ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ২৪ মার্চ, ২০২৩

পেসারদের ইতিহাসে ‘লাকি থার্টিন’ হাসান

হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদ এবং ইবাদত হোসেনের অসাধারণ পেস বোলিংয়ে মাত্র ১০১ রানেই গুটিয়ে গেল আয়ারল্যান্ড। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এদিন অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন হাসান-তাসকিন-ইবাদতরা। তিনজনই প্রথক তিনটি ওভারে আইরিশ শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন। আইরিশদের হয়ে কেবল কার্টিস ক্যাম্ফারই একটু লড়াই করতে পেরেছেন। বাংলাদেশের হয়ে ১০টি উইকেটই নিয়েছেন পেসাররা। লাল-সবুজের ওয়ানডে ইতিহাসে এবারই প্রথমবার এমন ঘটনা ঘটেছে। আট ওয়ানডের ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৫ উইকেট শিকারের স্বাদ নিলেন হাসান মাহমুদ। ৫০ ওভারের ক্রিকেটের ইতিহাসে ৫ উইকেট নেওয়া বাংলাদেশের ১৩তম বোলার তিনি। যদিও ১৩ সংখ্যাটি ‘আনলাকি’ বা ‘অপয়া’ হিসেবে বিবেচিত, এক্ষেত্রে এই তরুণ পেসার তার অর্জন দিয়ে হয়ে গেলেন ১৩তম ‘সৌভাগ্যবান’ বা ‘লাকি থার্টিন’।

বাংলাদেশের পেসারদের মধ্যে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট নিয়েছেন হাসান। ৮.১ ওভারে ৩২ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়েছেন হাসান। ২৬ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন তাসকিন। আর অবশিষ্ট ২ উইকেট নেন ইবাদত, ২৯ রান খরচায়। নাসুম আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজরা ৪ ওভার করলেও উইকেট শূন্য ছিলেন। এই ম্যাচে বোলিংই করেননি সাকিব আল হাসান। আইরিশরা অলআউট হয়েছে মাত্র ২৮.১ ওভারে। এ দিন টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে সতর্ক শুরুই করে আইরিশরা। দুই ওপেনার স্টিফেন দোহেনি এবং পল স্টার্লিং বাংলাদেশের দুই পেসার হাসান এবং তাসকিনকে দেখেশুনেই লিভ করছিলেন। এতে দলের রানও বাড়ছিল না। স্লিপে দাঁড়ানো তিন ফিল্ডারও হতাশ হচ্ছিলেন বারবার।

পঞ্চম ওভারে আইরিশ ইনিংসের প্রথম বাউন্ডারি হাঁকান দোহেনি। যদিও এর এক বল পরই প্যাভিলিয়নে ফিরে যান তিনি। হাসানের করা লেংথ ডেলিভারিটি বুঝতে পারেননি তিনি। সেটি ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে জমা পড়ে। ফেরার আগে ২১ বলে ৮ রান করেন এই ওপেনার। পরের ওভারে অবশ্য আবারও উইকেটের সম্ভাবনা জানিয়েছিলেন তাসকিন। ওভারের দ্বিতীয় বলটি স্টার্লিংয়ের ব্যাটে লেগে ডিপ থার্ড অঞ্চল দিয়ে যাওয়ার সময় সেটা থামিয়ে দেন একাদশে ফেরা মেহেদী হাসান মিরাজ।

পয়েন্ট অঞ্চল থেকে বাম দিকে দৌড়ে ক্যাচটি লুফে নেওয়ার চেষ্টায় ছিলেন মিরাজ। যদিও বল থেকে একটু দূরে ছিলেন তিনি। অ্যান্ড্রু বালবির্নি এবং স্টার্লিংয়ের এই জুটিও ভাঙেন হাসান। ইনিংসের নবম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন এই পেসার। সেই ওভারের প্রথম বলে স্টার্লিংকে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলেন হাসান। ১২ বলে ৭ রান করে বিদায় নেন অভিজ্ঞ এই ওপেনার। একই ওভারের চতুর্থ বলে হ্যারি টেক্টরকে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে বিদায় করেন তরুণ এই পেসার। যদিও আম্পায়ার শুরুতে আউট দেননি। পরে অধিনায়ক তামিম ইকবাল রিভিউ নিলে তারপর মাঠ ছাড়েন টেক্টর। হাসানের ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে সময় মতো ব্যাট নামিয়েছিলেন টেক্টর। যদিও তার ব্যাটে লাগার আগে ছুঁয়ে যায় সামনের প্যাড। ইনিংসের দশম ওভারে উইকেটের দেখা পান তাসকিন। তার করা শর্ট বলটি কোনো ফুট মুভমেন্ট ছাড়াই শরীরের দূর থেকে খেলার চেষ্টা করেন অধিনায়ক বালবার্নি। ফলে বলটি তার ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে চলে যায় প্রথম স্লিপের দিকে। ক্যাচটি ধরতে একটুও ভুল হয়নি এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ফিল্ডার নাজমুল হোসেন শান্তর।

টেক্টর রানে খাতা খুলতেই পারেননি, অপরদিকে বালবির্নি করেন ৬ রান। পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ২৭ রান তোলে আয়ারল্যান্ড। বিপদ থেকে দলকে টেনে তোলার দায়িত্ব নেন লরকান টাকার এবং ক্যাম্ফার। দুজনে মিলে ৪২ রানের জুটিও গড়েন। এই জুটি ভাঙেন ইবাদত হোসেন। টাকারকে দারুণ এক রিভার্স সুইংয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরান এই পেসার। ইবাদতের ইয়র্কারটি ফ্লিক করতে গিয়ে ব্যাট নিজের বুটে লাগান টাকার। বলটি বাতাসে একটু দেরিতে সুইং করে সেটি টাকারের পায়ে লাগে। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি টাকার। আম্পায়ারের যৌক্তিক সিদ্ধান্তই বহাল থাকে। ফেরার আগে ৩১ বলে চারটি চারে ২৮ রান করেন টাকার।

ঠিক পরের বলে জর্জ ডকরেলকে বিদায় করেন ইবাদত। গুড লেংথে করা ভেতরে ঢোকা বলটি ডকরেলের স্টাম্প উপড়ে দেয়। কোনো রান না করেই বিদায় নেন ডকরেল। এবাদতের এমন বোলিংয়ের পর আবারও আক্রমণে আসেন তাসকিন। ২২তম ওভারে জোড়া উইকেট নেন তিনিও। তাসকিনের দ্রুত ধেয়ে আসা বলটি অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের ব্যাটে লেগে মিড উইকেটে ক্যাচ উঠে যায়। ক্যাচটি লুফে নেন নাসুম আহমেদ।

এর এক বল পর মার্ক অ্যাডায়ারকে ইনসাইড এজে বোল্ড করেন তাসকিন। ম্যাকব্রাইন ১ এবং তাসকিন শূন্য রানে বিদায় নেন। তারপর একাই লড়াই চালিয়ে যান ক্যাম্ফার। তার কল্যাণে একশর কাছাকাছি পৌঁছে যায় আয়ারল্যান্ড। এই ব্যাটারকে বিদায় করে নিজের চতুর্থ উইকেট পূরণ করেন হাসান। তরুণ এই পেসারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফাইন লেগে তাসকিনের ক্যাচে বিদায় নেন ক্যাম্ফার। ৪৮ বলে ৩৬ রান করেন ক্যাম্ফার। ইনিংসে ছিল চারটি চারের মার। ইনিংসের ২৯তম ওভারে নিজের পাঁচ নম্বর উইকেট পূর্ণ করেন হাসান। তিন রান করা গ্রাহাম হিউমকে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে বিদায় করেন তিনি। যদিও শুরুতে আম্পায়ার আউট দেননি, পরে রিভিউ নিয়ে সফল হয় বাংলাদেশ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close