে এনেছেন নুরুল, ‘সর্বশেষ যখন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছি, বিসিবি থেকে বিভাগীয় দলের জন্য জার্সি বাবদ দেওয়া হতো তিন লাখ টাকার মতো। এটা আমি নিজের চোখে দেখেছি, যেহেতু ক্যাপ্টেন ছিলাম। ৩০ জন খেলোয়াড়ের জন্য জার্সি বানানো হয়েছে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে, যেটা পরার মতো নয়। এটার দায়িত্বে ছিলেন (বিভাগীয় দলের) সেক্রেটারি। ১৪-১৫ বছর ধরে সে-ই ছিল। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেই যদি এমন হয়...। পরে আমরা খেলোয়াড়রা নিজেদের টাকা দিয়ে জার্সি বানিয়েছি। যে জার্সি বাইরে পরার মতো অবস্থা ছিল না।’

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার ইস্তফার পর থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) হাওয়া বদলে গেছে। বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি নাজমুল হাসানসহ ২৫ পরিচালকের বেশির ভাগ আত্মগোপনে। ওদিকে বিরোধীপক্ষের সংগঠকরা প্রায় প্রতিদিনই বিসিবিতে আসছেন, মিছিল করছেন, স্লোগান দিচ্ছেন। আজও বিসিবির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাবুর নেতৃত্বে ক্রিকেট সংগঠকদের একটি দল বিসিবিতে এসেছে। বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর কাছে মৌখিকভাবে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে।

এ ব্যাপারে রফিকুল ইসলাম বাবু সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এখন অনেক পরিচালকই দেশে নেই। তারা অনেকেই পালিয়েছেন। যারা আছেন, তারা পদত্যাগ করলেই হয়ে যায়। পরপর তিনটি বোর্ড মিটিংয়ে অনুপস্থিত থাকলেই সেই পরিচালকের পদ শূন্য হয়ে যায়। কোরাম–সংকট আছে। তাঁরা সংবিধান মেনে পদত্যাগ করলেই সহজ হয়ে যায়। আমরা আইসিসির নিয়ম ভাঙতে চাই না। আমরা আইনের মধ্যে থেকেই পদত্যাগ দাবি করছি।’

ক্রিকেটারদের সংগঠন কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক ও ম্যাচ রেফারি দেবব্রত পাল বলেন, ‘ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। সবকিছু ভদ্রভাবে হওয়া উচিত। আজকে হয়তো সময় এসেছে অনেক কিছু বলার। কিন্তু আমরা আসলে বলতে চাই না...গত দুই যুগে বাংলাদেশের ক্রিকেট যেই জায়গায় যাওয়ার কথা ছিল, আমরা ওই জায়গায় যাইনি। অনেক পিছিয়েছি।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close