মনিরুল ইসলাম

  ১৬ জানুয়ারি, ২০২১

ক্রিকেট দিয়ে প্রতিবন্ধিতা জয় শিল্পীর

ক্রিকেটার তৈরির আঁতুড়ঘর রংপুর থেকে একসময়কার ‘বেস্ট ফিনিশার’ নাসির হোসেন, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের অধিনায়ক আকবর আলীদের মতো তারকা ক্রিকেটাররা উঠে এসেছেন। আলো জ্বালাচ্ছেন দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে। উত্তরাঞ্চলের এই জেলারই মেয়ে নূরজাহান আক্তার শিল্পী। অদম্য সাহসী শিল্পী একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও হুইলচেয়ার ক্রিকেট দিয়ে এগিয়ে গেছেন বহু দূর।

অথচ মাত্র চার বছর বয়সে পোলিও রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর বাঁ পায়ে মারাত্মক সমস্যায় পড়েছিলেন শিল্পী। বাবা-মা অনেক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্মম নিয়তির কাছে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে। এরপর থেকে হাঁটা-চলার একমাত্র ভরসা ছিল ক্রাচ। এত প্রতিবন্ধকতার পরও পিছপা হননি শিল্পী। ভাঙা মন নিয়ে বসে থাকেননি ঘরের কোণে। এখন নানা কর্মকা-ের মাধ্যমে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি।

বাংলাদেশ হুইলচেয়ার ক্রিকেট দলের প্রতিষ্ঠাতা ও অধিনায়ক মোহাম্মদ মহসিনের হাতে গড়া শিল্পী। এখন রংপুর নারী হুইলচেয়ার দলের অপরিহার্য সদস্য ৩৫ বছর বয়সি এই নারী। এ ছাড়া চারটি বিভাগ নিয়ে গঠিত নারী হুইলচেয়ার দলেরও সক্রিয় সদস্য। এ ছাড়া বহু সেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত আছেন। বর্তমানে ‘নারী সুরক্ষা বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর সভাপতির দায়িত্বে আছেন। এখানেই শেষ নয়। পড়াশোনাও সমান তালে চালিয়ে গেছেন। উত্তরবঙ্গের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ কারমাইকেল কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেছেন। এখন ডাক্তার ইয়াসিন আলী সামছুল হক মাস্টার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিজম বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োজিত আছেন। ২০১৫ সালে জাপানে অনুষ্ঠিত হ্যান্ডি ম্যারাথনে অংশগ্রহণ এখন পর্যন্ত সেরা প্রাপ্তি তার।

সম্প্রতি প্রতিদিনের সংবাদকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নূরজাহান আক্তার শিল্পী বলেন, ‘আমি নিজেকে কখনো প্রতিবন্ধী মনে করি না। আমার আশপাশের আট-দশটা ছেলেমেয়ের মতো স্বাভাবিক ভাবি। আমাদের রংপুরে মহসিন ভাই যে নারী হুইলচেয়ার দল গঠন করেছেন, সেটার কার্যক্রম আপাতত স্থবির হয়ে পড়েছে। একদিকে করোনা অন্যদিকে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। তাই আমি এখন বিভিন্ন সেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে আছি। মানবতার সেবায় নিজেকে উজাড় করে দিতে সব সময় প্রস্তুত। স্বপ্ন আছে প্রতিবন্ধীদের জন্য একটা আশ্রম খুলব। কারণ, আমাদের দেশের বেশির ভাগ প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়ে অবহেলিত, নিগৃহীত। পরিবার-সমাজে তাদের ঠিকমতো মূল্যায়ন করা হয় না। আমি তাদের নিয়ে কাজ করতে চাই। জানি না কতদূর এগোতে পারব। তবু স্বপ্ন দেখতে দোষ কোথায়?’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close