ক্রীড়া ডেস্ক
ফ্রান্সের রেকর্ড দিনে আক্ষেপ জার্মানির
ম্যাচ শুরুর তৃতীয় মিনিটেই জিব্রাল্টার জালে গেল বল। পরের মিনিটে আবার! সেই যে শুরু, গোলের যেন আর শেষ নেই। শক্তি-সামর্থ্যে অনেক পিছিয়ে থাকা দলটিকে নিয়ে যেন ছেলেখেলায় মেতে উঠল ফ্রান্স। দুই অর্ধে গোল হলো ৭টি করে। নিজেদের ইতিহাসের তো বটেই, ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইয়ে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড গড়ল দিদিয়ে দেশমের দল। নিসে শনিবার রাতে ১৪-০ গোলে জিতেছে ফ্রান্স। এদিকে পঞ্চম মিনিটেই মিলল গোলের দেখা। কিন্তু তুরস্ককে চেপে ধরতে পারল না জার্মানি। নিজেদের মাঠে শেষ পর্যন্ত হেরেও গেল তারা! হতাশ জার্মানি কোচ ইউলিয়ান নাগেলসমানের মনে হচ্ছে, শুরুর ১০ মিনিটেই ম্যাচ শেষ করে দেওয়া উচিত ছিল তাদের, কিন্তু পারেনি তার দল। বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে শনিবার রাতের প্রীতি ম্যাচে তুরস্কের বিপক্ষে ৩-২ গোলে হেরে গেছে জার্মানি।
হ্যাটট্রিক করেছেন কিলিয়ান এমবাপে এবং জোড়া গোল উপহার দিয়েছেন অলিভিয়ে জিরু ও কিংসলে কোমান। একবার করে জালের দেখা পেয়েছেন মার্কাস থুরাম, ওয়ারেন জাইরে-এমেরি, জোনাথন ক্লাউস, ইউসুফ ফোফানা, আদ্রিওঁ রাবিও ও উসমান দেম্বেলে। অন্য গোলটি আত্মঘাতী। শুরুর দিকে ১০ জনের দলে পরিণত হওয়া জিব্রাল্টার একদমই প্রতিরোধ গড়তে পারেনি। অসহায় হয়ে যেন অপেক্ষায় ছিল, কখন ম্যাচ শেষ হয়।
ইউরো বাছাইয়ে আগের রেকর্ডটি ছিল জার্মানির, ২০০৬ সালে স্যান ম্যারিনোর বিপক্ষে ১৩-০ গোলে। বিশ্বকাপ বা ইউরার বাছাইপর্বে এই প্রথম কোনো ইউরোপিয়ান দল ১৪ গোল করল। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফ্রান্সের আগের রেকর্ড জয়টি এসেছিল ১৯৯৫ সালে, আজারবাইজানের বিপক্ষে ১০-০ গোলে। তৃতীয় মিনিটে সফরকারীদের ডিফেন্ডার সান্তোসের আত্মঘাতী গোল দিয়ে এই গোল উৎসবের শুরু। পরের মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন থুরাম। দলের রেকর্ডের ম্যাচে ষোড়শ মিনিটে জালে বল পাঠিয়ে ১৯১৪ সালের পর ফ্রান্সের সবচেয়ে কম বয়সি স্কোরার হওয়ার কীর্তি গড়েন জাইরে-এমেরি। পিএসজির ১৭ বছর বয়সি এই মিডফিল্ডার অবশ্য মাঠে নেমেই আরেকটি ইতিহাস গড়ে ফেলেন; ওই ১৯১৪ সালের পর থেকে তিনি এখন ফ্রান্সের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়ও।
তরুণ এই মিডফিল্ডারের সুখকর অভিষেক অবশ্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। দুই মিনিট পরই সান্তোসের ফাউলে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন জাইরে-এমেরি। আত্মঘাতী গোলের পর লাল কার্ড দেখে দলের বিপদ আরো বাড়ান সান্তোস। এমবাপে তার প্রথম গোলটি করেন ৩০তম মিনিটে, পেনাল্টি থেকে। পরের সাত মিনিটে স্কোরলাইনে নাম লেখান ক্লাউস, কোমান ও ফোফানা।দ্বিতীয়ার্ধে আরেকটি গোল করেন বায়ার্ন মিউনিখ ফরোয়ার্ড কোমান। এই গোলের আগে-পরে জালের দেখা পান রাবিও ও দেম্বেলে। ৭৪ ও ৮২ আরো দুবার লক্ষ্যভেদ করে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন এমবাপে। তার তৃতীয় গোলটি ছিল অসাধারণ; গোলরক্ষককে পোস্ট ছেড়ে আসতে দেখে ৪০ গজ দূর থেকে গোলটি করেন করেন পিএসজি তারকা। জাতীয় দলের হয়ে এমবাপের গোল হলো ৪৬টি, অঁতোয়ান গ্রিজমানকে ছাড়িয়ে তিনি ফ্রান্সের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় বসলেন তৃতীয় স্থানে। পাঁচ গোল বেশি নিয়ে দুইয়ে আছেন সাবেক ফরোয়ার্ড থিয়েরি অঁরি।
এদিকে আগামী বছর ইউরো আয়োজন করবে জার্মানি। স্বাগতিক হওয়ায় বাছাই খেলতে হচ্ছে না তাদের, তাই নিয়মিত প্রীতি ম্যাচ খেলে নিজেরে প্রস্তুত করছে তারা। গত সেপ্টেম্বরে ডাগআউটে দায়িত্ব নেওয়া নাগেলসমানের কোচিংয়ে এই প্রথম ঘরের মাঠে খেলতে নামে জার্মানি। কিন্তু দেশের জাতীয় দলের হয়ে নিজেদের আঙিনায় প্রথম ম্যাচটা একেবারেই সুখকর হলো না এই জার্মানের। তার আনন্দ মাটি করে দিয়েছে এরই মধ্যে ইউরোর বাছাই উৎরে যাওয়া তুরস্ক।
হান্স ফ্লিকের বিদায়ের পর দলের হাল ধরেই নাগেলমাস জিতেছিলেন অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে, অ্যাওয়ে ম্যাচে। এরপর মেক্সিকোর বিপক্ষে ড্রয়ের ধাক্কার পর এবার আশা জাগিয়েও তার সঙ্গী হারের বিষাদ। দলের ঘাটতিটুকু বুঝতে পারছেন ৩৬ বছর বয়সি এই কোচ। শুরুর ১০ মিনিটেই আমাদের উচিত ছিল ম্যাচটি শেষ করে দেওয়া। কিন্তু ২৫ মিনিট থেকে বিরতির পর্যন্ত আমরা খুব বেশি কিছু করতে পারিনি। ‘আমাদের একই পর্যায়ে খেলা চালিয়ে যেতে হবে, সব খেলোয়াড়কেই এটা করতে হবে।
"