ক্রীড়া ডেস্ক
বিদায়ি ম্যাচ জয়ে রাঙাতে চান অ্যান্ডারসন
আজ বুধবার লর্ডসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শুরু হওয়া ৩ ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিতে যাচ্ছেন ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি পেসার জেমস অ্যঅন্ডারসন। জয় দিয়ে বিদায়কে রাঙাতে চান তিনি। টেস্ট ফরম্যাটে পেসারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭০০ উইকেটের মালিক হলেও ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে এসেও জয়কে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন ৪১ বছর বয়সি অ্যান্ডারসন। তিনি বলেন, শেষ ম্যাচে উইকেট শিকার করতে পারি বা না পারি, তাতে কোনো আক্ষেপ থাকবে না। পুরো ক্যারিয়ারে যেমন দলের জয়ই বড় লক্ষ্য ছিল, শেষ ম্যাচেও অন্য কিছু ভাবছি না।
অ্যান্ডারসনের শেষ ম্যাচ নিয়ে শিহরিত ওয়েস্ট ইন্ডিজও। তবে অভিজ্ঞ এ পেসারের ‘অবসর পার্টি’ প- করার লক্ষ্য ক্যারিবীয়দের। ক্রিকেটের মক্কাখ্যাত লর্ডসে আজ বিকেল ৪টায় শুরু হবে সিরিজের প্রথম টেস্ট। ইংল্যান্ডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রব কি, টেস্ট দলের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও টেস্ট অধিনায়ক বেন স্টোকসের সঙ্গে আলোচনার পর গত এপ্রিলে অবসরের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছিল অ্যান্ডারসনের। ২০২৫-২৬ মৌসুমের অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে হতে যাওয়া অ্যাশেজ সামনে রেখে ইংল্যান্ড দলকে নতুনভাবে সাজানোর পরিকল্পনার কথা অ্যান্ডারসনকে জানান কি ম্যাককালাম ও স্টোকস। এরপরই টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সিদ্বান্ত নেন অ্যান্ডারসন। এজন্য বেছে নেন ঘরের মাঠে উইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ।
ইংল্যান্ড ক্রিকেটের বড় তিন কর্তার দেওয়া অবসরের ইঙ্গিতে অবাক হননি অ্যান্ডারসন। এমন কিছু হতে যাচ্ছে, সেটি আগের থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন তিনি, ‘আমি বলব না, অবাক হওয়ার মতো কোনো ঘটনা ছিল এটি। বড় তিন কর্তা যখন আমাকে ম্যানচেস্টারের এক হোটেলে কথা বলতে ডাকে, তখন আমি মনে করিনি কোনো সাধারণ বিষয় হতে যাচ্ছে। এমন কিছু হবে, তেমন ধারণা করেছিলাম। আমার মনে হয়, আমাকে শান্ত দেখে তারা নিজেরাই বেশ অবাক হয়েছিল। আমি কীভাবে এতটা শান্ত ছিলাম, আমি নিজেও নিজেকে নিয়ে অবাক হয়েছিলাম। আমি আবেগাপ্লুত হইনি বা রেগে যাইনি বা অন্য কিছুই করিনি।’ তিনি আরো বলেন, ‘তাদের দৃষ্টিভঙ্গি জানার পর আমাকে নিয়ে তাদের পরিকল্পনার প্রশংসা করি। আমি তাদের বিষয়টি মেনে নিয়েছি ও এজন্য আমার কোনো কষ্টও নেই।’
২০০২ সালের ডিসেম্বরে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় অ্যান্ডারসনের। পরের বছর মে’তে লর্ডসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় এ ডানহাতি পেসারের। এরপর টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮৭ ম্যাচ খেলে ফেলেন তিনি। ২২ বছরের বর্ণাঢ্য ক্রিকেট ক্যারিয়ারে বিশ্বসেরা দুই স্পিনার অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়ার্ন এবং শ্রীলঙ্কার মুত্তিয়া মুরালিধরনের পর তৃতীয় বোলার ও প্রথম পেসার হিসেবে গত মার্চে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে ৭০০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন অ্যান্ডারসন। ২৬.৫২ গড় ও ২.৭৯ ইকোনমি রেটে ৭০০ উইকেট নিয়ে বহু রেকর্ডের মালিক তিনি। ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাকগ্রার ৫৬৩ উইকেট টপকে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি পেসার হন অ্যান্ডারসন। ইংল্যান্ডের হয়ে ১৯৪ ওয়ানডেতে ২৬৯ উইকেট এবং ১৯টি টি-টোয়েন্টিতে ১৮ উইকেটও শিকার করেছেন অ্যান্ডারসন। ২০১৫ সালে সর্বশেষ সাদা বলের ক্রিকেটে খেলেছেন তিনি। ২২ বছর আগে অভিষেক হওয়া লর্ডসে ইতি টানার টেস্টে আবেগ সামলানোর কথা জানান অ্যান্ডারসন, ‘আমি নিশ্চিত এ সপ্তাহে আমি আবেগতাড়িত হবই। কিন্তু এ মুহূর্তে কান্না থামানো দিকেই সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিচ্ছি।’ দীর্ঘ টেস্ট ক্যারিয়ারে অ্যান্ডারসনকে সবচেয়ে বেশি কি আনন্দিত করেছে, এমন কথা জানতে চাওয়া হলে অ্যান্ডারসন বলেন, ‘মাত্র ৪২ বছর বয়সে ১৮৮ টেস্ট খেলা আমাকে সবচেয়ে গর্বিত করে এবং আমি এখনো আমার সম্ভাব্য সেরাটা দেওয়ার জন্য নিজেকে চাপ দিচ্ছি।’
অ্যান্ডারসনের বিদায় টেস্টে জয় পেতে চায় উইন্ডিজও। কিন্তু ইংল্যান্ডের মাটিতে অতীত পারফরম্যান্স বড় চিন্তার কারন ক্যারিবীয়দের। ১৯৮৮ সালে সর্বশেষ ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতেছিল উইন্ডিজ। এরপর নয় সিরিজের মধ্যে ৭টিতে পরাজিত হয়েছে, ২টিতে ড্র করেছে ক্যারিবীয়রা। তারপরও এ সিরিজে ভালো খেলার ব্যাপারে আশাবাদী হোল্ডার, ‘দল হিসেবে আমরা আত্মবিশ্বাসী। অ্যান্ডারসনের শেষ ম্যাচে জিততে চাই আমরা। এমনকি সিরিজও জিততে মরিয়া পুরো দল। দীর্ঘদিন ধরেই আমরা ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজ জিততে পারিনি। এবার জয়ের লক্ষ্য নিয়েই আমরা মাঠে নামতে চাই।’
"