ক্রীড়া ডেস্ক
কারা হবে ইউরোপ সেরা
আর কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা, আজ সেই রাত, যার স্বপ্ন দেখে মৌসুম শুরু হয় ফুটবলারদের। লম্বা পথ পেরোতে পেরোতে কারো কারো স্বপ্ন ভেঙে যায়, আর কারো কারো স্বপ্ন নতুন করে জেগে ওঠে। ৩২ দলের প্রতিযোগিতা শেষে আকাক্সিক্ষত ইউরোপ সেরা হওয়ার লড়াইয়ে টিকে আছে এখন শুধু লিভারপুল ও রিয়াল মাদ্রিদ । রাতটা কার জন্য হতে যাচ্ছে সুখের, আর কার হৃদয় ভেঙে হবে খানখান, সেটা জানা যাবে আজ রাতেই। প্যারিসের স্তাদে দে ফ্রান্সে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে মুখোমুখি ইউরোপের দুই জায়ান্ট।
রিয়াল ও লিভারপুলের চ্যাম্পিয়নস লিগের শুরুর দিকের অভিজ্ঞতা ছিল বেশ আলাদা। লিভারপুল টানা ছয় ম্যাচ জিতে গ্রুপের শতভাগ সাফল্য নিয়ে ওঠে নকআউটে। সেখানেও খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জায়ান্টদের। ইন্টার মিলানকে শেষ ষোলোতে ২-০ ও ১-০ গোলে হারিয়ে ওঠে সেরা আটে।
লিভারপুল চলতি চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রথম জয়বঞ্চিত হয় বেনফিকার কাছে গরের মাঠে। দ্বিতীয় লেগে ৩-৩ গোলে ড্র করলেও প্রথম লেগ ৩-১ গোলে জিতে আসায় সেমিফাইনালে যেতে অসুবিধা হয়নি তাদের। অবশ্য ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ধাক্কা খেতে হয়েছিল। ভিয়ারিয়ালকে ঘরের মাঠে ২-০ গোলে হারানোর পর প্রতিপক্ষের মাঠে ২ গোলে পিছিয়ে পড়েছিল। সব আশঙ্কা দূর করে অবশ্য ৬২ থেকে ৭৪ মিনিটে তিন গোল করে সেমিফাইনালে উঠে যায় লিভারপুল।
গ্রুপ পর্বের শুরুতেই অঘটনের শিকার ইন্টার মিলানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে শেষ মুহূর্তের গোলে জয় পায় রিয়াল। মলদোভান ক্লাব শেরিফ তিরাসপোলের কাছে ১-২ গোলে হার। ওই ধাক্কা যেন নতুন করে ঘুরে দেখাতে শেখায় ১৩ বারের চ্যাম্পিয়নদের।
গ্রুপের বাকি চার ম্যাচ জিতে শীর্ষে থেকে নকআউট নিশ্চিত করে রিয়াল, যেখানে একের পর এক অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে ১৭তম ফাইনালে পৌঁছায়। শেষ ষোলোর প্রথম লেগে কিলিয়ান এমবাপ্পের গোলে পরাজয় নিয়ে প্যারিস সেন্ট জার্মেইর মাঠ থেকে ফেরে তারা। ঘরের মাঠেও ফরাসি ফরওয়ার্ড তাদের পিছিয়ে দেন। কিন্তু হার মানার নয় রিয়াল, ফর্মের তুঙ্গে থাকা করিম বেনজেমা হ্যাটট্রিক করে মেসিদের বিদায় করে দলকে তোলেন কোয়ার্টার ফাইনালে।
শেষ আটে রিয়ালের প্রতিপক্ষ গতবারের চ্যাম্পিয়ন চেলসি। বেনজেমার ফের হ্যাটট্রিক, ৩-১ গোলে ব্লুদের মাঠ থেকে জিতে এসেও স্বস্তিতে ছিল না মাদ্রিদ ক্লাবের। তাদের শঙ্কা যেন আরো বেড়ে যায় ৭৫ মিনিটের মধ্যে তিন গোল খেয়ে, দুই লেগের অগ্রগামিতায় চেলসি এগিয়ে যায় ৪-৩ গোলে। আবারও প্রত্যাবর্তনের গল্প, রদ্রিগো গোল করে রিয়ালের আশা বাঁচান। অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে ফের নায়ক বেনজেমা, ফরাসি ফরওয়ার্ডের গোলে ৫-৪-এ সেমিফাইনালে রিয়াল।
শেষ চারেও রিয়ালের প্রতিপক্ষ গতবারের ফাইনালিস্ট ম্যানচেস্টার সিটি, যাদের মাঠে গিয়ে তোপের মুখে পড়তে হয়েছিল। ৪-৩ গোলে ইতিহাদ স্টেডিয়ামে প্রথম লেগ হারের পর দ্বিতীয় লেগেই থেমে যেতে বসেছিল তাদের যাত্রা। ৭৩ মিনিটে রিয়াদ মাহরেজ গোল করলে ম্যানসিটির দ্বিতীয় ফাইনাল ছিল হাতছোঁয়া দূরত্বে। কিন্তু শেষ মুহূর্তের নায়ক বনে যাওয়া রদ্রিগো আবারও এলেন ত্রাতা হয়ে। ৯০ ও ৯১তম মিনিটে দুই গোল করে ম্যাচ নিলেন অতিরিক্ত সময়ে, যেখানে বেনজেমার পেনাল্টিতে ভর করে টানা তিনবার প্রত্যাবর্তনের গল্প লেখে রিয়াল।
এই হলো তাদের ফাইনালে উঠে আসার গল্প। ধাক্কা খেতে খেতে ঘুরে দাঁড়ানোর আত্মবিশ্বাস বেশ কাজে দেবে রিয়ালকে। তাদের তারকা খেলোয়াড় বেনজেমা আছেন ফর্মের একেবারে চূড়ায়। লা লিগা জিতে এবার দলকে ইউরোপ সেরা করতে উন্মুখ তিনি। পঞ্চম চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি জয়ের হাতছানি তার সামনে, আর নিজেই সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ১৫ গোল করে। আর দুটি গোল করলে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলদাতা রিয়ালেরই সাবেক তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর (১৭) পাশে বসবেন বেনজেমা। তবে রিয়াল যখন আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে, তখন লিভারপুর টগবগ করে ফুটছে। তাদের রক্তে প্রতিশোধের নেশা। ২০১৮ সালে এই দলের কাছে ফাইনালে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল অলরেডদের। পরের বছর ষষ্ঠবার ইউরোপ সেরার মর্যাদা পেলেও সেই দুঃখ ভোলেনি তারা। আর শিরোপার লড়াইয়ে সামনে যেহেতু সেই রিয়ালই, তখন তো নতুন করে মনে পড়ারই কথা।
ওই ম্যাচে ইনজুরিতে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে মাঠ ছেড়ে যেতে হয়েছিল মোহাম্মদ সালাহকে। তারপর হারের কষ্ট। এই দুটি হতাশা একসঙ্গে মিলে বদলা নেওয়ার জন্য যেন তর সইছে না মিসরীয় ফরওয়ার্ডের। ১২ ম্যাচে করেছেন ৮ গোল। এখন দেখা যাক কে হচ্ছেন ইউরোপ সেরা।
"