বিচিত্র কুমার

  ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

সরস্বতীর হংস রাজা

সরস্বতী দেবীর আশ্রম ছিল এক অপূর্ব শান্তির স্থান। সেখানে ছিল বকুল ফুলের বন, সরোবরের স্বচ্ছ জল, আর নানা রঙের পাখিদের কলকাকলি। আশ্রমের সবচেয়ে স্নিগ্ধ ও জ্ঞানী বাসিন্দা ছিল এক শুভ্র হংস, যার নাম সবাই স্নেহভরে ডাকত- হংস রাজা। সে ছিল সরস্বতী দেবীর প্রিয় বাহন, আর জ্ঞানের আলোয় আলোকিত এক মহান নেতা।

হংস রাজা শুধু গায়ের রঙে শুভ্র ছিল না, তার মনও ছিল ততটাই পবিত্র। সে নিয়মিত সরস্বতী দেবীর কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করত- সত্য, নীতি ও জ্ঞানের মূল্য সম্পর্কে। অন্য পাখিরা যখন নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকত, তখন হংস রাজা শিখত কিভাবে ন্যায়বিচার করতে হয়, কিভাবে ধৈর্য ধরে সঠিক পথ বেছে নিতে হয়।

একদিন আশ্রমের বকুল বনে তুমুল ঝগড়া শুরু হলো। কাক, ময়না আর শালিক- তিনজনই দাবি করল, তাদের মধ্যেই একজন হওয়া উচিত পাখিদের নেতা। কাক বলল, ‘আমি সবচেয়ে বুদ্ধিমান, তাই আমিই নেতা হওয়ার যোগ্য!’ ময়না বলল, ‘আমার মতো মিষ্টি ভাষায় কথা কেউ বলতে পারে না, আমিই উপযুক্ত!’ শালিক বলল, ‘আমি শান্ত ও সুন্দর, তাই নেতৃত্বের ভার আমারই নেওয়া উচিত!’

কিন্তু বনের অন্য পাখিরা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছিল না। তাই সবাই একসঙ্গে গেল হংস রাজার কাছে বিচার চাইতে।

হংস রাজা ধীরস্থিরভাবে সবাইকে শুনল, তারপর বলল, ‘নেতা হতে গেলে শুধু বুদ্ধি, সৌন্দর্য বা কথা বলার ক্ষমতা থাকলেই চলে না। প্রয়োজন সত্যের প্রতি নিষ্ঠা, ধৈর্য এবং শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়া। আমি তোমাদের তিনটি প্রশ্ন করব, যার উত্তর সঠিকভাবে দিতে পারবে, সে-ই হবে নেতা।’

প্রথম প্রশ্ন ছিল, ‘সত্য কী?’

কাক বলল, ‘যা আমার উপকারে আসে, তাই সত্য।’

ময়না বলল, ‘যা সবাই পছন্দ করে, সেটাই সত্য।’

শালিক বলল, ‘সত্য কখনো বদলায় না, যা ন্যায়ের পথে থাকে, সেটাই সত্য।’

দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, ‘সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস কী?’

কাক বলল, ‘খাবারই সবচেয়ে মূল্যবান।’

ময়না বলল, ‘ধন-সম্পদ ছাড়া কেউ কিছু করতে পারে না, তাই সেটাই সবচেয়ে মূল্যবান।’

শালিক বলল, ‘শিক্ষা সবচেয়ে মূল্যবান, কারণ এটা চিরস্থায়ী।’

তৃতীয় প্রশ্ন ছিল, ‘সবচেয়ে বড় শক্তি কী?’

কাক বলল, ‘বুদ্ধিই সবচেয়ে বড় শক্তি।’

ময়না বলল, ‘মিষ্টি কথা বলার শক্তি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

শালিক বলল, ‘ধৈর্য সবচেয়ে বড় শক্তি, কারণ ধৈর্য ছাড়া কেউ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।’

হংস রাজা মৃদু হেসে বলল, ‘শালিকের উত্তরই সবচেয়ে সঠিক। সত্য কখনো বদলায় না, শিক্ষা কখনো নষ্ট হয় না, আর ধৈর্যই প্রকৃত শক্তি। যে সত্যের পথে চলে, শিক্ষা অর্জন করে এবং ধৈর্য ধরে, সে-ই প্রকৃত নেতা হতে পারে।’

পাখিরা হংস রাজার বিচার শুনে মুগ্ধ

হলো। কাক বুঝতে পারল যে শুধু চাতুর্যই সব নয়, ময়নাও বুঝল যে শুধু মিষ্টি কথা দিয়ে রাজত্ব করা যায় না। তারা সবাই শালিককে তাদের নেতা হিসেবে মেনে নিল।

সেদিন থেকে সরস্বতীর আশ্রমে সবাই সত্য, শিক্ষা আর ধৈর্যের পথ অনুসরণ করার শপথ নিল। আর হংস রাজা চিরকাল এক মহান বিচারক ও শিক্ষকের আসনে রয়ে গেল, জ্ঞানের শুভ্র আলো ছড়িয়ে দিতে লাগল অনন্তকাল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close