ক্রীড়া প্রতিবেদক রাজিবুল ইসলাম।

  ১৬ এপ্রিল, ২০২১

ডিজিটাল বাংলাদেশ সহজ করে দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস

গত বছর কোভিড-১৯-এর কারণে ‘বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস-২০২০’ স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছিল সরকার ও বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্রীড়াযজ্ঞ স্থগিত হওয়ার পর অন্ধকারে পড়ে প্রায় ১২ হাজার অ্যাথলেট। এক বছর পর সেই ‘বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস-২০২০’ শুরু হয় এই বছরের ১ এপ্রিল। কোভিড-১৯-এর এই কঠিন সময়ে কীভাবে এই আসর শুরু করার সাহস বা অনুপ্রেরণা পেল কর্তৃপক্ষ, সেটিই জানার চেষ্টা করেছেন প্রতিদিনের সংবাদের এই প্রতিবেদক। আয়োজকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে প্রতিদিনের সংবাদ জানতে পারে এই আসর শুরুর আগে ছিল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস-২০২০ শুরু আগের থেকেই আসরের প্রায় সব কার্যক্রমই ফেডারেশনগুলো করেছে অনলাইনের প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে। দেশের সবচেয়ে বড় ক্রীড়াযজ্ঞের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই বলেছেন দেশ আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ না হলে কোভিড-১৯-এর মধ্যে এই আসর শুরু বা শেষ করা সম্ভব হতো না। ‘বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস-২০২০’ এর পেছনে অবদান রাখা সেই ডিজিটাল বাংলাদেশের গল্পই লিখেছেন

কর্মজজ্ঞে ব্যস্ত পৃথিবী একদম শান্ত। কোথাও নেই কোনো উৎসব। নেই কোনো কলরব। থমকে আছে পৃথিবীজুড়ে শত শত খেলার মাঠ। কোভিড-১৯-এর ছোবলে ক্ষত-বিক্ষত পুরো বিশ্বের ক্রীড়াঙ্গন। কোভিড-১৯-এ সবার সঙ্গে আক্রান্ত প্রিয় বাংলাদেশও। মহামারির এই কঠিন সময়ে বন্ধ ছিল দেশের সব ক্রীড়াযজ্ঞ। গত বছর শুরু হওয়ার কথা ছিল ‘বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস-২০২০’। তবে কোভিড-১৯-এর ছোবলে থমকে যায় দেশের সবচেয়ে বড় এই ক্রীড়াযজ্ঞটি। দেশে কোভিড-১৯ ভয়াবহ রূপ দিলে হঠাৎ করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে গত ১২ মার্চ, ২০২০ এই আসরটি স্থগিত করে দেয় বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ)। তবে অদম্য ডিজিটাল বাংলাদেশ দেখায় নতুন স্বপ্ন। নিজের গতিতেই চলতে শুরু করল গেমসের সব কাজ। ডিজিটাল এই বাংলাদেশে সব কাজ অনলাইনেই শুরু করল আয়োজকরা। একটু একটু করে আগাতে থাকল ‘বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস-২০২০’ এর কাজ। পরে কোভিড-১৯-এর কঠিন সময়ের মধ্যেই ডিজিটাল বাংলাদেশের এই সময়ে স্থগিত সেই বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ)। এতে সমর্থন করেন প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনাও। কেননা আসরের সব কাজই এখন অনলাইনের মাধ্যমে করতে পারছে আসরে অংশ নেওয়া সব ক্রীড়া ফেডারেশন ও বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন।

ডিজিটাল বাংলাদেশের সেই মহেন্দ্রক্ষণ আসল এই বছরের ১ এপ্রিল সন্ধ্যায়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসের উদ্বোধন করেন। সেইসঙ্গে ডিজিটাল বাংলাদেশের মাধ্যমে পর্দা ওঠে ‘বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস-২০২০’ এর। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস-২০২০’ এ ডিজিটাল বাংলাদেশের বিশেষ অবদানের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “ডিজিটাল প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করা ছিল আমাদের অঙ্গীকার। আমরা সে লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি। এখন দেশের ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা ও জেলায় ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে জনগণকে সেবা দেওয়া হচ্ছে।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের মাধ্যমে আলোর মুখ দেখল বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস-২০২০। দেশের সব কাজ এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে করতে পারায় অনেকটাই সহজ হয়েছে এই গেমস। আশা করি ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশ আরো এগিয়ে যাবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এই আয়োজনটা ছিল মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সালে। কিন্তু হঠাৎ করে তখন করোনাভাইরাস এমনভাবে দেখা দিল যে আমরা বাধ্য হয়ে সেটা স্থগিত করে এইবার আমরা আয়োজন করেছি। যদিও আবার নতুনভাবে করোনা দেখা দিয়েছে, তবে আমি এইটুকু চাইব যে, সবাই আপনাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টা বিশেষভাবে নজরে রেখে সমস্ত খেলাগুলো আপনারা আয়োজন করবেন।’ প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘যেকোনো দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষকে উন্নতি করতে হলে সর্বদিকেই আসলে উন্নতি হওয়া দরকার এবং খেলাধুলা এক্ষেত্রে একান্তভাবে অপরিহার্য। বিশেষ করে আমাদের ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে যুব তরুণ তাদের জন্য একান্তভাবে অপরিহার্য।’

বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসের মশাল টুঙ্গিপাড়া থেকে প্রজ্বালন করায় বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন এবং বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস কমিটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসের মশালটা আপনারা প্রজ্বালিত করেছেন টুঙ্গিপাড়া থেকে, যে মাটিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং যে মাটিতে তিনি ঘুমিয়ে আছেন।

প্রতিদিনের সংবাদকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বর্তমান প্রজন্মের কিংবদন্তি ও আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার প্রধানমন্ত্রী নিজেও সব ধরনের খেলাধুলা অন্তঃপ্রাণ। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ নবম বাংলাদেশ গেমসের আয়োজনকে সফলভাবে সম্পন্ন করার পেছনে তিনি ছিলেন সব প্রকার অনুপ্রেরণার উৎস। তার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে বলেন, ‘দেশ আজ ডিজিটাল না হলে দেশের সবচেয়ে বড় ক্রীড়াযজ্ঞ আসর সফলভাবে শেষ করা সম্ভব হতো না। দেশ আজ ডিজিটাল তাই সব কাজ আধুনিক প্রযুক্তির দ্বারাই করা যাচ্ছে। যেমনটা করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস ২০২০-এ।’

বিওএ সভাপতি ও সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের বলেন, ‘প্রকৃতির এক বিরূপ পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসের সফল সমাপ্তি ঘটেছে। এটি একটি অত্যন্ত দুরূহ কর্ম, যা আগামী দিনের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে অনেক প্রতিভাবান নতুন মুখের সন্ধান পাওয়া গেছে, যাদের নিয়ে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখবে।’

ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে বিওএ সভাপতি ও সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। তার অক্লান্ত পরিশ্রমে দেশ আজ ডিজিটাল। দেশ যদি আজ ডিজিটাল না হতো তাহলে বঙ্গবন্ধু ৯ম বাংলাদেশ গেমস সফলভাবে সমাপ্তি ঘটত না।’

বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসের সাংগঠনিক কমিটির কো-চেয়ারম্যান এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নেতৃত্বে আমরা ক্রীড়াক্ষেত্রকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছি। গত বছর আমরা অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। তার নেতৃত্বে সাউথ এশিয়ান গেমসের রেকর্ডসংখ্যক পদক জিতেছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা একজন ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ। তিনি এসব পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড তার হাতে তৈরি। প্রধানমন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের ক্রীড়াঙ্গন এগিয়ে যাচ্ছে। করোনার মধ্যেও ক্রীড়ামোদী প্রধানমন্ত্রী ১০ কোটি টাকা দিয়েছেন। আমি বাংলাদেশ গেমসের সব ক্রীড়াবিদ ও আয়োজকদের ধন্যবাদ দিয়ে গেমসের সফলতা কামনা করছি।’

ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, ‘দেশ আজ ডিজিটাল বলেই আমরা কোভিড-১৯-এর কঠিন সময়ে আসরটি শেষ করতে পেরেছি। আর এর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’

বিওএর মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজন করা বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস আমরা সফলভাবে শেষ করতে পেরেছি। গেমসে ৩১টি খেলায় দেশের সেরা খেলোয়াড়রা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে। গত বছর উদ্বোধনের প্রাক্কালে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে গেমসের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। সরকারের সব প্রচেষ্টায় এবং মুজিববর্ষ উদ্যাপন ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করায় বাংলাদেশ গেমসটি আয়োজন করে শেষ করতে সক্ষম হয়েছি।’

ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে বিওএর মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘দেশ যদি আজ ডিজিটাল না হতো তাহলে ‘বঙ্গবন্ধুœবম বাংলাদেশ গেমস-২০২০, কখনো সফল হতো না। আসর শুরু হওয়া থেকে শেষ পর্যন্ত সব কাজ আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে করেছি। যার জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমরা চির কৃতজ্ঞ। কোভিড-১৯-এর কঠিন সময়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের পুরো সুবিধা আমরা ভোগ করেছি। যার জন্যই সফলভাবে শেষ হয়েছে বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস ২০২০।’

এবারের আসরে ৩৮০টি সোনার মধ্যে আনসার ১৩২টি সোনাসহ ২৬৯টি পদক জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। ১১৫টি সোনাসহ ২৯৭টি পদক জিতে দ্বিতীয় হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ৬৩টি সোনাসহ ১২৭টি পদক নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অবস্থান তিনে। বাংলাদেশ গেমসের ৯টি আসরের মধ্যে পাঁচটিতেই সেরা আনসার। এই আসরে পদক তালিকায় প্রথম হওয়ার লড়াইটা ছিল মূলত বাংলাদেশ আনসার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ আনসার গেমসে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখে।

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বলেই সম্ভব হয়েছে’ -আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রী

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ সব সহজ করে দিয়েছে’-জেনারেল আজিজ আহমেদ সেনাপ্রধান

‘ডিজিটাল বাংলাদেশে এগিয়ে যাচ্ছে ক্রীড়াঙ্গন’-জাহিদ আহসান রাসেল প্রতিমন্ত্রী, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ না হলে সব কঠিন হয়ে যেত’-সৈয়দ শাহেদ রেজা মহাসচিব, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close