ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ১৪ অক্টোবর, ২০২১

‘রেফারি নিরপেক্ষ ছিলেন না’

‘রেফারি আমার খেলোয়াড়দের প্রতি অবিচার করেছে। তিনি আনফেয়ার ছিলেন। আমি ভারত ম্যাচের পর থেকেই রেফারিং নিয়ে বলে আসছিলাম। আজ এর চূড়ান্ত রূপ নিল’ - অস্কার ব্রুজোন , কোচ, বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ফুটবল দলের ভারপ্রাপ্ত কোচ অস্কার ব্রুজনের মুখে সবসময় হাসি লেগে থাকে। গতকাল নেপালের বিপক্ষে অলিখিত সেমিফাইনাল ম্যাচের পর রাজ্যের হতাশা এই বাংলাদেশের স্প্যানিশ কোচের চোখে-মুখে। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অস্কার সরাসরিই বললেন, ‘রেফারি আমার খেলোয়াড়দের প্রতি অবিচার করেছে। তিনি আনফেয়ার ছিলেন। আমি ভারত ম্যাচের পর থেকেই রেফারিং নিয়ে বলে আসছিলাম। আজ এর চূড়ান্ত রূপ নিল।’

বাংলাদেশকে দেওয়া দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তই পক্ষপাত মনে করেন অস্কার, ‘জিকো বক্সের বাইরে প্রথমে পা দিয়ে স্পর্শ করেছে। এরপর বল তার হাতে লেগেছে, সেটি ইচ্ছেকৃত নয়। লাল কার্ড দেওয়ার মতো ছিল না। পেনাল্টির কথা আর কী বলব! এটি সম্পূর্ণ অর্থে ভুল সিদ্ধান্ত। আরো বেশি কিছু বললে আমি এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হব।’

গত আগস্ট মাসে অস্কার এমন ঘটনার শিকার হয়েছিলেন। বসুন্ধরা কিংস শেষ ম্যাচে ভারতের মোহনবাগানের বিরুদ্ধে এক গোলে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত দশ জন নিয়ে ড্র করে। এই ড্রয়ের ফলে কিংসের বদলে মোহনবাগান পরবর্তী রাউন্ডে খেলে। দুমাস পর জাতীয় দলেও একই ঘটনার শিকার অস্কার। এই ম্যাচেও তার দল দশ জনে পরিণত এবং টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়।

দুই ঘটনা সম্পর্কে অস্কার বললেন, ‘বাংলাদেশের ফুটবলের চক্রান্ত ছাড়া আর কী হতে পারে। বাংলাদেশর ক্লাব বসুন্ধরা কিংস যেন উন্নত পর্যায়ে যেতে না পারে সেই জন্য এই সিদ্ধান্ত। জাতীয় দলের ক্ষেত্রেও এমন হলো।’

মালদ্বীপের রাজধানী মালের রাশমি ধান্দু স্টেডিয়ামে গতকাল নেপালের বিপক্ষে ১-১ ড্র করে বাংলাদেশ। নবম মিনিটে দলকে এগিয়ে নেন উত্তর বারিধারার ফরোয়ার্ড সুমন। শেষ দিকে উজবেকিস্তানের রেফারি আখরল রিসকুলায়েভের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে পেনাল্টি থেকে সমতা ফেরান অঞ্জন বিস্তা।

আগামী ১৬ অক্টোবরের ফাইনাল খেলতে হলে জিততেই হতো বাংলাদেশকে। কিন্তু এই ড্রয়ে চার ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে রাউন্ড রবিন লিগ থেকে ছিটকে গেল অস্কার ব্রুসনের দল। ৭ পয়েন্ট নিয়ে প্রথমবারের মতো সাফের ফাইনালে উঠল নেপাল।

২০০৩ সালে প্রথম ও সবশেষ সাফের শিরোপা জেতা বাংলাদেশ ২০০৫ সালে সবশেষ খেলেছিল ফাইনাল। নেপালের বিপক্ষে ড্রয়ে সে অপেক্ষা আরও বাড়ল। গত চার আসরেই গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে পড়ার হতাশা সঙ্গী ছিল দলের।

চারটি পরিবর্তন এনে নেপাল ম্যাচের সেরা একাদশ সাজান ব্রুসন। কার্ডের কারণে ছিলেন না ইয়াসিন আরফাত। রহমত মিয়া, সোহেল রানা, মতিন মিয়ার জায়গা হয়নি। তাদের বদলে টুটুল হোসেন বাদশা, বিশ্বনাথ ঘোষ, রাকিব হোসেন, সুমনকে খেলান কোচ।

শুরুর দিকে বলের নিয়ন্ত্রণে নেপাল কিছুটা আধিপত্য করলেও দ্রুত গুছিয়ে ওঠে বাংলাদেশ। এরপরই ওই গোল। বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা রাকিব হোসেন ফাউলের শিকার হলে ফ্রি কিক পায় বাংলাদেশ। জামালের ফ্রি কিকে নেপালের এক খেলোয়াড় মাথা ছোঁয়ালেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি। বক্সে ভালো অবস্থায় থাকা সুমন জাল খুঁজে নেন।

সাফের চলতি আসরে এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো ফরোয়ার্ড গোল পেলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১-০ গোলে জেতা ম্যাচে ডিফেন্ডার তপু বর্মন এবং শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে ১-১ ড্র ম্যাচে আরেক ডিফেন্ডার ইয়াসিন লক্ষ্যভেদ করেছিলেন।

একটু পর সাদউদ্দিনের শট বাইরে যায়। ২৩ মিনিটে বিস্তার ফ্রি কিক অনেকটা লাফিয়ে ফিস্ট করে আটকান আনিসুর রহমান জিকো। দুই মিনিট পর বক্সের ডান দিক দিয়ে অরক্ষিত ফরোয়ার্ড সাদউদ্দিন তাড়াহুড়ো করে শট নেন। বল বেরিয়ে যায় দূরের পোস্টের অনেক বাইরে দিয়ে।

প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আয়ুশ খালানের হেড ক্রসবারের উপর দিয়ে গেলে এগিয়ে থাকার স্বস্তি নিয়ে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে মাঝমাঠ দিয়ে আক্রমণে উঠেছিলেন রাকিব। কিন্তু ডিফেন্ডাররা পথ আগলে দাঁড়ানোর পর দুই পাশে থাকা সতীর্থকে বল না বাড়িয়ে নিজেই চেষ্টা করেন। বল উড়ে যায় অনেক উপর দিয়ে।

সমতায় ফিরতে মরিয়া নেপালের দুটি আক্রমণ ফিরিয়ে বাংলাদেশের ত্রাতা জিকো। ৫০ মিনিটে আয়ুশের ফ্রি কিক করে ফেরানোর তিন মিনিট পর অনন্ত তামাংয়ের ব্যাক হেড বিপদমুক্ত করেন তিনি।

৫৫ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণের সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন সুমন। গায়ের সঙ্গে থাকা অঞ্জনকে গতি দিয়ে পরাস্ত করে বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন এই ফরোয়ার্ড। চিপ, লব করলে গোল হতে পারত, কিন্তু গোলরক্ষক বরাবর শট নিয়ে হতাশ করেন তিনি।

ম্যাচের ৮৮ মিনিটে নেপালের অঞ্জনের পেনাল্টি আটকাতে পারেননি রানা।

বাকিটা সময় নির্বিঘেœ পার করে দিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠার উৎসবে মাতে নেপাল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close