ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ২১ জানুয়ারি, ২০২১

‘ফেরাটা সহজ ছিল না’

কাল সকাল থেকেই সাকিব আল হাসানের মুখে চওড়া হাসি। সতীর্থদের সঙ্গে খুনসুটি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডের মধ্য দিয়ে এ দিনই যে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরলেন এক বছরেরও বেশি সময় পর। ক্যামেরার লেন্স শুধু তাই সাকিবকেই খুঁজে বেরাল। এত দিন পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে নেমেছেন, সবাই আশা নিয়ে তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটের সেরা তারকার দিকে। এটা তো একটা চাপও! কিন্তু সাকিব যেন অন্য ধাতুতে গড়। এই চাপ হয়তো উল্টো উপভোগই করছিলেন তিনি। অথবা ওই চওড়া হাসিতে উড়িয়ে দিতে চাইছিলেন সব চাপ।

ম্যাচ শুরুর পরও হাসিটা মলিন হয়নি একটুও। মুস্তাফিজুর রহমান ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের ইনিংসের শুরু থেকেই চাপে রাখেন। উইকেট নেন দুটি, তাতে দল খুশি। খুশি সাকিবও। তিনি যখন বোলিংয়ে আসবেন, তখন নিশ্চয়ই নতুন ব্যাটসম্যানকে বল করার সুযোগ পাবেন। প্রত্যাবর্তন ম্যাচে বোলিং শুরু করার আগে মাঠে এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে!

সাকিব যা চাইলেন, তাই হলো শেষ পর্যন্ত। ব্যাটিং পাওয়ার প্লের পর যখন বোলিংয়ে এলেন, তখন ক্রিজে অ্যান্ড্রু ম্যাকার্থি ও অধিনায়ক জেসন মোহামেদ। দুজনই ডানহাতি। উইকেট দিয়ে নতুন শুরুটা রাঙানোর এমন সুযোগ হাতছাড়া করলেন না সাকিব। প্রথম ওভারেই সাইড স্পিন মেশানো একটি বল জেসনের ব্যাটের পাশ ঘেঁষে চলে যায় উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। মুস্তাফিজের তৈরি করা উইকেটের ক্ষতের সাহায্য ছিল অবশ্য। তবে ডানহাতি ব্যাটসম্যানের মনে ভয় ঢোকানোর জন্য সেটিই ছিল যথেষ্ট। জাতীয় দলের জার্সিতে ফিরেই উইকেট পেতে বেশিক্ষণ অপেক্ষাও করতে হয়নি সাকিবকে। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই আর্ম বলে বোল্ড করেন ম্যাকার্থিকে।

জেসন মোহামেদের উইকেটও যে সাকিবই নিতে যাচ্ছেন, সেটিও আঁচ করা যাচ্ছিল। সাকিবের ঘূর্ণিতে একদমই স্বচ্ছন্দ ছিলেন না ক্যারিবীয় অধিনায়ক। সাকিবের পঞ্চম ওভারে ঘূর্ণি আর বাউন্সে পরাস্ত হয়ে স্টাম্পড জেসন। পরের ওভারে সাকিবের শিকার এনক্রুমা বোনার। তার সেই চিরচেনা আর্মটি পড়তেই পারেননি সদ্য ক্রিজে আসা বোনার।

একের পর এক উইকেট নিতে থাকায় অধিনায়ক তামিমও সাকিবের বোলিং থামাতে চাইছিলেন না। প্রথম স্পেলে বল করিয়ে যান সাত ওভার পর্যন্ত। প্রথম স্পেলের বোলিং বিশ্লেষণটাই বলে দিচ্ছে এত দিন পর মাঠে ফিরেও সাকিবের বোলিং ঔজ্জ্বল্য হারায়নি একটুও : ৭ ওভার-২ মেডেন-৮ রান-৩ উইকেট। সফরকারীদের গুটিয়ে দিতে ৩৩তম ওভারে ফের আনা হয় সাকিবকে। দ্বিতীয় বলেই তিনি তুলে নেন ক্যারিবীয়দের শেষ উইকেট। সব মিলিয়ে তার বোলিং ফিগার দাঁড়ায় ৭.২ ওভার-২ মেডেন-৮ রান-৪ উইকেট।

বল হাতে সাকিবের প্রত্যাবর্তনটা যে রাজকীয়ই হলো, তাতে কোনো সন্দেহই নেই। বিরতির পর এর আগেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিব ফিরেছেন রাজার বেশে। এবারো সেটির ব্যতিক্রম হলো না। বোলিংয়ের পর ব্যাট হাতেও কিছু রান পেয়েছেন সাকিব। ফেরার দিনে এমন ঝলমলে পারফরম্যান্সে হয়েছেন ম্যাচসেরা। সব মিলিয়ে তৃপ্তিই ঝরল ৩৩ বছর বয়সি তারকার কন্ঠে, ‘ভালো লাগছে। ১৬-১৭ মাস পর (দেশের জার্সিতে) খেলাটা সহজ ছিল না। তবে যেভাবে পারফর্ম করেছি, আমি খুশি। বিষয়টা হলো, আমরা ১০ মাস কিছুই খেলিনি। তাই সবাই খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। শুরুতে সবাই উদ্বিগ্ন ছিল, একইসঙ্গে উত্তেজনাও কাজ করছিল।’

বোলিংয়ে সাফল্যের পেছনে সহজ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘আমার পরিকল্পনা ছিল সবকিছু যত সহজ রাখা যায়, যত ভালো জায়গায় বোলিং করা যায় এবং বাকিটা উইকেটের (পিচ) হাতে ছেড়ে দেওয়া।’

সাকিবের ৮ রানে ৪ উইকেট নেওয়ার দিনে আলো কেড়েছেন অভিষিক্ত হাসানও। পরপর দুই বলে দুই উইকেটসহ ২৮ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন ২১ বছর বয়সি হাসান। তার বোলিংয়ে মুগ্ধ সাকিবও। শুধু হাসান নয়, পাইপলাইনে থাকা অন্য তরুণ ফাস্ট বোলারদের ব্যাপারেও আশাবাদী এই শীর্ষ অলরাউন্ডার, ‘আমাদের পাইপলাইনে বেশ কয়েকজন ভালো পেসার আছে। তারা সিস্টেমের মধ্যেই তৈরি হচ্ছে। আমি সবশেষ বঙ্গবন্ধু টি২০ কাপ খেলেছি, তখন দেখেছি তরুণ পেসারদের। সবাই নিজেকে উজাড় করে দিয়ে বোলিং করেছে। আমি আর হাসান একই দলে ছিলাম। তাকে এমন বোলিং করতে দেখে সত্যি ভালো লেগেছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close