ক্রীড়া প্রতিবেদক
বিশ্বকাপ ফাইনাল
ভারতকে স্তব্ধ করতে চান কামিন্সরা

এবারের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালে জায়গা করে নেওয়া দুই দলের একটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে দাপট শব্দটি। বড় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া সব ম্যাচ জিতে ফাইনালে পা রেখেছে রোহিত শর্মার দল। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক প্যাট কামিন্সও ভারতের দাপটের কথা অকপটে স্বীকার করছেন। কিন্তু কামিন্সের অস্ট্রেলিয়াও তো ফাইনালে পা রেখেছে টানা আট জয় নিয়ে। যদিও কামিন্স বলছেন, এখনো নিজেদের সেরাটা দিতে পারেননি তারা।
সমুদ্রের সামনে দাঁড়ালে যেমন নিজেকে খুব ক্ষুদ্র মনে হয়, নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের ভেতরে ঢুকলেও ঠিক একইরকম। যদিও স্টেডিয়াম একটি বদ্ধ স্থাপনা। তারপরও এটা এতটাই বিশাল, গ্যালারির যেকোনো জায়গায় দাঁড়ালে অসীমের মাঝে এক ধরনের ক্ষুদ্রতার অনুভূতি হয়। এ গ্যালারিই আজ রবিবার ঠাসা থাকবে দর্শকে। আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে, ভারতীয় সমর্থকে। বিশ্বকাপের ফাইনালে মাঠের ১১ জনের ছাড়াও যারা হবেন অস্ট্রেলিয়ার বড় প্রতিপক্ষ।
তবে সেই চ্যালেঞ্জকে আলিঙ্গনই করছেন প্যাট কামিন্স। ২২ গজের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে গ্যালারির লাখো দর্শককে মিইয়ে দেওয়ার যে মজা, সেই তাড়নাকেই নিজেদের জন্য প্রেরণা মানছেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দর্শক ধারণক্ষমতার এ স্টেডিয়ামে একসঙ্গে বসে খেলা দেখতে পারেন ১ লাখ ৩২ হাজার দর্শক। আগের স্থাপনা ভেঙে সংস্কার করে ২০২১ সালে নতুন যাত্রা শুরুর পর আসন সংখ্যা বেড়ে এ উচ্চতায় পৌঁছে যায়। যদিও এখন পর্যন্ত গ্যালারি পুরোপুরি ভরেনি কোনো ম্যাচে। তবে যতটুকু হয়েছে, তাতেই রেকর্ডে দুই দফায় নাম উঠে গেছে এ মাঠের। ২০২২ সালে আইপিএলের ফাইনালে এ মাঠে মুখোমুখি হয়েছিল রাজস্থান রয়্যালস ও ঘরের দল গুজরাট টাইটান্স। গুজরাটের শিরোপা জয়ের সেই ম্যাচে মাঠে ছিলেন ১ লাখ ১ হাজার ৫৫৬ দর্শক। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সবচেয়ে বেশি দর্শক উপস্থিতির টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হিসেবে তা জায়গা পেয়ে গেছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকডর্সে।
গত মার্চেই আরেক দফায় রেকর্ড বইয়ে উঠে যায় এ স্টেডিয়ামের নাম। ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্টের প্রথম দিনে মাঠে ছিলেন ১ লাখ দর্শক। ২০১৩ অ্যাশেজে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বক্সিং ডেতে ৯১ হাজার ৯২ দর্শক ছিল আন্তর্জাতিক ম্যাচে আগের রেকর্ড। এবার গ্যালারি পুরোপুরি ভরে উঠবে বলেই আশা করছেন আয়োজকরা। মাঠের চারপাশে টিকিটের জন্য হাহাকার চোখে পড়ছে। কয়েকগুণ বেশি মূল্যে টিকিট কিনতেও রাজি অনেকে, কিন্তু টিকিট এখন সোনার হরিণ। শেষ পর্যন্ত গ্যালারি যদি পুরোপুরি ভরে নাও ওঠে, তারপরও যে দশক থাকবে, তা সব খেলার সব রেকর্ড ছাড়িয়ে নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়বে বলে অনেকটাই নিশ্চিত ধরে নেওয়া যায়। সেই দর্শকরা কেন মাঠে আসবেন, তা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না! রোহিত, ভিরাট কোহলিদের বিশ্বজয়ের সাক্ষী হতে চান সবাই। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ানদের কাজ কঠিন করে তোলার চেষ্টায় কোনো কমতি তারা রাখবেন না নিশ্চিতভাবেই।
সম্ভাব্য ১ লাখ ৩২ হাজার দর্শকের মধ্যে কতজন অস্ট্রেলিয়ান সমর্থক থাকতে পারে? ফাইনালের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের অনুমান, সংখ্যাটা বড়জোর হতে পারে হাজার দুয়েক। ‘আমরা জানি, গ্যালারি একদম ঠাসা থাকবে। ১ লাখ ৩০ হাজার দর্শক ভারতকেই সমর্থন করবেন। ব্যাপারটা দারুণ। তারা এ টুর্নামেন্টে অসাধারণ খেলছে, এখনো অপরাজিত। তবে আমরা জানি, নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে আমরা ওদের ভালোই নাড়িয়ে দিতে পারব। গত কয়েক বছরে ওদের সঙ্গে আমরা নিয়মিতই খেলেছি এবং সাফল্য পেয়েছি। সব মিলিয়েই দারুণ একটি ফাইনালের আবহ গড়ে উঠছে।’ কিন্তু সেই আবহ তো অস্ট্রেলিয়ার জন্য থাকবে বিরুদ্ধ। কন্ডিশন ও উইকেটের চ্যালেঞ্জ থাকবে তো বটেই, দর্শকরাও অস্ট্রেলিয়ানদের নুইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন আর উজ্জীবিত করবেন ভারতীয় দলকে। তবে সম্ভাব্য এ চ্যালেঞ্জে ভড়কে যাচ্ছেন না কামিন্স। বরং এটিকে তিনি সাদরে গ্রহণ করেই জবাব দিতে চান মাঠের ক্রিকেটে। ‘আমার মনে হয়, এটাকে (দর্শকের চ্যালেঞ্জ) আলিঙ্গন করেই নিতে হবে। দর্শক সমর্থন অবশ্যই ভীষণরকমের একতরফা থাকবে। বিশালসংখ্যক দর্শককে চুপ করিয়ে দিতে পারার চেয়ে তৃপ্তিদায়ক কিছু খেলাধুলায় আর নেই। আগামীকাল (রবিবার) এটিই আমাদের লক্ষ্য।’
‘এ চ্যালেঞ্জের সবটুকু, ফাইনালের সব অংশই আসলে আলিঙ্গন করেই নিতে হবে। জানি, ফাইনাল ঘিরে অনেক কোলাহল থাকবে, লোকের অনেক কৌতূহল। তবে আমাদের কোনোভাবেই তাতে ভেসে গেলে চলবে না। মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে, (চ্যালেঞ্জ) ভালোবাসতে হবে এবং এটা মনে রাখতে হবে, যা কিছুই হোক, সব ঠিক আছে। কিন্তু দিনটা আমাদের শেষ করতে হবে কোনো আক্ষেপ না রেখে।’ দর্শকের চ্যালেঞ্জ সামলানোর কোনো দলীয় কৌশল তাদের নেই। সবাই নিজেদের মতো করেই চাপটাকে দূরে রাখেন বলে জানান অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক। ‘আমরা ভারতে প্রচুর ম্যাচ খেলেছি। দর্শকের গর্জন তাই নতুন কিছু নয়। হ্যাঁ, এবারের মাত্রা হয়তো আগের যেকোনোবারের চেয়ে বেশি থাকবে। তবে এটা আমাদের জন্য একেবারে অজানা নয়।’
"