ক্রীড়া প্রতিবেদক
ফাইনালে উঠে হুংকার অজিদের

আবারও আরেকটি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে পাঁচবারের শিরোপাজয়ী অস্ট্রেলিয়া দল। দলকে ফাইনালে ওঠাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন দলটির পেসাররা। ফাইনালেও নিজেদের সেরাটা দিতে মুখিয়ে থাকবেন অস্ট্রেলিয়ার পেসাররা। এ কারণে যেকোনো উইকেটে দ্রুত মানিয়ে নিতে চান তারা। এবারের বিশ্বকাপে দারুণ ছন্দে আছে অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। আসরে ১০ ম্যাচে ২২ উইকেট নিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে এবারের আসরে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি এই স্পিনার। তার আগে আছেন মোহাম্মদ শামি।
সেমিফাইনালে সাত উইকেট নেওয়াসহ ভারতের এই পেসার ছয় ম্যাচে নিয়েছেন ২৩টি উইকেট। বিশ্বকাপের সেরা ১০ উইকেটশিকারি বোলারের তালিকায় আরো দুই ভারতীয় থাকলেও নেই কোনো অস্ট্রেলিয়ান বোলার। যদিও সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে সেমিফাইনাল ম্যাচে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন অজি পেসাররা। মিচেল স্টার্ক এবং প্যাট কামিন্স নিয়েছেন তিনটি করে উইকেট। দুটি উইকেট নিয়েছেন হ্যাজেলউড। ফাইনালের আগমুহূর্তে এমন পারফরম্যান্স আত্মবিশ্বাস যোগাচ্ছে অজিদের মনে। আহমেদাবাদে অনুষ্ঠেয় ফাইনালে যেকোনো উইকেটে নিজেদের এমন পারফরম্যান্স বজায় রাখতে চান তারা।
দলটির পেসার হ্যাজেলউড বলেন, ‘আমরা বেশ কিছু ম্যাচ একসঙ্গে খেলে ফেলেছি। ভারতের ক্ষেত্রেও আমরা সেটাই দেখেছি। আমাদের বিপক্ষে ম্যাচটি ছাড়া তিন পেসার নিয়ে তারা বেশ কিছু ম্যাচ খেলেছে এবং তারা সবাই অসাধারণ পারফর্ম করেছে।’ তাই আমরা জানি কীভাবে এটা (উইকেটে মানিয়ে নেওয়া) করতে হবে। আমরা তাদের এটা করতে দেখেছি এবং আমরা লম্বা সময় ধরে এখানে আছি। তাই আমরা জানি এসব উইকেটে কীভাবে বোলিং করে যেতে হয়।’
এদিকে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে আরো একবার পরাজিত হওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ রব ওয়াল্টার দাবি করেছেন, উত্তেজনাপূর্ণ ওই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৩ উইকেটের ওই পরাজয়ে প্রোটিয়াদের ‘চোকারিত্বের প্রমাণ মেলেনি।’ এমনকি এটি চোকের কাছাকাছিও যায়নি বলে দাবি করেছেন প্রোটিয়া কোচ।
কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ২৪ রানে চার উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে ডেভিড মিলারের ১০১ রানে ভর করে অলআউট হওয়ার আগে ২১২ রান যোগ করে প্রোটিয়ারা। ওই সামান্য পুঁজিকে ভর করেই অজিদের সঙ্গে তীব্র লড়াই করেছে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা। এক পর্যায়ে ১৩৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে সংকটের মধ্যে পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। যদিও শেষ পর্যন্ত ১৬ বল হাতে রেখেই জয়ের লক্ষ্য পূরণ করে প্যাট কামিন্সের দল।
এটি ছিল বিশ্বকাপ ইতিহাসে সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার পঞ্চম পরাজয়। তন্মধ্যে ১৯৯৯ ও ২০০৭ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এটি ছিল তাদের তৃতীয় হার। ওয়াল্টার বলেন, ‘চোকের সংজ্ঞা কি, তা আপনার জানা উচিৎ। আমার মতে, তাদেরকেই চোক বলে যারা জয়ের পর্যায়ে থেকেও ম্যাচে হেরে যায়। কিন্তু আখানে আমরা পিছিয়েই ছিলাম, আসলে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেরার জন্য লড়াই করেছি এবং একটি সম্মানজনক স্কোর গড়েছি, যার মাধ্যমে কিছুটা লড়াইয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’
তিনি যোগ করেন, ‘পরে তারা কিছুটা ছন্দ হারিয়েছিল, আর আমরা লড়াই করে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিজেদের ফিরিয়ে নিয়েছি। সুতরাং এখানে চোক বা চোকারিত্বের কোনো নামণ্ডগন্ধও ছিল না। দুটি ভালো দলের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে।’ ‘চোকার’ শব্দটি দক্ষিণ আফ্রিকা দলের সঙ্গে স্থায়ীভাবে লেপ্টে আছে। সামর্থ্যবান দল হওয়ার পরও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দলটির আত্মসমর্পণের কারণেই এমন খেতাব লাভ করেছে প্রোটিয়ারা। ১৯৯৯ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও এই অস্ট্রেলিয়ার কাছে তারা হেরে গিয়েছিল শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তায়। অথচ শেষ চার বল থেকে জয়ের জন্য তাদের প্রয়োজন ছিল মাত্র এক রান। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক রানআউটে পরাজিত হয়েছিল প্রোটিয়ারা।
চার বছর পর বৃষ্টি আইনের নিয়ম সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞানের অভাবে হার মেনেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেছিল তারা। শেষ বলে ছক্কা হাকিয়ে ম্যাচটি জিতে যায় কিউইরা। এবারের বিশ্বকাপ আসরের গ্রুপপর্বের অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৯ ম্যাচের সাতটিতেই জয় পেয়েছে তারা। দলীয় অধিনায়ক তেম্বা বাভুমার প্রশংসা করে প্রোটিয়া কোচ ওয়াল্টার বলেন, তিনি বাভুমাকে নিয়ে গর্বিত। যদিও ইনজুরি আক্রান্ত অধিনায়ক দলকে বিশ্বকাপের ব্যর্থতা থেকে মুক্তি দিতে পারেনি। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে ১০০ শতাংশ ফিট না হওয়া সত্ত্বেও বাভুমা (সেমিফাইনাল) ম্যাচটি খেলেন এবং চতুর্থ বলে শূন্য রানে আউট হন। অসুস্থতার কারণে ওপেনিং ব্যাটসম্যান বাভুমা বিশ্বকাপের দুটি ম্যাচে অংশ নিতে পারেননি। আসরে বাকি আট ম্যাচে তিনি করেছেন মাত্র ১৪৫, যেখানে তার সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল ৩৫ রান।
প্রোটিয়া অধিনায়ক প্রসঙ্গে ওয়াল্টার বলেন, ‘আমি তাকে শুধু এটুকুই বলেতে পারি, তাকে নিয়ে আমি গর্বিত।’
"