ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ২৬ অক্টোবর, ২০২১

ঝগড়া করায় জরিমানা গুনতে হচ্ছে লিটন ও লাহিরুকে

শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের মধ্যকার সুপার টুয়েলভের ম্যাচে কথা-কাটাকাটিতে জড়িয়ে শাস্তি পেয়েছেন টাইগার ব্যাটার লিটন দাস ও লঙ্কান পেসার লাহিরু কুমারা। দুজনকেই ম্যাচ ফির ১৫ শতাংশ জরিমানা করা হয়েছে।

পাশাপাশি দুজনে নামের পাশে যুক্ত হয়েছে একটি করে ডিমেরিট পয়েন্ট, ২৪ মাসের মধ্যে কোনো ক্রিকেটার চারটি বা তার বেশি ডিমেরিট পয়েন্ট পেলে এক টেস্ট কিংবা দুটি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি নিষিদ্ধ হবেন। ঘটনা শারজায় বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার ম্যাচে বাংলাদেশের ইনিংসের। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা দারুণ শুরু করেছিল টাইগাররা। শুরুতে রানের গতি কম থাকলেও ক্রমেই তা বাড়াতে থাকেন দুই ওপেনার নাঈম শেখ ও লিটন দাস, রান খরায় ভোগা লিটনও ভালো শুরু পেয়েছিলেন। তবে পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে লাহিরু কুমারাকে তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন লিটন। দলকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েন লাহিরু কুমারা। এ সময় লিটনকে কিছু একটা বলেন, লিটনও তার দিকে তেড়ে যান। দুই দলের ক্রিকেটার ও আইসিসির ম্যাচ অফিশিয়ালরা দ্রুতই ঝামেলা মিটিয়ে ফেলেন।

ঘটনাটি যে সেখানেই শেষ হচ্ছে না সেটা বোঝাই যাচ্ছিল। ম্যাচ শেষে লিটন দাস ও লাহিরু কুমারাকে দোষী করে অভিযোগ করেন ম্যাচ রেফারি জাভাগল শ্রীনাথ। দুজনের বিরুদ্ধেই লেভেল-১ আচরণবিধি ভঙের অভিযোগ আনা হয়, দুজনেই অভিযোগ মেনে নেওয়ায় আনুষ্ঠানিক শুনানির প্রয়োজন হয়নি।

দারুণ জমে ওঠা ম্যাচে সুবিধাজনক অবস্থানে থেকেও হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। খাদের কিনারা থেকে দুর্দান্ত জয় তুলে নিয়ে বিশ্বকাপে শুভ সূচনা পায় লঙ্কানরা।

অন্য দলের চেয়ে বাংলাদেশ ভুল শুধরানোর কাজে কমই শিখছেন। যার প্রমাণ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চলমান সপ্তম আসর। প্রথম পর্ব থেকে শুরু করে মূল পর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশ ৪টি ম্যাচ খেলেছে। আর প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই হাতের মুঠো থেকে ফসকে গেছে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ।

প্রথম পর্বের ম্যাচগুলো থেকে শিক্ষা নিলে অন্তত শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে পারত মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দল। কিন্তু বাংলাদেশ প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই ডমিনেটের জায়গা থেকে ফিরে এসেছে। স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচ নিয়ে অনেক কথাই হয়েছে। সহযোগী দেশ স্কটল্যান্ডের তো দাঁড়াবারই কথা ছিল না। অথচ বাংলাদেশ ম্যাচটাই হেরে গেছে। যে স্কটল্যান্ড ১০০ করতে পারবে কিনা তা নিয়েই সকলে সন্দিহান ছিলেন, তারাই স্কোরবোর্ডে ১৪০ রান জড়ো করে ফেলে।

মজার ব্যাপার হল স্কটল্যান্ড কিন্তু ৫৩ রান ভুলতেই হারিয়ে ফেলেছিল ৬ উইকেট। তবুও আমরা ঠিকমতো চেপে ধরতে পারিনি। প্রতিপক্ষের বেশ কয়েকটা উইকেট পড়ে গেলেই বাংলাদেশ দলের মাঝে একটা আত্মতৃপ্তি চলে আসে। যার সুযোগ নেয় প্রতিপক্ষ দল এবং তা কাজেও লাগায়। আর স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে গিয়ে তার চরম মূল্য দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

পাপুয়া নিউ গিনির সাথেও একই অবস্থা। বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে খর্বশক্তির পাপুয়া নিউগিনি ৫৪ রান তুলতে ৮ উইকেট খুইয়ে ফেলে। কিন্তু দিনশেষে তারাই থামে ৯৭ রান জড়ো করার পর। রান রেটের হিসেবের খরায় পড়ে গেলে কিন্তু এই হেঁয়ালিপনা বাংলাদেশের বড় বিপদ ডেকে আনতে পারত। অর্থাৎ প্রতিটি ম্যাচেই দারুণ খেলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। কিন্তু তা ধরে রেখে দল ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করতে পারছে না। ফলে কিছু কিছু ম্যাচ হাত ফসকে যাচ্ছে। যেমনটা হলো শ্রীলঙ্কার সাথেও।

শ্রীলঙ্কা ১৭২ রান তাড়া করতে নেমে শুরুতে চাপে পড়লেও সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ায়। পাল্টা আক্রমণে বাংলাদেশকে দারুণভাবে ম্যাচে ফেরান সাকিব আল হাসান। ৯.৪ ওভারে ৭৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে রীতিমতো দিশেহারা ছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু তখনই হাতের লাগাম আলগা করে ফেলেন অধিনায়ক রিয়াদ। নিয়মিত এবং পরীক্ষিত বোলারদের বাদ দিয়ে পার্ট টাইমারদের দিয়ে বল করিয়ে ডেকে আনেন সর্বনাশ। এ নিয়ে হয়ত অনেক যুক্তিতর্কও সম্ভব। তবে বোলিং পরিকল্পনায় আরও দূরদর্শী হওয়ার সুযোগ ছিল তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। ক্যাচ হাতছাড়ার ব্যাপার তো আছেই, কিন্তু ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যদি ম্যাচের নিয়ন্ত্রণই হারিয়ে ফেলেন কিংবা চাপ প্রয়োগ থেকে সরে আসেন তাহলে তো প্রতিপক্ষ সুযোগ নিবেই। বাংলাদেশ সুযোগ কাজে না লাগালেও শ্রীলঙ্কা সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেনি। মনে রাখতে হবে, বিশ্বকাপে যারাই খেলছে, সবাই যার যার যোগ্যতা দিয়েই খেলছে। এখানে কাউকে ছোট করে দেখার বা আত্মতৃপ্তিতে ভোগার সুযোগ নেই। কারণ সামান্য সুযোগকে কাজে লাগানোর জায়গাই হচ্ছে বিশ্বমঞ্চ। সবাই এখানে হাফ চান্সকে ফুল চান্সে পরিণত করে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close