ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ২৮ মে, ২০২৩

বাফুফের উদাসীনতার ভার নেবে কে

হঠাৎ করেই অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন সাফজয়ী নারী ফুটবলার সিরাত জাহান স্বপ্না। বিস্ময়কর এ খবরের রেশ কাটতে না কাটতেই বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক ও সিনিয়র পর্যায়ের জাতীয় নারী দলগুলোর কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন জানিয়েছেন দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। তবে একদিন পেরিয়ে গেলেও তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়নি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের। গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, এর চেয়ে বেশি কিছু জানা নেই তার। বাফুফের বড় কর্তার এই উদাসীনতার ভার নেবে কে? এই প্রশ্নের উত্তর জানা নেই কারোরই!

গত বছরের সেপ্টেম্বরে নেপালের মাটিতে ছোটনের অধীনে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল। স্বাগতিকদের হারিয়ে প্রথমবারের মতো সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। কিন্তু ভীষণ সুখের সেই সময় এখন যেন সুদূর অতীতে পরিণত হয়েছে, দলকে চ্যাম্পিয়ন করার ৮ মাস পর কোচের পদ ছেড়ে দিতে চান ছোটন। শুক্রবার গণমাধ্যমের কাছে ছোটন এই সিদ্ধান্ত জানানোর আগে হঠাৎ করে সব ধরনের ফুটবলকে বিদায় জানান স্বপ্না। এই বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন তিনি। অথচ ২২ বছর বয়সি স্ট্রাইকারের পেশাদার ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটাই সামনে পড়ে আছে। সাফে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে বড় অবদান ছিল তার। যৌথভাবে আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪ গোল করেছিলেন তিনি। স্বপ্নার আগে একই কায়দায় ক্যারিয়ারের ইতি টানেন আনুচিং মোগিনি ও সাজেদা খাতুন।

সব মিলিয়ে দুঃসময় পার করছে বাংলাদেশের নারী ফুটবল। তবে ভক্ত-সমর্থকদের আশ্বস্ত করার মতো কোনো বার্তা এখনই দিতে পারছেন না সালাউদ্দিন। স্বপ্নার অবসর ও ছোটনের কোচের পদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে শনিবার বাংলাদেশের এক গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আমি কেবল মিডিয়ার কাছ থেকে তাদের (ছোটন ও স্বপ্না) ব্যাপারে শুনেছি। আমি অফিসিয়াল কোনো চিঠি বা অফিসিয়ালি কিছু এখনো পাইনি। বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলে আপনাদের জানাব। বেতন-ভাতা বাড়ানোর আবেদন অনেক দিন ধরেই করে আসছেন বাফুফের তত্ত্বাবধানে থাকা নারী ফুটবলাররা। এই প্রসঙ্গে গত ফেব্রুয়ারিতে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সালাউদ্দিন জানিয়েছিলেন, যে তাদের দাবিগুলো যৌক্তিক। কিন্তু প্রত্যাশিত অগ্রগতি না হওয়ায় বাফুফে প্রধানের আশ্বাসের আগে-পরে দুই দফা অনুশীলন বর্জনের মতো কঠোর সিদ্ধান্তও নেন খেলোয়াড়রা। সালাউদ্দিনের দেওয়া আশ্বাসের তিন মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো নারী ফুটবলারদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত জানা যায়নি। দেশের সর্বোচ্চ ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ কর্তা অবশ্য ফের আশার বাণী শোনান, ‘এই বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। কয়েক দিনের ভেতরে আপনাদের জানিয়ে দেব।’

এদিকে মেয়েরা কেন ফুটবল খেলবে? তাদের জন্য এখানে কিছু আছে? সিরাত জাহান স্বপ্নার আকস্মিক অবসর নিয়ে এমন প্রতিক্রিয়া দিলেন সাফ জয়ী নারী দলের আরেক সদস্য সাজেদা খাতুন। শুক্রবার মাত্র ২২ বছর বয়সে ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন সাফ জয়ী দলের ফরোয়ার্ড স্বপ্না। কাউকে অভিযোগ না জানালেও তার এভাবে ফুটবল ছেড়ে দেওয়া বাংলাদেশের ফুটবলে তৈরি করেছে নতুন বিতর্ক। এর আগে ক্যাম্প থেকে বাদ পড়ার পর খেলে ছেড়ে দেন আনুচিং মগিনি আর সাজেদা। স্বপ্নার অবসরে সাফজয়ী দলের তিনজন ফুটবলার অসময়ে ছেড়ে দিলেন ফুটবল। স্বপ্নার অবসরের দিন নারী ফুটবলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনও দেন পদত্যাগের খবর।

সাফ চ্যাম্পিয়ন হলেও নারী ফুটবলারদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দিতে পারেনি বাফুফে, মাঠে আনতে পারেনি খেলা। সুযোগ-সুবিধার অপ্রতুলতা আর আগামী নিয়ে অনিশ্চয়তায় ঘিরে ধরেছে ফুটবলারদের। বাংলাদেশের এক গণমাধ্যমে আলাপকালে সাজেদা ক্ষোভের স্বরে বলেন, বাংলাদেশে নারী ফুটবল নিয়ে আর কোনো আশা নেই, ‘আমাদের দেশে নারী ফুটবলের কিছু আছে? আমি জিজ্ঞেস করতে চাই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) নারী ফুটবলারদের কিছু দিয়েছে। একটু অপেক্ষা করেন আরো অনেক মেয়েরা খেলা ছেড়ে দেবে। এখানে কোনো আশা নাই।’

সাফ জিতে আসার পর বিপুল সংবর্ধনা পান নারী ফুটবলাররা। বিভিন্ন জায়গা থেকে পান পুরস্কারের ঘোষণা। অন্য অনেকে পুরস্কৃত করলেও বাফুফে থেকে অবহেলা পাওয়ার কথা জানান তিনি, ‘ফেডারেশন কিছু দিছে নাকি? ঢাকা ব্যাংক দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের অনেক কিছু দিছেন। কিন্তু ফেডারেশন তো কিছু দেয়নি।’ সাফ চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের সুযোগ থাকার পরও অর্থের অভাব দেখিয়ে অলিম্পিক বাছাই পর্বে খেলতে পাঠায়নি বাফুফে। মেয়েদের নিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ফুটবলের ঘরোয়া আসর আয়োজনের কথা বলা হলেও তা নিয়েও তৈরি হয়েছে সংশয়। মাঠে খেলা না থাকলে মেয়েরা কি করবে, প্রশ্ন সাজেদার, ‘আমরা কেন ফুটবল খেলি, সারা জীবন শুধু ক্যাম্পই করব? সাফ জেতার পর ফুটবলারদের জন্য কিছুই আয়োজন করা হয়নি। আছি আমরা ফুটবলের জন্য, সেই ফুটবল খেলাই তো হয় না। অলিম্পিক বাছাই পর্বে খেলার সুযোগ ছিল। ফেডারেশনের অবহেলায় সেটাও হয়নি। তাদের জিজ্ঞেস করে দেখেন খালি এই সমস্যা, ওই সমস্যা বলবে। তাহলে কেন মেয়েরা আগামীতে ফুটবল খেলবে?’

‘আমি সাত-আট বছর ধরে ফুটবল খেলেছি। অনেক সাফল্যের সঙ্গী ছিলাম। আমি কেমন আমি জানি না, আপনারা বলতে পারবেন। কিন্তু এই যে স্বপ্না আপা চলে গেছে, দ্বিতীয় আরেকটা স্বপ্না আসবে না।’ মেয়েদের ফুটবলের অর্জন হলে সেটা মেয়েদের কঠোর পরিশ্রমেই হয়েছে।’ স্বপ্নার অবসরের দিন বিদায়ের কথা জানান কোচ ছোটন। সবাইকে আগলে রাখা এই কোচের জন্যও হাহাকার ঝরছে সাজেদার। এটা খুব দুঃখজনক স্যার চলে যাচ্ছেন। তার মতো আরেকজন মানুষ পাবেন না।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close