মনিরুল ইসালম

  ২২ নভেম্বর, ২০২২

গানিম আল মুফতাহ্ কে?

কাতারের সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত এবং বিখ্যাত একজন ব্যক্তি গানিম আল মুফতাহ্। কারণ তার হাত ধরেই বেজে উঠল ফিফা বিশ্বকাপের দামামা। ২০২২ সালের বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলের আসরের উদ্বোধন করলেন গানিম আল মুফতাহ্। আল বায়াত স্টেডিয়ামের এই অনুষ্ঠান উপভোগ করল গোটা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমী মানুষ।

তিনি কাতারের সর্বকনিষ্ঠ এক উদ্যোক্তা। তিনি দুই পা-বিহীন জন্ম নেওয়া প্রতিবন্ধী কিশোর গানিম আল মুফতাহ্। কাতারের অধিবাসী সে। তিনি কাতারের সর্বকনিষ্ঠ উদ্যোক্তা, তিনি ঘারিসা আইসক্রিম প্রতিষ্ঠা করেছেন, এটি একটি কোম্পানি যার ছয়টি শাখা রয়েছে এবং ৬০ জন কর্মী রয়েছেন। গানিম সমগ্র উপসাগরীয় অঞ্চলে তার ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি খুলতে চায়। গানিমের ভবিষ্যতে প্যারালিম্পিয়ান হওয়ার আশা আছে। গানিম প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও তার প্রিয় খেলা হচ্ছে সাঁতার, স্কুবা ডাইভিং, ফুটবল, হাইকিং এবং স্কেটবোর্ডিং। স্কুলে গানিম তার হাতে জুতা পরে ফুটবল খেলত এবং তার ‘সাধারণ আকারের’ বন্ধুদের সঙ্গে বলের পেছনে তাড়া করত। আশ্চর্যজনকভাবে, গানিম সমগ্র উপসাগরীয় অঞ্চলের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জেবেল শামস আরোহণ করেছেন। নির্ভীক, তিনি প্রকাশ্যে মাউন্ট এভারেস্ট আরোহণের তার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। ইনস্টাগ্রামে এক মিলিয়নেরও বেশি ফলোয়ার আছে গানিমের। গানিম আল মুফতাহ্ কাতারের ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়ন করার লক্ষ্য রেখেছেন।

গানিমের শরীরের নিচের অংশ নেই। জন্মের আগেই দুটো পা হারিয়ে ফেলেন। ‘কোডাল রিগ্রেশন সিনড্রোম’ রোগে আক্রান্ত গানিমের শরীরের নিম্নাংশ না থাকা সত্ত্বেও তিনি গোটা কাতার তথা আরব দুনিয়ার একজন রোল মডেল। আরবের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে তার ভক্ত-সমর্থক। তিনি একজন বিশ্ববিখ্যাত মোটিভেশনাল স্পিকার। তার বক্তব্যের মাধ্যমে উজ্জীবিত, বর্ণময় হয়ে ওঠে হাজার বর্ণহীন জীবন। গানিম যখন মাতৃগর্ভে রয়েছেন, তখনই আলট্রা-সাউন্ড মেশিনে ধরা পড়ে তার শরীরের অবিকশিত অংশ। ডাক্তার গর্ভপাতের পরামর্শ দেন। কারণ অপূর্ণাঙ্গ সন্তানের জন্ম দেওয়ার চেয়ে তাকে হত্যা করে দেওয়া শ্রেয়। গানিমের মা-বাবা এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারলেন না। কারণ ইসলামের বিধান অনুযায়ী গর্ভপাত হলো চূড়ান্ত অপরাধ।

মা ইমান উল আবদেলি এবং বাবা মুহাম্মদণ্ডআল-মুফতাহ্ এটাকে মহান আল্লাহর সিদ্ধান্ত হিসেবে মেনে নিয়ে, বিকলাঙ্গ সন্তানের জন্ম দিলেন। মা-বাবার উদ্দেশে বলেন, ‘আমি হব সন্তানের বাম পা আর তুমি হবে তার ডান পা। আমরা দুজনে সন্তাসালে পৃথিবীর আলো দেখেন গানিম। শিশুকাল থেকেই পদে পদে সামাজিক বঞ্চনার শিকার হয়ে পড়েন তিনি। স্কুল, খেলার মাঠসহ বিভিন্ন জায়গায় তাকে অপমানিত করা হতো। তিনি এসবের তোয়াক্কা না করেই এগিয়ে যেতেন নিজ পথে, একেবারে নিজস্ব ছন্দে। বন্ধুদের বোঝাতেন- তার অসম্পূর্ণ শরীরের জন্য তিনি মোটেও দোষী নন। আল্লাহ তাকে যে পরিমাণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রদান করে পাঠিয়েছেন, এর জন্য তিনি কৃতজ্ঞ।

নিজের সহপাঠী, বন্ধুবান্ধবকে এসব বোঝাতে বোঝাতে নিজের অজান্তেই তিনি হয়ে ওঠেন একজন মোটিভেশনাল স্পিকার। এক দিন যার ভূমিষ্ঠ হওয়া নিয়েই যথেষ্ট সন্দেহ ছিল, তার হাতে উদ্বোধন হলো বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত এক প্রতিযোগিতার আসর। কাতারের ২০ বছর বয়সি প্রতিবন্ধী যুবক আজ সে দেশের শান্তির দূত হিসেবে গোটা বিশ্ব দরবারে পৌঁছে গেছেন। এছাড়া তিনি একজন মোটিভেশনাল স্পিকার, কবি, সাহিত্যিক, দারুণ বক্তা হিসেবে আরব দুনিয়া তথা গোটা বিশ্বের কাছে সমাদৃত। এখন তিনি কাতার সরকারের প্রধান প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বের দরবারে নিজের পরিচিতি তুলে ধরলেন। তিনি প্রমাণ করে দিলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সাফল্যের পথে কোনো অন্তরাল হয়ে উঠতে পারে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close