ক্রীড়া ডেস্ক

  ১৯ নভেম্বর, ২০২৩

অঙ্কের হিসাব শেষ করতে চায় ভারত

মাঠের মূল ফটকের বাইরে শত শত মানুষের ভিড়। রাস্তার ধারে সারি দোকান সাজিয়ে বসেছে হকাররা। ভারতের জার্সি, পতাকা, ক্যাপ-হ্যাট বিক্রি হচ্ছে দেদার। মনে হচ্ছে যেন, ম্যাচেরই দিন। আদতে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ফাইনালের দুদিন আগের টুকরো টুকরো ছবি এসব। ভারতের নামে নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন অনেকে। মাঠে সচরাচর যে সব শোনা যায়, সে সব স্লোগান তো আছেই।

একজন গলা ফাটিয়ে চিৎকার করলেন, ‘বাদলা লেঙ্গে হাম।’ একটু কৌতূহলি হতেই হলো, কিসের বদলা নিতে চান তিনি! কাছে গিয়ে জানা গেল, তার নাম হানিশ চকসি। কেন তার প্রতিশোধের রক্ত টগবগ করে ফুটছে, সেটিও শোনালেন স্থানীয় এ ব্যবসায়ী।

‘২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে আমরা অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছিলাম। তখন আমি স্কুলের ছাত্র ছিলাম, আবেগ ছিল অন্যরকম। ফাইনালে হারার পর আমি কেঁদেছিলাম। এবার আমরা ফাইনালে ওঠার পরই খুব করে চাচ্ছিলাম যেন অস্ট্রেলিয়াকে পাই। এবার আমরা ওদের উচিত শিক্ষা দেব।’ ২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল সৌরভ গাঙ্গুলি, শচীন টেন্ডুলকার, ভিরেন্দার শেবাগদের ভারত। যথারীতি প্রত্যাশা ছিল তাদের উত্তুঙ্গ। কিন্তু জোহানেসবার্গে রিকি পন্টিংয়ের দলের অসাধারণ ক্রিকেট আর চেনা পেশাদারিত্বে পিষ্ট হয়েছিল ভারতীয়দের স্বপ্ন।

সেই বিশ্বকাপের পর পেরিয়ে গেছে ২০ বছর। ২০১১ সালে নিজেদের মাঠে বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত। এছাড়াও জিতেছে টি-টোয়েন্ট বিশ্বকাপ, জিতেছে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। তারপরও ২০ বছর আগের হৃদয়ের ক্ষত এখনো দগদগে। শৈশবের আবেগ বলে কথা!

আবেগের আরো নানা রূপ দেখা গেল নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের চারপাশে। জাইমিনি দোশি নামের একজন যেমন বললেন, ‘আমাদের শহরে বিশ্বকাপ ফাইনাল, আমাদেরকে জিততেই হবে। জিতে উৎসব করব আমরা।’ তার পাশেই থাকা জিগনা গাজ্জার অবশ্য সীমানা একটু বাড়িয়ে দিলেন, ‘না না, আমাদের শহর বলেই নয়। ফাইনাল তো যে কোনো জায়গায় হতে পারত। তবে আমাদের দেশের বিশ্বকাপ, আমরা জিতব। ট্রফি কেন নিয়ে যেতে দেব!’ মাঠের সামনে থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে জার্সি কিনছিল এক কিশোর। ভিরাট কোহলির বেশ কয়েকটি জার্সি দেখার পর একটি মাপমতো হলো তার। মুখে চওড়া হাসি নিয়ে সে বলল, ‘ভিরাট ভাইয়া আমাদের চ্যাম্পিয়ন করাবে..।’

আবেগের উতাল-পাথাল ঢেউ এমনই। ভিরাট কোহলি কিংবা রোহিত শর্মা, ভারতীয় ক্রিকেটের গত এক যুগের মহীরূহ যারা, তারাই বিশ্বকাপ জেতাবেন বা তাদের জন্যই জিততে হবে, এরকম চাওয়া ভারতজুড়ে কোটি কোটি মানুষেরই।

নিজেদের শেষ বিশ্বকাপ স্মরণীয় করে রাখার সব আয়োজনই করেছেন এ দুজন। অসাধারণ ধারাবাহিকতায় রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে চলেছেন কোহলি। ক্যারিয়ারের এ পর্যায়ে এসে নিজেকে ভেঙে নতুন ঘরানায় গড়ে ম্যাচের পর ম্যাচ দলকে বিধ্বংসী শুরু এনে দিচ্ছেন রোহিত। সবকিছুর পূর্ণতা পাবে, যদি শেষ কাজটুকু সফলভাবে করত পারেন দুজন।

সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আহমেদাবাদে এসেই প্রত্যাশার ছবিটা দেখতে পেরেছেন রোহিত-কোহলিরা। বিমানবন্দরের বাইরে প্রচুর মানুষ ছিল দলকে স্বাগত জানাতে। ফাইনালের শহরে তাদেরকে বরণ করে নিতেও ছিল নানা আয়োজন।

এ উচ্ছ্বাসের এখন সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ছোঁয়ার অপেক্ষা। এ আনন্দের পূর্ণতা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। ফাইনাল ম্যাচের আগে সমাপনী যে আয়োজন হবে, সে সবের মহড়া দেখা গেল শুক্রবার মাঠে। এয়ার প্যারেড শোর মহড়াও হলো চারপাশ কাঁপিয়ে, আরো অনেক আয়োজন থাকবে। তবে স্থানীয়দের কাছে সবই শেষ পর্যন্ত ম্লান হয়ে যাবে স্বাগতিক দল না জিতলে। শুক্রবার দুপুরে অনুশীলনে আসার সময়ও মাঠের বাইরে লোকের ভীড় ভারতীয় ক্রিকেটারদের চোখে পড়ারই কথা।

এ দিন অনুশীলনে অবশ্য সব ক্রিকেটার আসেননি। ঐচ্ছিক অনুশীলন ছিল ভারতের। মাঠে কিছুটা ফিল্ডিং অনুশীলন করার পর তারা চলে যান ইনডোরে। সেখানে সংবাদমাধ্যমের প্রবেশাধিকার ছিল না।

আগের দিন স্নায়ুক্ষয়ী সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে শুক্রবার কলকাতা থেকে আহমেদাবাদে এসেছে অস্ট্রেলিয়া দল। শনিবার দুদলই ঝালিয়ে নেবে নিজেদের এ বিশ্বকাপে শেষবারের মতো।

বিশ্বকাপের নকআউট ম্যাচে এ মাঠেই অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর সুখস্মৃতি আছে ভারতের। ২০১১ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে রিকি পন্টিংয়ের সেঞ্চুরি পরও পারেনি সে সময়ের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। টেন্ডুলকার ও গৌতাম গাম্ভিরের ফিফটি এবং যুবরাজ সিংয়ের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ৫ উইকেটের জয়ে সেমিতে উঠেছিল মাহেন্দ্র সিং ধোনির দল।

সেই ম্যাচে খেলা কোহলি ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন আছেন এবারের দলেও। তবে এটি তো স্রেফ একটি নকআউট ম্যাচই নয়, এটি আসরের সবচেয়ে বড় ম্যাচ। ট্রফির ফয়সালার ম্যাচ। ২০ বছর আগের ফাইনালই তাই ঘুরে ফিরে আসছে নানাজনের আলোচনায়। ভারতীয় এক পত্রিকা যেমন শুক্রবার শিরোনাম করেছে, ‘বিশ সাল বাদ আহমেদাবাদ।’ মানে ২০ বছর পর আহমেদাবাদ। প্রতিশোধের প্রত্যাশা মিটবে নাকি আহমেদাবাদেও ফিরে আসবে জোহানেসবার্গ? উত্তর মিলবে দ্রুতই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close