সাহিদ রহমান অরিন

  ০৪ আগস্ট, ২০২১

সফর পেছানোয় সবারই লাভ

ক্রিকেটারদের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) বাকি অংশে খেলার সুযোগ করে দিতে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বাংলাদেশ সফর স্থগিতের বিষয়টিকে সবাই ‘মোড়লদের স্বেচ্ছাচারিতার কাছে ছোটদের নতি স্বীকার’ হিসেবে দেখছেন কেন, তা আমার বোধগম্য নয়।

বিশ্বকাপে ভালো করার জন্য অবশ্যই আমি আগেভাগে আয়োজক দেশটিতে যেতে চাইব, যত দ্রুত সম্ভব সেখানকার উইকেট-কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব; তাই নয় কি? ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডও (ইসিবি) সেটিই করেছে।

সবাই জানেন, এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজক সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান । তবে ইংল্যান্ডের সবকটি ম্যাচ হবে আমিরাতে। এদিকে করোনার থাবায় স্থগিত আইপিএলের বাকি অংশও হবে আমিরাতে। আর এই আইপিএলে খেলেন অন্তত ১৫ জন ইংলিশ ক্রিকেটার, যারা সবাই বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা করে নিতে মরিয়া।

ব্যস, দুইয়ে-দুইয়ে চার মিলে যাওয়াতেই ইসিবির এই সিদ্ধান্ত বদল।

এখন অনেকে বলতে পারেন, ‘তাহলে তো ইংলিশ বোর্ড বাংলাদেশের সঙ্গে গাদ্দারি করল।’ এখানেও আমার দ্বিমত আছে। কারণ বেইমানি তখনই হয়; যখন কেউ কথা দিয়ে কথা রাখে না। ইসিবি কিন্তু বিসিবিকে একবারও বলেনি, ‘যত কিছুই হোক, আমরা সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে খেলতে আসবই।’ দুই বোর্ডের মধ্যে কেবল সফরের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, যা বিসিবির চোখে ইতিবাচক ও ফলপ্রসূ ছিল। আর এই আলোচনা যখন হয়েছিল, ইসিবি যখন মৌখিক সম্মতি দিয়েছিল; তখন ভারতের করোনা পরিস্থিতি এতটা নাজুক ছিল না। ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট তখনো চোখ রাঙানি দেয়নি, দেশটি থেকে বিশ্বকাপ আসর সরিয়ে করোনামুক্ত মরুর বুকে আয়োজনের সিদ্ধান্ত আসেনি, এপ্রিল-মের আইপিএল পিছিয়ে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে নেওয়া হয়নি। সে সময় ইসিবি যদি জানত বিশ্বকাপের ভেন্যুতে পরিবর্তন আসবে, করোনা থাবা বসানোয় অর্থের ঝনঝনানির আইপিএল পিছিয়ে যাবে, তাহলে নিশ্চয়ই তারা বাংলাদেশ সফর স্থগিত করত না।

এখন আইপিএলের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সফরটি স্থগিত করে ইংল্যান্ড এক ঢিলে তিন পাখি মারার চেষ্টা করছে। (১) সহ-মোড়ল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সঙ্গে সম্পর্কের উষ্ণতা বজায় রাখা, (২) খেলোয়াড়দের ফের আইপিএলে খেলতে পাঠিয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষার পাশাপাশি কোষাগার আরো সমৃদ্ধ করা, (৩) বিশ্বকাপের যথাযথ প্রস্তুতি সম্পন্ন করা।

আর ইংল্যান্ড কিন্তু একবারও বলেনি তারা বাংলাদেশ সফর বাতিল করল। বরং তারা সুবিধাজনক সময়ে এ দেশের আতিথ্য নেওয়ার কথা বলেছে। এই সুবিধাজনক সময় ২০২৩ সালের মার্চ মাস। তত দিনে এ দেশ করোনার অভিশাপ থেকে মুক্ত হলেও হতে পারে। সেটা হলে মাঠে দর্শক ফিরবে। সবাই যেহেতু নিজের ভালোটা বোঝেন, তাহলে কেউ কেন পরোপকার করতে গিয়ে নিজেকে পথে বসাবেন?

তা ছাড়া এই সফর দেড় বছর পেছানোয় লাভ কি শুধু ইংল্যান্ডের, বাংলাদেশের নয়? ওদের ক্রিকেটারদের মতো আমাদের সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমানও তো আইপিএল খেলার সুযোগ পাবেন। বিশ্বকাপের ‘পারফেক্ট প্রিপারেশন’ সারতে পারবেন তারাও। সাকিব তো এই কারণ দেখিয়েই শ্রীলঙ্কা সফর থেকে ছুটি নিয়েছিলেন। তবে দুজনের লাভ হলেও ক্ষতি হবে স্কোয়াডের বাকি ১৭ সদস্যের।

এখন কথা হলো - আফগানিস্তান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ হয়েও যদি ৭-৮ জন টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ ‘উৎপাদন’ করতে পারে; বিপরীতে বিসিবি বিশ্বের পঞ্চম শীর্ষ ধনী ক্রিকেট বোর্ড হয়েও যদি আইপিএলের যোগ্য, বিশ্বমানের কিংবা টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ ১৫ জন ক্রিকেটার ‘প্রসব’ করতে না পারে, তার দায় কি তিন মোড়ল ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের?

বিশ্বকাপের আগে এই খেলতে না পারায় আক্ষেপ অবশ্য বিসিবি অচিরেই ঘোচাতে পারে। ইংল্যান্ডের বদলে যে দল ওই সময় ফাঁকা থাকবে, তাদের আমন্ত্রণ জানাতে পারে। সেটা আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তান এমনকি আমাদের বিপদের বন্ধু জিম্বাবুয়েও হতে পারে। নাই মামার চেয়ে কানা মামা যেমন ভালো, ঠিক তেমন বড় দলের অপ্রাপ্যতায় একদম হাত-পা গুটিয়ে বসে না থেকে অপেক্ষাকৃত ছোট দলের বিপক্ষে খেলা ভালো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close