ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ২২ জুন, ২০২১

শেষ ওভার রোমাঞ্চে আবাহনীর হাসি

যে রোমাঞ্চের আশায় টেলিভিশনের সামনে খেলা দেখতে বসেন ক্রিকেটপ্রেমীরা, আবাহনী লিমিটেড ও গাজী গ্রুপের ম্যাচটা অনুরাগীদের তার সবটুকুই যেন ঢেল দিল! ম্যাচ একবার আবাহনীর দিকে হেলে পড়ল তো পরের বলেই গাজী গ্রুপের দিকে। কখনো আবার দুলতে থাকল পেণ্ডুলামের মতো। বারবার বদলাল যার রং। স্নায়ুচাপের মধ্যে হয়ে গেল বড় ভুল। বাজে শট, ওয়াইড, আলগা ডেলিভারি, মিস ফিল্ডিং আরো কত কী! উত্তেজনায় ঠাসা বহু বাঁক বদলের ম্যাচটা গড়াল শেষ ওভারে। তাতে এক বল অক্ষত রেখে দ্রুত দুই রান নিয়ে নাটকীয় জয়ের উচ্ছ্বাসে ভাসল আবাহনী। একপর্যায়ে নাগালে থাকা জয় শেষ পর্যন্ত ফসকে গেল গাজী গ্রুপের মুঠো থেকে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের (ডিপিএল) রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে তাদের বিপক্ষে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটির জয় ১ উইকেটে।

মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট গতকাল গাজী গ্রুপ অলআউট হয় ১৩০ রানে। এই পুঁজিতেই দারুণ জমে ওঠে ম্যাচ। শেষ ওভারে আবাহনীর প্রয়োজন ছিল ৯ রানের। হাতে উইকেট তখন দুটি। সেই সমীকরণ মেলান বাংলাদেশের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতা তানজিম হাসান সাকিব।

গাজী গ্রুপের বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদের করা অন্তিম ওভারের প্রথম বলে সিঙ্গেল নেন তানজিম। পরের বলে স্লগ সুইপে বাউন্ডারি মেরে দেন মেহেদী হাসান রানা। তৃতীয় বলে দুই রানের চেষ্টা নিতে গিয়ে রানআউটে কাটা পড়েন রানা। উইকেটে যান শেষ ব্যাটসম্যান আরাফাত সানি। ওভারের চতুর্থ বলে সানি নেন সিঙ্গেল। দুই বলে তখন প্রয়োজন ২ রান। পঞ্চম ডেলিভারিটি তানজিমের ব্যাটের ওপরের কিনারায় লেগে বল যায় এক্সট্রা কাভারের দিকে। দ্রুত দুবার প্রান্ত বদল করে জয়ের আনন্দে উড়াল দেন তানজিম ও সানি।

এই হারে গাজী গ্রুপ দায় দিতে পারে নিজেদেরই। ১৯তম ওভারের শেষ বলে মুকিদুল ইসলামের বলে ড্রাইভ করেন রানা। লং অফ থেকে ডানদিকে ছুটে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে বল ছেড়ে দেন মেহেদী হাসান। হওয়ার কথা দুই, হয়ে যায় চার। বাড়তি সেই দুই রান পরে হয়ে ওঠে মহামূল্যবান।

ওই মুকিদুলই আরো আগে দলকে যেমন হতাশায় ডোবান, তেমনি আশাও জাগিয়ে তোলেন। শেষ ৪ ওভারে আবাহনীর প্রয়োজন ছিল ৪৮ রান। ম্যাচে গাজী গ্রুপই এগিয়ে। মুকিদুল তখন করে বসেন ফুল টস, যেটি ছক্কায় ওড়ান নাজমুল হোসেন শান্ত। একই ওভারের চতুর্থ বলে ছক্কা মারেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। ওয়াইড হয় দুটি। সব মিলিয়ে ওই ওভার থেকে আসে ২২ রান!

পরের ওভারে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকেও যখন মাথার ওপর দিয়ে ছক্কায় ভাসান শান্ত, ম্যাচ তখন আবাহনীর নিয়ন্ত্রণে। ওই ওভারেই আবার বদলে যায় চিত্র। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন আফিফ (১৮ বলে ১৪)। পরের বলেই পয়েন্টে ক্যাচ দেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। সমীকরণ দাঁড়ায় দুই ওভারে ১৮ রান। এই ওভারে মুকিদুল আবার দেন তিনটি ওয়াইড। তবে শান্তকে ফিরিয়ে ম্যাচ জমিয়েও দেন তরুণ এই পেসার। এরপর ওই ফিল্ডিং মিস আর শেষ ওভারের নাটকীয়তা।

রান তাড়ায় পথ হারানো আবাহনীকে পথে ফেরানোর কৃতিত্ব শান্তরই। আসরে কয়েকটি ম্যাচে ঝড় তুলে আলোচিত ওপেনার মুনিম শাহরিয়ায় কাল ফিরে যান শূন্য রানে। প্রথম ওভারে নান্দনিক দুটি বাউন্ডারিতে শুরুর পর লিটন দাস থেমে যান ১৭ বলে ২২ করে।

১০ ওভার পর্যন্ত উইকেট ছিল ওই দুটিই। তবে রানও ছিল কেবল ৫৯। পরে মুকিদুল এক ওভারেই ফেরান অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে। বাঁহাতি নাঈম শেখকে যখন অ্যাঙ্গেলে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে বোল্ড করলেন মেহেদী হাসান, ত্রয়োদশ ওভারে আবাহনীর রান ৫ উইকেটে ৬৪! এরপর শান্তর ব্যাটেই জিইয়ে থাকে আবাহনীর আশা। শেষ পর্যন্ত তিনি না টিকলেও দল ছুঁয়ে ফেলে লক্ষ্য।

ম্যাচের প্রথম ভাগও গাজী গ্রুপের জন্য ছিল হতাশার। ওপেনিংয়ে ঝড় তুলতে পারেননি মেহেদী হাসান। দারুণ কিছু শট খেলে বড় কিছুর আশা জাগিয়ে আবার নিরাশ করেন সৌম্য সরকার (দুটি করে চার-ছক্কায় ২৪ বলে ৩০)। থিতু হয়ে আউট হন জাকির হাসানও। মিডল-অর্ডারে ব্যর্থ ইয়াসির আলি চৌধুরী ও মাহমুদউল্লাহ। টি-২০-তে চতুর্থবার চার উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি সাইফউদ্দিন করেন ক্যারিয়ারসেরা বোলিং। সাতে নেমে মুমিনুল হকের ১২ বলে ২৫ রানের ইনিংস গাজী গ্রুপকে এনে দেয় লড়াই করার মতো পুঁজি। লড়াই হলোও তুমুল। কিন্তু আবাহনীকে ঠেকানো গেল না।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

গাজী গ্রুপ

১৩০/১০, ১৯.১ ওভার

সৌম্য ৩০, মুমিনুল ২৫

সাইফউদ্দিন ৪/১৮, রানা ৩/৩২

আবাহনী লিমিটেড

১৩১/৯, ১৯.৫ ওভার

শান্ত ৫৮, লিটন ২২

মুকিদুল ৩/৩৮, মাহমুদউল্লাহ ২/১৯

ফল : আবাহনী লিমিটেড ১ উইকেটে জয়ী

ম্যাচসেরা : শান্ত (আবাহনী লিমিটেড)

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close