জাহিদুল ইসলাম

  ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

কাঁদলেন কাঁদালেন

রূপকথা, আবেগ, বেদনা এবং অনুভূতি মিশে গেলে যা হয়, পরশু রাতে সেটাই হলো লন্ডনের ওটু এরিনায়। টেনিসকে চিরবিদায় জানালেন রজার ফেদেরার। তর্কসাপেক্ষ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ টেনিস খেলোয়াড় রজার ফেদেরার। টেনিস কোর্ট থেকে বিদায় নেওয়ার মুহূর্তে তিনি কাঁদলেন এবং কাঁদালেন। নিজের স্ত্রীকে চুমু খেলেন, সন্তানদের জড়িয়ে ধরলেন। পরিবারের সদস্যদের পর ক্যারিয়ারে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পাওয়া নোভাক জোকোভিচ ও রাফায়েল নাদাল তাকে এসে জড়িয়ে ধরলেন এবং কাঁদলেন রাফায়েল নাদাল। বারবার চোখ মুছছিলেন জোকোভিচ। প্রতিপক্ষের বিদায়ে কোনো খেলোয়াড়ের এমন আবেগী হওয়ার দৃশ্যই প্রমাণ করে ফেদেরারই আসলে টেনিস কোর্টেও মহারাজ ‘রাজা’।

বিদায়বেলায় পুরো কোর্ট চক্কর দিলেন। হাত নেড়ে দর্শকদের অভিবাদন গ্রহণ করলেন, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানালেন। হাত বাড়িয়ে দিলেন কিংবদন্তি রড লেভার। এরপর সম্মান প্রদর্শনের বিরল এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন নাদাল ও জোকোভিচ। তাদের একসময়ের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে কাঁধে চড়ে বিদায় সম্ভাষণ জানালেন।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের জন্য ছিল বেদনার এক দিন। ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে সেদিন অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন ২০ বারের গ্র্যান্ডসøাম জয়ী। তিনিই জানিয়েছিলেন, চলতি মাসে লন্ডনে লেভার কাপে খেলার পর প্রতিযোগিতামূলক টেনিস কোর্টে তাকে আর দেখা যাবে না।

পরশু রাতে তিনি শেষবারের মতো কোর্টে নামলেন। যে শত্রুতা চলে এসেছে গত ১৭ বছর ধরে, বিদায় ম্যাচে সেই নাদালই ছিল ফেদেরারর পার্টনার। গ্যালারির দর্শকরা বারবার ফেদেরারকে নিয়ে হয়েছেন উদ্বেলিত। বয়স, চোট এবং জয়খরা- এই তিনে ভুগে আগের সেই ক্ষিপ্রগতির ফেদেরারের দেখা মেলেনি। হাঁটুর চোট বারবার ভোগাচ্ছিল। তবু দর্শকদের মাঝে ছিল না আক্ষেপ। সব ভালোবাসা উজাড় করে দিতেই তারা হয়েছিলেন হাজির।

শেষবার প্রিয় তারকাকে র‌্যাকেট হাতে নিজ চোখে দেখার সৌভাগ্য মেলাতেই যেন তাদের জীবন হয়েছে ধন্য। সবার মাঝে ছিল শুধু একটাই আফসোস, কিংবদন্তির ছোঁয়া আর কখনোই পাবে না টেনিস বিশ্ব।

ফেদেরার-নাদাল জুটি প্রতিপক্ষ হিসেবে জ্যাক সক ও ফ্রান্সিস টিয়াফোকে পেয়েছিলেন। প্রথম সেট ৬-৪ ব্যবধানে জিতে নেন ফেদেরার-নাদাল জুটি। পরের সেটে তারা টাইব্রেকারে ৭-৬(৭-২) ব্যবধানে হারেন। শেষ সেটে তারা টাইব্রেকারে ১-০ (১১-৯) সেটে হেরে যান। তাই জয় দিয়ে বিদায়ের উপলক্ষ রাঙাতে পারেননি ফেদেরার। তবু ২৪ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানার মুহূর্তের কাছে জয়-পরাজয়ের হিসাব ছিল অতি তুচ্ছ।

সবসময়ের মতো মাথায় সাদা ফেট্টি বেঁধে শেষবার ম্যাচ খেলা ফেদেরার বলেন, ‘এটি একটি চমৎকার দিন। ছেলেদের বলেছিলাম, আমি আনন্দিত, দুঃখিত নই। সব আয়োজন অবিশ্বাস্য হয়েছে। সবাইকে ধন্যবাদ। আসলে আমার ধন্যবাদ জানানোর অনেক মানুষ রয়েছে। একতা দারুণ রাত ছিল, সবাইকে ধন্যবাদ।’

ছেলে-মেয়েরা, আমার স্ত্রী অনেক সমর্থন করেছেন। সে আমাকে অনেক আগেই আমার খেলা থামাতে পারত। তবে সে তা করেননি। সে আমার খেলা চালিয়ে যাওয়াকেই সমর্থন করেছে। আমাকে খেলতে দিয়েছে। এটা আশ্চর্যজনক। তোমাকে ধন্যবাদ।

পরে আবেগ সামলে রসিকতা করে ফেদেরার বলেন, ‘পেশির ইনজুরিতে না পড়েই ম্যাচ শেষ করতে পারায় আমি আনন্দিত।’ পরে তিনি যোগ করেন, ‘পরিবার, সন্তান ও বন্ধুদের আমার সঙ্গে থাকায় ম্যাচ চলাকালীন চাপ অনুভব করিনি।’

আর কোনো দিন টেনিস কোর্টে দেখা যাবে না রাজাকে অনায়াস বিচরণ। থামতেই হলো। সময় বড় নির্মম। রড লেভার, বিয়ন বর্গ, জন ম্যাকেনরো, আগাসি, বেকার, সম্প্রস পুরুষ টেনিসে বহু মহানায়ক এসেছেন, গেছেন। এখনকার নোভাক জোকোভিচ, অ্যান্ডি মারে, আলকারাজ, সিৎসিপাসরা হয়তো টেনিস বিশ্ব শাসন করবেন আরো কয়েকটা বছর। কিন্তু রজার ফেদেরার একজনই। এ স্বাদের ভাগ হবে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close