প্রতিদিনের সংবাদ : আপনি তো একজন জাপানি। বাংলা পড়তে পারেন না। এর পরও ক্লাবের এমন দুর্দশার খবর কীভাবে জানলেন?
বাংলাদেশের ‘ফুটবল বন্ধু’ হয়ে থাকতে চাই
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের অধিনায়ক ইউসুকে কাতো
ইউসুকে কাতো : (স্মিত হাসি) এটা ঠিক যে আমি বাংলা মোটেও পড়তে পারি না। তবে অল্পস্বল্প বাংলা বলতে পারি। এ বিষয়টি আমার প্রথম দৃষ্টিগোচর হয়েছে ম্যানেজার আরিফুল ইসলামের মাধ্যমে। দেশের একটি জাতীয় দৈনিক ক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জাম্মেল হকের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। সেখানে তিনি বলেছেন, ক্লাবটিকে অর্থ সংকটময় পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে পৃষ্ঠপোষক খুঁজছেন। তখন বিষয়টা আমাকে ম্যানেজার অবগত করেছেন। এরপর আমার বুঝতে বাকি রইল না যে ক্লাবটিতে সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষক নেই। ক্লাবকে অন্যদের মতো স্বাবলম্বী করা দরকার। তার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। এরপর আমি ফেসবুকে ভিডিও বার্তার পাশাপাশি আমার মাতৃভাষায় স্ট্যাটাস দিয়েছি।
প্রতিদিনের সংবাদ : ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেই কোনো পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসবে এ বিশ্বাস কীভাবে জন্মাল?
ইউসুকে কাতো : আমি জেনেছি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জাপান বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছিল। এখনো বাংলাদেশ-জাপানের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সেতুবন্ধ যেভাবে রচিত হচ্ছে, তা অভূতপূর্ব। তাই আমার বিশ্বাস ছিল জাপনি ভাষায় লিখলে কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের ক্লাবটির পাশে দাঁড়াবে। ‘হিসাব’-এর প্রধান নির্বাহী বাংলাদেশি হলেও তার স্ত্রী একজন জাপানি। এই মিশ্রণ আমাদের প্রতি ওনাদের দৃষ্টি কেড়েছে সহজেই। আমি একজন জাপানি হিসেবে গর্ববোধ করি। কারণ, আমার ডাকে সাড়া দিয়ে একটি স্বদেশি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে।
প্রতিদিনের সংবাদ : একজন জাপানি হয়েও বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে কি কোনো স্বপ্ন দেখেন?
ইউসুকে কাতো : এ দেশের ফুটবল নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন আছে। বাংলাদেশের ‘ফুটবল বন্ধু’ হয়ে থাকতে চাই। পৃথিবীর অনেক দেশে ফুটবল খেলেছি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ফুটবল ক্লাব গঠনের নজির দেখিনি। আমি চাই তাদের স্মৃতি সব সময় অমøান থাকুক। ফুটবলের সৌজন্যে জাপান ও বাংলাদেশের অকৃত্রিম ভ্রাতৃত্ববোধ ফুটিয়ে তুলতে চাই।
প্রতিদিনের সংবাদ : বাংলাদেশের ফুটবলে আপনার আগমনের গল্পটা একটু বলুন।
ইউসুকে কাতো : ২০১৮ সালের কথা। এক বন্ধুর হাত ধরে প্রথমবার বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখি। চাইলে তখন আমি অনেক ক্লাবে ট্রায়াল দিতে পারতাম। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের নাম শুনে অন্যরকম শিহরন জাগল। সেখানে ট্রায়াল দিতেই সুযোগ পেয়ে গেলাম। অনেকটা এলাম, দেখলাম, জয় করলাম জাতীয় ব্যাপার। অভিষেক মৌসুমে ২১ ম্যাচে ৮ গোল করেছিলাম। পরের মৌসুমে খেললাম শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে। এই মৌসুমে আবার ফিরে এসেছি পুরোনো দলে। ক্লাবটি আমাকে অধিনায়কত্বের মতো মহান দায়িত্ব দিয়েছে। আমি চেষ্টা করব এর মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে।
প্রতিদিনের সংবাদ : আপনি তো ইংল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, ভারত, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোয়ও খেলেছেন। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা কতটা উপলব্ধি করছেন?
ইউসুকে কাতো : আপনাদের দেশের মানুষ ভীষণ রকম ফুটবলপ্রেমী। ঢাকার বাইরে নীলফামারীতে খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেখানে দর্শকদের উপচে ভিড় আমাকে মুগ্ধ করেছে। তবে এ দেশের মানুষ বিদেশের ফুটবলে আসক্ত। চ্যাম্পিয়নস লিগ, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে বুঁদ। আমি চাই তারা দেশীয় ফুটবলে আরো বেশি আগ্রহী হোক।
প্রতিদিনের সংবাদ : আপনার চোখে বাংলাদেশের ফুটবল কয়েক বছরে কতখানি উন্নতি করেছে?
ইউসুকে কাতো : খুব একটা উন্নয়ন চোখে পড়েনি। একেবারে মন্থর গতিতে এগোচ্ছে। ক্লাবের দিকে লক্ষ করলে দেখবেন বসুন্ধরা কিংস অনেক এগিয়েছে। তারা দিনের পর দিন উন্নতির সোপানে আরোহণ করছে। এমন চিত্র কিন্তু সব ক্লাবে নেই। বাংলাদেশ জাতীয় দলে জামাল ভূঁইয়ার খেলা বেশ গোছালো।
প্রতিদিনের সংবাদ : এ দেশের মানুষের আতিথেয়তা কেমন লাগছে?
ইউসুকে কাতো : আমি অনেক, অনেক... সন্তুষ্ট। এ দেশের মানুষের ভালোবাসায় খুব সাড়া পাচ্ছি। সবাই খুব অতিথিপরায়ণ। যত দিন সম্ভব বাংলাদেশেই খেলতে চাই।
"