ক্রীড়া ডেস্ক

  ২৭ নভেম্বর, ২০২২

যেভাবে চূর্ণ হলো ইতালির দুর্গ

সাত মাস আগেই পেয়েছিলেন জাতীয় বীরের মর্যাদা। জর্জিনহো-কিয়েল্লিনিরা উড়ছিলেন। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে ঝরে পড়লো ডানা, ধরণিতলে ভূপাতিত হলো ইতালির ফুটবল টিম। ওয়েম্বলিতে গত বছর জুলাইয়ে ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন দলই কি না বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে পারল না! বিশ্বাস হয়! চারদিকে দীর্ঘশ্বাস, প্রতিধ্বনিত হতে থাকে হাহাকার।

গত ২৪ মার্চ নিজেদের শহর পালেরমোতে এক দুঃখগাথার ভাগিদার হলো লাখো ইতালিয়ান। অবশ্য বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্লে অফ ড্র শুরুতেই মন খারাপ করে দিয়েছিল ফুটবলপ্রেমীদের। কারণ পর্তুগাল কিংবা ইতালির যে কোনো এক দলকে ছিটকে যাওয়ার পথ নির্ধারণ হয়ে গিয়েছিল ওই ড্রতে। প্লে অফের সেমিফাইনালে দুই দলই জিতে গেলে উঠতে হতো ফাইনালে, যেখান থেকে কেবল একটি দলই পেত বিশ্বকাপের টিকিট। মানে হয় ইতালি, নয়তো পর্তুগাল! সুঁতোয় ঝুলে থাকা দুই দলের ভাগ্য আগেভাগেই ছিঁড়ে যায়। প্লে অফের সেমিফাইনালে পুঁচকে নর্থ মেসিডোনিয়ার কাছে সমাধি হয় ইতালির বিশ্বকাপে ফেরার স্বপ্ন।

গোল না পেলেও মাঠজুড়ে ছিল ইতালির আধিপত্য। ৩২টি শট নিয়েছিল তারা, লক্ষ্যে ছিল ৫টি। অন্যদিকে মেসিডোনিয়ার শট চারটি। অতিরিক্ত সময়ে খেলা গড়ানোর আভাস যখন দিচ্ছিল, তখনই সে জায়ান্ট বধের মুহূর্ত। আলেক্সান্দার ট্রাকোভস্কি বল নিয়ন্ত্রণে রেখে বক্সের বেশ বাইরে থেকে নিলেন ডান পায়ের শট, ইতালি গোলকিপার জিয়ানলুইজি দোনারুম্মা বলের গতিপথ বুঝে ডান দিকেই ঝাঁপ দিলেন। কিন্তু বল তাকে ফাঁকি দিল, কাঁপালো জাল, নিস্তব্ধ স্বাগতিকদের গ্যালারি। চার বছর আগেও একই কষ্ট, একই যন্ত্রণা পেতে হয়েছিল ইতালিকে। ১৯৫৮ সালের পর প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলা হয়নি। রাশিয়া বিশ্বকাপে তাদের অনুপস্থিতি সবাইকে হতবাক করেছিল। ওইবার প্লে অফে সুইডেনের কাছে ১-০ তে পিছিয়ে থেকে স্বপ্ন ভেঙেছিল, যা টালমাটাল করে দিয়েছিল পুরো দলকে। আন্দ্রে বার্জাগলি, ড্যানিয়েল ডি রসসি ও অধিনায়ক জিয়ানলুইজি বুফনের মতো অভিজ্ঞরা অবসর ঘোষণা করেন। ইতালিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট কার্লো তাভেচ্চিও করেন পদত্যাগ।

চার বছর আগের সেই ইতালি পুরোপুরি বদলে যায়। রবার্তো মানচিনির অধীনে পুনরুত্থান হয় আজ্জুরিদের। ইউরোর বাছাইয়ে গ্রুপের ১০ ম্যাচের সব জিতে ফিনিক্স পাখির মতো নবজাগরণের আভাস দেয় তারা। মূল পর্বেও ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ৫৩ বছর পর প্রথম ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ জেতে ইতালি। লন্ডনে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে ফাইনালে ৩-২ গোলে টাইব্রেকারে হারিয়ে ১৯৬৮ সালের পর প্রথমবার ইউরোপিয়ান ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্ব ভুলিয়ে দেয় বিশ্বকাপে না ওঠার দুঃখণ্ডকষ্ট। দারুণ টিম স্পিরিটে ইউরো জয় করে ইতালি। ছিল না কোনো চাপ। খেলোয়াড়রা নিজেদের প্রকাশে বদ্ধপরিকর ছিল। কিন্তু সেই খেলোয়াড়রা ওই অভাবনীয় জয়ের পর থেকে আত্মতুষ্টিতে ভুগছিল।

ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করায় ইতালির বিশ্বকাপে ওঠা মনে করা হয়েছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতার। কিন্তু ওয়েম্বলিতে ঐতিহাসিক ফাইনাল জয়ের পর থেকে ছন্নছাড়া আজ্জুরিরা। পরের ম্যাচ ছিল বিশ্বকাপ বাছাই, বুলগেরিয়ার সঙ্গে ড্র করে তারা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close