ক্রীড়া ডেস্ক

  ০৩ ডিসেম্বর, ২০২২

জয় ছাপিয়ে আলোচনায় জাপানের বিতর্কিত গোল

বিশ্বকাপে এরকম রাতের জন্যই অপেক্ষা করে ফুটবল ভক্তরা। ৯০ মিনিটে প্রতিটি দলকে নকআউটের স্বপ্ন দেখিয়ে এবং প্রতিটি দলকে বাদ পড়ে যাওয়ার ভয় দেখিয়ে দিন শেষ করেছে গ্রুপ ‘ই’। গ্রুপের সব দলের শেষ ম্যাচ কেন একসঙ্গে শুরু হয়, সেটি বুঝাতেই যেন মহড়া নিয়ে হাজির হয়েছিল গ্রুপটি। গোল ও অনুভূতির রোলারকোস্টার শেষে গ্রুপের শীর্ষস্থান দখল করেছে জাপান। হেরেও নকআউটের টিকিট পেয়েছে স্পেন। আর কোস্টারিকার বিপক্ষে জিতেও টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে জার্মানি।

জার্মানির বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেওয়ার পরই ঘটনাটি সামনে এসেছে, তোলপাড় হচ্ছে জার্মান গণমাধ্যমে। স্পেনের বিপক্ষে জাপানের দ্বিতীয় গোলটি নিয়ে চলছে বিতর্ক। কাওরো মিতোমা ক্রস করার আগেই বল বাইলাইন পেরিয়ে যাওয়ার একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু ভিএআরে পরীক্ষার পর গোলটি বহাল রাখা হয়, যা বাতিল হলে পরের পর্বে যেত জার্মানিই।

গত বৃহস্পতিবার রাতে ‘ই’ গ্রুপের দুই ম্যাচেই হয়েছে অতি নাটকীয়তা। স্পেনকে ২-১ গোলে হারিয়ে গ্রুপ সেরা হয়ে পরের পর্বে উঠেছে জাপান। কোস্টারিকাকে ৪-২ গোলে উড়িয়েও কান্নায় ভেঙে পড়তে হয়েছে জার্মানিকে। হেরেও গোল গড়ে এগিয়ে থাকায় দ্বিতীয় হয়ে স্পেন পা রেখেছে নকআউট পর্বে।এখন সব কিছুর মূলে চলে এসেছে জাপানের দ্বিতীয় গোল। স্পেন-জাপান ম্যাচ ১-১ গোলে শেষ হলে গোলগড়ে এগিয়ে জাপানকে পেছনে ফেলে নকআউট নিশ্চিত করত জার্মানি।

ম্যাচের ৫১ মিনিটে বাম পাশ থেকে ক্রস বাড়ান মিতোমা। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বল ক্রস করার আগেই পেরিয়ে গেছে বাইলাইন। সেই ক্রস থেকে গোল করে আও তানাকা। মাঠের রেফারি শুরুতে গোল বাতিল করেছিলেন। কিন্তু ভিডিও অ্যাসিস্টেন রেফারি (ভিএআর) পরীক্ষা করে তার সিদ্ধান্ত বদলে দেন। ভিএআরের মতে, বলটির হালকা অংশ লাইন স্পর্শ করে আছে। এই নিয়ে তাই সমালোচনা মুখর জার্মান গণমাধ্যম। তারা এটিকে ১৯৬৬ বিশ্বকাপে জিওফ হার্স্টের বিতর্কিত গোলের সঙ্গে তুলনা করছে।

এই গোল বহাল থাকায় ৬ পয়েন্ট পেয়ে যায় জাপান। গোলটি বাতিল হলে জার্মানির সমান ৪ পয়েন্ট হলেও গোলগড়ে পিছিয়ে বাদ পড়ত এশিয়ার দেশটি। এই ম্যাচে ভিএআরের দায়িত্ব পালন করেন মেক্সিকোর ফার্নান্দো গুয়েরো। লম্বা সময় নিয়ে গোলটি পরীক্ষা করেন তিনি। ক্রীড়া গণমাধ্যম ইএসপিএন জানায়, বল যেহেতু গোলাকার তাই অন্য কোনো অংশ দাগের ওপর থাকতে পারে। গোললাইন ক্যামেরা ব্যবহার করে নাকি সেটা নিশ্চিত হয় ভিএআর। তবে এতে বিতর্ক থামছে না। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে যে অ্যাঙ্গেল ধরা পড়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে বল পেরিয়ে গেছে বাইলাইন। এ ব্যাপারে অন্য কোনো অ্যাঙ্গেলের ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করে ব্যাখ্যা দেয়নি ফিফা।

৫৬ বছর আগে আরেকটি বিতর্কিত গোলে পুড়তে হয়েছিল জার্মানদের। ১৯৬৬ বিশ্বকাপ ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ সময় পর্যন্ত ১-১ গোলে সমতায় ছিল জার্মানি। একদম শেষ মুহূর্তে জিওফ হার্স্টের শট ক্রসবারে লেগে গোললাইনে পড়ে, পরে তা ক্লিয়ার করেন জার্মান ডিফেন্ডার। রেফারি প্রথমে কর্নার দিলেও সহকারী রেফারির সঙ্গে আলাপ করে আসে গোলের সিদ্ধান্ত। ২-১ গোলে জিতে চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড। জার্মানরা এখনো বিশ্বাস করে বলটি গোললাইন অতিক্রম করেনি। এবার নিজেদের ম্যাচে না হলেও নিজেদের ভাগ্য জড়িত থাকায় জাপানের বিতর্কিত গোল নিয়ে নিজেদের দুর্ভাগা ভাবছে তারা।

দিনটা শুরু হয়েছিল সহজ হিসাব নিয়েই। নিজ নিজ ম্যাচে জিতলে নকআউটে চলে যাবে গ্রুপের দুই পরাশক্তি স্পেন ও জার্মানি। প্রথমার্ধের খেলা সে মাফিকই এগুচ্ছিল। কোস্টারিকার বিপক্ষে ডমিনেট করে ১-০ গোলের লিড নিয়ে মধ্য বিরতিতে যায় জার্মানি। স্পেনও আলভারো মোরাতার গোলে জাপানকে দমিয়ে রেখে বিরতিতে যায়। স্পেন-জার্মানি প্রথমার্ধে তাদের ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করলেও দ্বিতীয়ার্ধের ঝড়ের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিল না এই দুই পরাশক্তি।

জার্মানিকে যেই গেমপ্ল্যানের মাধ্যমে কব্জা করেছিলেন, স্পেনের বিরুদ্ধেও সেটিই প্রয়োগ করেন জাপান কোচ হাজিমি মরিয়াসু। মধ্য বিরতিতে দুজন খেলোয়াড়কে বদলি করেন তিনি, নামান রিতসু দোয়ান ও কাউরু মিতুমাকে। টুর্নামেন্ট ফেভারিট স্পেন দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই উজ্জীবিত জাপানের অ্যাম্বুশের মুখে পড়ে। আর এতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন এই বদলি খেলোয়াড়রা।

জার্মানি-ম্যাচের মতো স্পেনের বিপক্ষেও সমতাসূচক গোলটি করেন দোয়ান। ৪৮ মিনিটে স্পেনের রক্ষণের ভুলকে কাজে লাগিয়ে উনাই সিমনকে পরাস্ত করেন তিনি। দুই মিনিটের মাঝে দ্বিতীয় আঘাত হানে জাপান। এবার দোয়ানের লো ক্রস গোলপোস্টের পাশ দিয়ে মাঠের বাইরে চলে যেতে নিলে দৌড়ে গিয়ে তা ভিতরে ঢোকান মিতুমা। এবং সে বলে ট্যাপ-ইন করে গোল করেন তানাকা। জার্মানি-কোস্টারিকা ম্যাচের স্কোর তখনও ১-০। তৃতীয় স্থানে চলে যাওয়ার দুঃসংবাদ পাওয়া জার্মানির অবস্থা তখন আরো খারাপ করে দেয় কোস্টারিকা। ৫৮ মিনিটে নয়্যারের হাত থেকে বেরিয়ে আসা রিবাউন্ড বল থেকে গোল করে বসেন কোস্টারিকার তায়েদা। ১২ মিনিট পর আরেকটি গোল করে কোস্টারিকা। এবার হিসাব-নিকাশ আবার বদলে যায়। ১-২ গোলে হারতে বসা জার্মানির দুশ্চিন্তা গিয়ে ভর করে স্পেনের ডাগআউটেও। কোস্টারিকা জেতার পথে থাকায় স্পেন যে চলে গেছে তৃতীয় স্থানে।

তবে শেষ পর্যন্ত স্পেনকে উদ্ধার করেন কাই হ্যাভার্জ। বদলি নেমে ৭৩ ও ৮৫ মিনিটে জোড়া গোল করেন এই চেলসি তারকা। ৮৯ মিনিটে গোলের খাতায় নাম লেখান ফুলক্রগও। কিন্তু গোল দিয়ে গেলেও জার্মানির ভাগ্য যে তখন আর নিজেদের হাতে নেই। ১-২ গোলে হারতে থাকা স্পেন ড্র করলেই কেবল দ্বিতীয় স্থানে যেতে পারে জার্মানি। স্পেন অবশ্য আর জার্মানির ‘উপকারটা’ ফেরত দেয়নি। জার্মানি এগিয়ে যাওয়ার পর পরই খেলা স্লো করে দেয় তারা। শেষ ১০ মিনিটে আক্রমণে আসার চেষ্টাও তেমন করেনি স্প্যানিয়ার্ডরা। ১-২ গোলের পরাজয় নিয়েও হাসিমুখেই ম্যাচ শেষ করে লুইস এনরিকের দল। করবেই বা না কেন! গ্রুপ রানারআপের নকআউটের রাস্তা গ্রুপ চ্যাম্পিয়নের চেয়েও সহজ হতে পারে। আর স্পেন ও জার্মানির মতো দুই দৈত্যকে বধ করে শেষ ষোলোতে জায়গা করে নেওয়া জাপান পরবর্তী ম্যাচে মুখোমুখি হবে গতবারের রানারআপ ক্রোয়েশিয়ার। সেই ম্যাচে জয়ী দলের সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনালে দেখা হতে পারে ব্রাজিলের।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close