আবু সুফিয়ান
হাথুরুতে বাংলাদেশের স্বপ্নবন্দি
বিসিবি চলে কার প্রেসক্রিপশনে- এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে অফলাইন-অনলাইনে। তামিম ইস্যুতে নেটদুনিয়া তুলপাড়। যেখানে তামিম ইকবালের অবসরের নাটকের পর এবার শুরু হলো তাকে বিশ্বকাপে না রাখার কারণে। কোন যুক্তিতে থাকে দলে রাখা হলো না, তার সঠিক উত্তর বিসিবি জানা আছে কি? যেখানে তামিম তার যোগ্যতার প্রমাণ চলতি সিরিজে ৪৪ রান করে দিয়েছেন। তামিমকে নতুন করে প্রমাণ করা প্রয়োজন আছে কি? কারণ তার বিকল্প কি বিসিবি এখনো তৈরি করতে পেরেছে। যেখানে হাথুরুসিংহে দায়িত্বে নেওয়ার আগে বাংলাদেশ দল একটা ধারাবাহিক দল হিসেবে পরিচিতি লাভ করার পথে হাঁটছিল। তার দায়িত্বে নেওয়ার পড়ে শুরু বাংলাদেশের পতন। এশিয়া কাপে আগে ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের কাছে সিরিজি হার এবং এশিয়া কাপে বড় স্বপ্ন দেখিয়ে সেখানে ফ্লপ। চলতি নিউজিল্যান্ড সিরিজেও বাংলাদেশের ভরাডুবি। তারপর কোন যোগ্যতায় তিনি বাংলাদেশের দায়িত্বে। যেখানে তার পারফরম্যান্স নিয়ে কথা হওয়ার কথা বা তার চাকরি থাকবে কিনা, তা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। কিন্তু হায় এ কি, বিসিবি নিয়ে তিনি মেতেছেন উল্টো খেলায়। যেটা ভালোভাবে নেননি ক্রিকেটভক্তরা।
তামিমকে বাদ দেওয়ার পেছনে রয়েছে কোচ হাথুরু আর বর্তমান অধিনায়কের হাত। হাথুরুসিংহে দ্বিতীয় মেয়াদে আসার পর থেকেই এলোমেলো বাংলার ক্রিকেট! তামিমকে ছাড়া আপনি বিশ্বকাপ জয় করতে চলেছেন। অবশ্য নিজেই বলেছেন বিশ্বজয়ের স্বপ্ন না দেখতে, কী আজব কথাবার্তা! একটা দলের হেড কোচ বলছেন বিশ্বজয়ের স্বপ্ন না দেখতে, আপনাকে লাখ লাখ টাকা বেতন দেওয়া হয় কীসের জন্য? বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখতে বারণ করার জন্য? আপনার তো বিশ্ব জয়ের স্বপ্নই নেই, তাহলে বিশ্বকাপ কেন খেলতে যাচ্ছেন? এভাবে হাথুরুতে আর কতকাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বন্দি থাকবে।
এদিকে গত মঙ্গলবার বিশ্বকাপ দল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে যতগুলো প্রশ্ন হলো দু-একটি ছাড়া তার সবই তামিম ইকবালকে নিয়ে। গোলাপি রঙের ব্লেজার পরে ড্রেসিংরুম থেকে সংবাদ সম্মেলন কক্ষে হাঁটা ধরলেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, তার পাশে আরো দুই নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন আর আব্দুর রাজ্জাক। চেনা সাংবাদিকদের দেখে কিছুটা হালকা হওয়ার চেষ্টা করলেও তার চেহারায় টের পাওয়া যায় থমথমে ভাব। খানিক পরের প্রশ্নের স্রোত সামলানোর প্রস্তুতি হয়তো নিচ্ছিলেন মনে মনে।
অবশ্য নির্বাচকদের দায় দেওয়াটা হয়তো অন্যায়ই হবে। যে সিদ্ধান্ত আপনি নেবেন না, তার উত্তর দিতে গেলে অস্বস্তি বোধ করারই কথা। তামিমকে নিয়ে আড়াই মাস ধরে চলতে থাকে নাটকীয়তা। কোনো পক্ষ থেকেই আসেনি পরিষ্কার বার্তা। বিসিবি থেকে যেমন রাখা হয়েছে অস্পষ্টতা। তামিম নিজেও ভেতরের সব কথা না বলে রেখেছেন রহস্য। ধোঁয়াশাময় পরিস্থিতিতে তাই ডানা মেলতে থাকে বিতর্ক। তামিমের বাদ পড়ার মধ্য দিয়ে সেই বিতর্ক থামল কি না- এখনো বলার উপায় নেই।
গত জুলাই মাসে আফগানিস্তান সিরিজের সময় নাটকীয়ভাবে অবসর নেওয়ার পর তামিমকে ফেরানো হয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে। এরপর তার চোট নিয়েই ছিল যত আলাপ। চোট সামলে খেলা চালিয়ে যাওয়ার কথা শোনা যাচ্ছিল বিসিবির বিভিন্ন পর্যায় থেকে। ফিট থাকলে তামিমের বিশ্বকাপ যাওয়া নিয়ে কোনো সংশয় কখনো বলা হয়নি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ব্যাট করে ৪৪ রান করার পর মনে হচ্ছিল তিনি নিশ্চিতভাবেই থাকছেন বিশ্বকাপে। কিন্তু এরপরই বদলাতে থাকে পরিস্থিতি। ম্যাচ খেলার পর অস্বস্তি বাড়ায় তৃতীয় ওয়ানডে থেকে বিশ্রাম চান তামিম। প্রধান নির্বাচক জানালেন, সেই বিশ্রাম চাওয়ার পরই তারা বুঝে যান তামিম খেলা চালিয়ে যাওয়ার অবস্থায় নেই। মিনহাজুল জানান, তখনই তারা সিদ্ধান্তের কাছে চলে যান, বৃষ্টির জন্য প্রথম ম্যাচটা ভেসে গেছে, দ্বিতীয় ম্যাচটি পুরোপুরি খেলেছে এরপরের ম্যাচে তৃতীয় ম্যাচে খেলতে পারেনি। তখন মেডিকেল দলের সঙ্গে আমরা সবাই আলোচনা করেছি, সেখান থেকে আপডেট পেয়েছি। তারপরই তো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই জিনিস ক্লিয়ার করছি, এ কারণেই আমরা ওকে স্কোয়াডে রাখিনি।
তামিমের স্কোয়াডে না থাকা নিয়ে খবরটা অবশ্য ভিন্নই পাওয়া যায় দিনভর। আগের রাতে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে দেখা করে কঠিন শর্ত দিয়ে দেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তামিমের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি নাকি বলেন, হাফ ফিট কোন খেলোয়াড়কে দলে নিলে অধিনায়কত্ব করবেন না। এতেই অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যায় কী হতে যাচ্ছে। সাকিবের মতো একই অবস্থান দেখান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেও। তবে এই দুজনের ইচ্ছাতেই তামিমকে বাদ দেওয়া হয়েছে কি না তা স্বীকার-অস্বীকার করার কোনো দিকেই গেলেন না প্রধান নির্বাচক, ‘আমাদের ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কী আলোচনা হয় সেটা তো এখানে খোলাসা করতে পারব না। আমাদের মধ্যে কী আলোচনা হয়, সেটা তো বলতে পারব না।’
"