রবিউল ইসলাম, পত্নীতলা (নওগাঁ)

  ২২ মে, ২০২২

এক ফুটবল প্রেমিকের গল্প

বয়স বায়ান্নর কোঠায়, কিন্তু তেজ এতটুকু কমেনি। গত ২৫ বছর ধরে ফুটবল কোচ হিসেবে নজিপুর পৌরসভার ছেলেদের ফুটবল খেলা শিখিয়ে যাচ্ছেন। তার কোনো সপ্তাহ নেই, নেই কোনো বিরতি, নেই ছুটি। বছরজুড়ে সপ্তাহের সাত দিনই তিনি ফুটবল খেলা অনুশীলন করান, প্রতিদিন বিকালে।

তিনি কোনো ক্লাব বা দলের নিয়োগপ্রাপ্ত কোচ নন, পান না কোনো বেতন। তবুও কেউ তাকে কখনো ফুটবল অনুশীলন করানো থেকে বিরত রাখতে পারেনি। এই ফুটবল প্রেমিক ব্যক্তির নাম মোহাম্মাদ আতোয়ার হোসেন। সবাই তাকে ‘বাবুল বস’ বলেই চেনেন, কিন্তু তার প্রিয় খেলোয়াড়রা তাকে ‘বস’ বলে ডাকতে বেশি পছন্দ করে। বাবুল বসের জন্ম নওগাঁ জেলার নজিপুর পৌরসভার ছোট চাঁদপুর গ্রামে।

শৈশবের বন্ধুদের অনেকেই উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে গ্রাম ছেড়ে শহরে বসবাস করছেন। অনেকেই হয়েছেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সরকারি চাকুরে। বাবুল কিন্তু রয়ে গেছেন গ্রামেই, মাটি ও মানুষের খুব কাছে। সকালে বাবুলের ঘুম ভাঙে পাখির ডাকে আর শুরু হয় স্থানীয় ছেলেদের ফুটবল অনুশীলনের পালা। এই গুরু দায়িত্ব পালনে ঝড়-বৃষ্টি-শীত কোনোটাই কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি বাবুলের পথে। বাবুলের ফুটবল খেলার শুরু সেই শৈশব থেকে। ফুটবল খেলতে খেলতে এক সময় নিজের অজান্তেই কেমন করে যেন ফুটবল খেলাকে ভালোবেসে ফেলেন। এই ফুটবল প্রেমের জন্য এখন পর্যন্ত কারো সঙ্গে ভালোবাসার ঘরটাও বাঁধা হয়নি তার। তাই মনে হয় ফুটবলই যেন তার একমাত্র ভালোবাসা আর প্রত্যেক খেলোয়াড় যেন তার পরিবারের একান্ত প্রিয় সদস্য। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে ফুটবল খেলার জন্য নজিপুরের বাইরে কখনো তার যাওয়া হয়ে ওঠেনি। এতে কিন্তু তিনি একদম হতাশ নন।

কারণ তার কাছে অনুশীলনপ্রাপ্ত খেলোয়াড়দের মাঝে ৯ জন এরই মধ্যে বিকেএসপিতে ভর্তি হতে পেরেছেন, তার অনুশীলনপ্রাপ্ত শিষ?্য শরিফ খেলছেন ঢাকার ক্লাব রহমতগঞ্জে, স্টাইগার রনি খেলছেন ঢাকা ভিক্টোরিয়া ক্লাবে, কাফসাত তাইয়ূস খেলছেন ঢাকা উত্তরা ক্লাবে, গোলকিপার শাকিব খেলছেন ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে, তার কাছে অনুশীলনপ্রাপ্ত খেলোয়াড় আলামিন (১৭) জাতীয় দলের হয়ে সাফ গেমসেও খেলেছেন।

আলাপচারিতার এক পর্যায়ে বাবুল বলেন, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে স্থানীয় ছেলেদের ফুটবল অনুশীলন করাই। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আমার এখানে ফুটবল অনুশীলন করতে আসে। স্থানীয় সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার মাঝেমধ্যে সাহায্য করে থাকেন। নজিপুর পৌরসভার মেয়র রেজাউল কবির চৌধুরী বিভিন্নভাবে সার্বিক সহযোগিতা করে থাকেন। তাই স্থানীয় ছেলেদের ফুটবল অনুশীলনের ব্যয়ভার বহনে বিভিন্ন জনের কাছে সাহায্য চাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এভাবেই পার করেছি ২৫টি বছর।

তার স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে বাবুল একবাক্যে বলে ওঠেন, জাতীয় দলের জন্য খেলোয়াড় বানাতে চাই। এটা সম্ভব হবে যদি তিনি সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close