reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০

বিপিএল খেলার স্বপ্ন দেখেন কুয়েতের মোরশেদ

প্রতিদিনের সংবাদ : আপনি তো কুয়েত জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। এই পর্যায়ে আসার পেছনের গল্পটুকু একটু বলুন?

মোরশেদ মোস্তফা : কুয়েত ক্রিকেটে আমি প্রথমে অনূর্ধ্ব-১৬, এরপর অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলেছি। শুরুতে দুবার দলে জায়গা করে নিতে পারিনি। পরে হঠাৎ ওমানের বিপক্ষে খেলার জন্য নির্বাচকরা আমাকে ডাকলেন। তখন দলে পেস বোলারের ব্যাপক অভাব ছিল। আমি তখন মাত্রই বোলিং শুরু করেছি। একেবারে আনাড়ি বোলার হলেও মোটামোটি সন্তোষজনক বোলিং করতাম। আমি মূলত ব্যাটসম্যান। তারপরও আমার বোলিংয়ে কোচ আকৃষ্ট হন। যার ফলে আমাকে সেরা ৩২ জনের স্কোয়াডে সুযোগ করে দেন। কিন্তু আমি সেখান থেকেও ছিটকে যাই। শেষমেশ কুয়েত দল দুভাগে ভাগ হয়ে প্রীতি ম্যাচ আয়োজন করে। আমি একটা দলের হয়ে খেলার সুযোগ পাই। বলা যায়, ওটাই ছিল আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। কারণ, ওই ম্যাচে আমি টানা ৪ ছক্কা হাঁকাই। তখন কোচের সুনজরে পড়ি। এরপর ধীরে ধীরে সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যাই। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

প্রতিদিনের সংবাদ : একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হয়ে ভিনদেশি ক্রিকেট দলে খেলছেন। নিশ্চয়ই এটা আপনার জীবনের বড় প্রাপ্তি?

মোরশেদ মোস্তফা : নিঃসন্দেহে বলতে পারি এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। এই জন্য ওপরওয়ালার কাছে অশেষ শুকরিয়া জ্ঞাপন করি। আমার চেয়ে অনেক ভালো খেলোয়াড় জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ পায়নি। এদিক থেকে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি।

প্রতিদিনের সংবাদ : আপনার ক্রিকেটে আসার পেছনে কে বা কারা বেশি উৎসাহ দিয়েছিলেন?

মারশেদ মোস্তফা : আমার এই অবস্থানে আসতে বেশি সাপোর্ট দিয়েছে বাবা ও ছোট ভাই। তারা সবসময় দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যেতে সাহস জুগিয়েছিল। তাদের সে ভালোবাসার ঋণ শোধ করার সাধ্য নেই। তবু তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।

প্রতিদিনের সংবাদ : বর্তমানে ক্রিকেট ছাড়া কিসের সঙ্গে যুক্ত আছেন?

মোরশেদ মোস্তফা : খেলার বাইরে আমি ব্যবসায় সময় দিচ্ছি। বাবার একটা ফ্যাক্টরি আছে। সেখানে রাতে ডিউটি করি। ব্যবসা-বাণিজ্যে একটুখানি অভিজ্ঞতা অর্জনের চেষ্টা করছি। বলতে পারেন, ব্যবসায় বেশ ভালো সময় পার করছি।

প্রতিদিনের সংবাদ : আপনি নিশ্চয়ই জানেন, বাংলাদেশে নিয়মিত বিপিএল আয়োজিত হয়ে থাকে। অনেক বিদেশি ক্রিকেটার বিপিএল খেলার জন্য মুখিয়ে থাকেন। আপনার কি এরকম স্বপ্ন দেখেন?

মোরশেদ মোস্তফা : বিপিএল আমি প্রতি বছরই দেখি। অনেক নামীদামী তারকা সেখানে খেলেন। তারা চোখ ধাঁধানো পারফরমেন্স করেন। খুব জমজমাট হয় এই আসরটি। অবশ্যই আমিও স্বপ্ন দেখি। এত বড় আসরে কে না খেলতে চায়? আমিও তাদের ব্যতিক্রম নই। আমার বয়স সবে ২২ বছর। যতদূর জানি, ২৫ বছরের আগে খেলোয়াড়দের সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। তাই আমি এখনো আশাবাদী। কোনো না কোনো দিন হয়তো আমারও সুযোগ আসবে।

প্রতিদিনের সংবাদ : কুয়েত ক্রিকেটে সুযোগ-সুবিধা কেমন?

মোরশেদ মোস্তফা : আলহামদুলিল্লাহ্, যারপরনাই ভালো বলতে পারি। এখন পর্যন্ত কোনো ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়নি। আমি বোর্ডের চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার। বোর্ডই আমাকে বেতন দেয়। কুয়েত ক্রিকেটের সব বন্দোবস্তে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা যায়। ইনশাআল্লাহ্, সামনে আরো ভালো কিছু আশা করি।

প্রতিদিনের সংবাদ : আপনার পরিবারে কে কে আছেন?

মোরশেদ মোস্তফা : আমি, বাবা, মা আর ছোট ভাই। বাবা আপাদমস্তক বাংলাদেশের সন্তান। আর মা শ্রীলঙ্কান। সবাই মিলে খুব সুখে-শান্তিতে জীবন কাটাচ্ছি। সামনে এভাবে মায়ার জালে সবাই যেন এক থাকতে পারি, ওপরওয়ালার কাছে এই কামনাই করি।

প্রতিদিনের সংবাদ : বাংলাদেশ ক্রিকেটের কেমন উন্নতি দেখছেন? দলটার সক্ষমতা নিয়ে কিছু বলুন?

মোরশেদ মোস্তফা : আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলা ২০০৭ সাল থেকে দেখি। সেই আব্দুর রাজ্জাক ভাইয়ের আমল থেকে। বাংলাদেশের খেলা আগের চেয়ে ঢের উন্নতি হয়েছে। এটা অকপটে বলতে পারি। তবে দলটা আরো ভারসাম্যপূর্ণ করে তুলতে হলে হার্দিক পান্ডিয়া, মার্কাস স্টয়নিস, শেন ওয়াটসনের মতো মিডিয়াম পেস বোলিং অলরাউন্ডার থাকা জরুরি মনে করি। তাছাড়া দু-একজন লেগ স্পিনার হলে আরো মজবুত হবে দলটা। লক্ষ্য করে দেখবেন, ভারত-পাকিস্তান-আফগানিস্তান-ইংল্যান্ডে লেগ স্পিনারের ব্যাপক কদর রয়েছে। তারা রীতিমতো স্পিন দিয়েই প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছে। আরেকটি বিষয়, বাংলাদেশে আহামরি কোনো ফিনিশার এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি। ফিনিশারের অভাবে বহু ম্যাচে তীরে এসে তরী ডুবেছে বাংলাদেশের। তাই বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের উচিত মারকুটে ফিনিশার খুঁজে বের করা। তবেই আরো শক্তিশালী দলে পরিণত হবে বাংলাদেশ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close