মুহিতুল ইসলাম মুন্না
জোনাকির আলো আর সূর্যের অহংকার

একসময় একটি গভীর বনে বাস করত সূর্য আর জোনাকি। সূর্য তার শক্তিশালী আলো ও তাপে পুরো বনকে আলোকিত করত। সে বনের সবচেয়ে সম্মানিত এবং শক্তিশালী বলে গর্ব করত। তার মতে, বনের সবাই তার ওপর নির্ভরশীল।
একদিন সূর্য বলল, ‘আমার আলো ছাড়া কেউ এক মুহূর্তও থাকতে পারবে না। আমি সবার জীবনদান করি। এর চেয়ে বড় দায়িত্ব আর কী হতে পারে?’
বনের সবাই সূর্যের প্রশংসা করল। জোনাকি, যে রাতে আলো দেয়, সেটিও তার পাশে ছিল। ছোট হলেও সে তার কাজ নিয়ে গর্ব করত। সূর্যের কথা শুনে জোনাকি মুচকি হেসে বলল, ‘তুমি দিনের বেলা আলো দাও ঠিকই, তবে রাতের সময়ও কিছু প্রাণীর আলোর দরকার হয়। সেই দায়িত্ব আমরা ছোট জোনাকিরা পালন করি।’
সূর্য হেসে বলল, ‘তোমাদের আলো তো এত ক্ষুদ্র যে তা কারো উপকারে আসে বলে মনে হয় না। বনের প্রয়োজন পূরণের ক্ষমতা শুধু আমিই রাখি।’
জোনাকি কষ্ট পেলেও কিছু বলল না। সে ঠিক করল, নিজের কাজ চালিয়ে যাবে।
কিছুদিন পর বনে ঘন মেঘের কারণে সূর্য কয়েক দিন আলো দিতে পারল না। দিনের বেলাতেও চারপাশ অন্ধকার হয়ে গেল। এই অন্ধকারে বনের প্রাণীরা খাবার খুঁজে পেতে এবং নিরাপদে চলতে গিয়ে সমস্যায় পড়ল।
অতঃপর এক রাতে, জোনাকি দল তৈরি করে তাদের ক্ষুদ্র আলো নিয়ে বনের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ল। বনের গাছের ওপর, পথের ধারে, এমনকি গুহার ভিতরেও জোনাকিদের আলো দেখা গেল। ছোট ছোট আলোগুলো একত্র হয়ে পুরো বনকে আলোকিত করে তুলল। প্রাণীরা নিরাপদে চলাফেরা করতে পারল।
তখন বনের সবাই জোনাকির প্রশংসা করতে লাগল। তারা বলল, ‘তোমাদের আলো ক্ষুদ্র হলেও আমাদের অনেক উপকার করেছে। ছোট হলেও তোমাদের গুরুত্ব অনেক বেশি।’
এ ঘটনা শুনে সূর্যের অহংকার কিছুটা ভেঙে গেল। সে বুঝতে পারল, সবার কাজের নিজস্ব গুরুত্ব আছে। সূর্য সবার সামনে জোনাকির কাছে ক্ষমা চাইল এবং বলল, ‘তোমাদের কাজ সত্যিই অসাধারণ। আমি ভুল বুঝেছি। রাতের সময় তোমাদের আলোর মূল্য বনের সবাই অনুভব করেছে। সবার অবদানকে সম্মান করতে শেখা উচিত।’
জোনাকি বলল, ‘কেউ ছোট বা বড় নয়। যেটা আসল তা হলো, আমরা আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করি। কেউ না দেখলেও, সঠিক কাজের ফল একদিন নিজে থেকেই প্রকাশ পাবে।’
"