ক্রীড়া ডেস্ক
মেসি-রোনালদোর স্মৃতিচারণে হালান্ড
আধুনিক ফুটবলের দুই সুপারস্টার লিওনেল মেসি এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসি একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে গেছেন। মাঠের লড়াইয়ে ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে কেউ কাউকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছেন কি-না তা নিয়ে আলোচনা হয়তো কখনই শেষ হবে না। এরই মধ্যে কিংবদন্তির তকমাও গায়ে লাগিয়ে ফেলেছেন দুজনেই। যদিও এরই মধ্যে মেসি-রোনালদো অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি অনেকেই দেখে ফেলেছেন। আর তা হয়েছে অনেকটাই হালের তরুণ আর্লিং হালান্ডের অসাধারণ নৈপুণ্যে।
ম্যানচেস্টার সিটির এই নরওয়েজিয়ান যেন মেসি-রোনালদোর তরুণ বয়সের প্রতিচ্ছবি। নতুন কেউ এসে পুরোনোদের ঢেকে দিলেও সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিটি পদক্ষেপেই সাবেকদের নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে।
এরই মধ্যে গোল মেশিন হিসেবে নিজেকে পরিচিত করে ফেলেছেন হলান্ড। ২২ বছর বয়সি এই তরুণ বরুসিয়া ডর্টমুন্ড থেকে ইংলিশ লিগে পাড়ি জমানোর সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে অন্যভাবে পরিচিত করে তুলেছেন। সিটির ঘরের মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে টানা তিন লিগ ম্যাচে হ্যাটট্রিক করে নতুন এক রেকর্ডও গড়েছেন। প্রিমিয়ার লিগে তার গোলের রেকর্ড ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ইঙ্গিতই যেন দিচ্ছে। আর তাই রোনালদো-মেসি যুগকে ছাপিয়ে এখন হলান্ড যুগ নিয়ে আলোচনায় সড়ব হয়ে উঠেছে ফুটবল বিশ্ব।
ক্লাব ফুটবলে বর্তমানে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে প্রতিভাবান ক্লাব হিসেবে বিবেচনা করা হয় ম্যানচেস্টার সিটিকে। কেভিন ডি ব্রুইনার মতো খেলোয়াড়রা সিটিকে প্রতিদিনই উজ্জ্বল করে তুলছে।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে ৬-৩ গোলের উড়ন্ত জয়ে সিটির হয়ে হ্যাটট্রিক করেছেন হলান্ড। এর মাধ্যমে সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে হলান্ডের গোলসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ ম্যাচে ১৭টি। সত্যিকার অর্থেই এ ধরনের কৃতিত্ব অনন্য। লিগে তার গোলসংখ্যা ৮ ম্যাচে ১৪। গত মৌসুমে যৌথভাবে গোল্ডেন বুট বিজয়ী মোহাম্মদ সালাহ ও সন হেয়াং মিন করেছিলেন ২৩ গোল। এই গোলকে ছাড়িয়ে যেতে হলান্ডকে হয়তোবা খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে না।
৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতা ও ৮৬ কেজি ওজনের দীর্ঘকায় হলান্ডকে সামলাতে যেকোনো সেন্টার-ব্যাককে হিমশিম খেতে হয়। বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে গত মাসে চ্যাম্পিয়নস লিগে তার ‘কুং ফু’ স্টাইলের গোলটি ধরার সাধ্য ছিল না কারোরই। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে আট ম্যাচেই তার হ্যাটট্রিক সংখ্যা তিনটি। ইংলিশ লিগে এর আগে সবচেয়ে কম ম্যাচে তিন হ্যাটট্রিকের রেকর্ড ছিল লিভারপুলের সাবেক স্ট্রাইকার মাইকেল ওয়েনের। ৪৮ ম্যাচে ওয়েন এই কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন। কেউ কেউ তো রসিকতা করে বলছেন হলান্ড যে গতিতে এগোচ্ছেন, তাতে প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে সর্বোচ্চ হ্যাটট্রিকের রেকর্ডটা ভাঙতে পারেন এই মৌসুমেই। হলান্ডকে মাঠে দেখলে মনে হয় যেন ভিডিও গেমসের কাল্পনিক কোনো চরিত্র।
১৯৯৪ সালে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের হয়ে এন্ডি কোল লিগে ৩৪ গোল করেছিলেন, পরের বছর সম সংখ্যক গোল করেন ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের অ্যালান শিয়েরার যা এখনো পর্যন্ত এক মৌসুমে সর্বোচ্চ। রোনালদো সর্বোচ্চ ৩১ গোল করেছেন। অন্যদিকে সিটির সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা সার্জিও অ্যাগুয়েরো কখনই ২৬ গোলের বেশি করতে পারেননি। এসবই হলান্ডের হাত ধরে অতীত হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার।
তারপরও মেসি-রোনালদো নিজেদের সময়ে যে বেঞ্চমার্ক তৈরি করে গেছেন তা অনেকের কাছেই অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। ২০১১-১২ সালে স্প্যানিশ লিগে ৫০ গোলসহ সব ধরনের প্রতিযোগিতায় বার্সেলোনার হয়ে মেসি ৭৩ গোল করেছিলেন। অন্যদিকে ২০১৪-১৫ মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে রোনালদো করেছিলেন ৬১ গোল। ১৯২৮ সালে এভারটনের ডিক্সি ডিন সব মিলিয়ে এক মৌসুমে করেছিলেন ৬০ গোল। হালান্ডের সামনে এসব রেকর্ড এখন ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ৩৮ ম্যাচের ইংলিশ লিগ মৌসুমে হলান্ডের হাত ধরেই হতে পারে নতুন রেকর্ড।
যদিও তাকে নিয়ে সবচেয়ে বড় শঙ্কার বিষয় ফিটনেস। বিভিন্ন ধরনের পেশির ইনজুরিতে ডর্টমুন্ডে প্রায়ই তাকে মাঠের বাইরে কাটাতে হয়েছে। যদিও সিটি ক্যারিয়ারে এখনো পর্যন্ত সেই ধরনের কোনো শঙ্কা চোখে পড়েনি। সিটির মেডিকেল দল তাকে সেভাবেই পর্যবেক্ষণে রেখেছে। এ সম্পর্কে সিটি বস পেপ গার্দিওলা বলেছেন, ‘গত মৌসুমে সে খুব একটা ম্যাচ খেলতে পারেনি। প্রায় সময়ই তাকে ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছে। এখানে আমাদের বেশ কিছু অসাধারণ ফিজিও রয়েছে। এখনো পর্যন্ত পুরো ৯০ মিনিট হলান্ড খেলতে পারার পেছনে ফিজিওদের অবদান রয়েছে। এজন্য তাদের ধন্যবাদ। যেকোনো ক্লাবের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হচ্ছে চিকিৎসক ও ফিজিও। গতবার ডর্টমুন্ডে হালান্ডের সেভাবে পরিচর্যা করা হয়নি।’
এখানে অবশ্য নরওয়ে জাতীয় দলের কোট স্টারে সোলবাকেনের নাম উল্লেখ করতে হয়। বিশ্বের সবার কাছে একজন ভিন্নমানের খেলোয়াড় হিসেবে হলান্ডকে তুলে ধরার পেছনে সোলবাকেনের অবদান রয়েছে। ৬০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে সিটিতে ট্রান্সফার হবার বিষয়টিও এক দিনে হয়নি। ২০১৯ সালে ম্যানচেস্টার সিটি তাকে দলে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। মৌসুমের শেষে রিয়াল মাদ্রিদের আগ্রহ সত্তেও শেষ পর্যন্ত সিটিতেই পাড়ি জমান হলান্ড।
"