ফারুক হোসেন সজীব
বইমেলা প্রাণের মেলা

ছোট্ট রাহুল আজ ভীষণ উচ্ছ্ব¡সিত। কারণ সে আজ আম্মুর সাথে বইমেলাতে যাবে। রাহুল কত দিন ধরে এই দিনটির অপেক্ষায় ছিল। কত শত প্লান করে রেখেছে সে বইমেলাকে ঘিরে। এসব প্লান বাস্তবায়ন করার সময় চলে এসেছে। রাহুলের আর একটুও দেরি সহ্য হচ্ছে না। বিকেল তিনটার দিকে রাহুল আম্মুর সাথে বইমেলাতে প্রবেশ করলো। বইমেলাতে ঢুকেই রাহুলের চোখ ছানাবড়া। চারদিকে শুধু বইয়ের স্টল আর স্টল। গতবারও রাহুল বইমেলাতে এসেছিল। কিন্তু এবার যেন সব কিছু একটু অদ্ভুত আর নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে। স্টলগুলো দেখেই চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। থরে থরে বই সাজানো রয়েছে। কত মানুষের ভিড়।
আম্মু রাহুলের হাত ধরে বললেন, এখানে তোমার পছন্দের অনেক বই পাবে রাহুল। তুমি যেটা পছন্দ করবে আমি তোমাকে সেটাই কিনে দেব।
শুনে রাহুল বলল, সত্যি!
হ্যাঁ! একদম সত্যি! রাহুল খুব আগ্রহ নিয়ে একটি স্টলের দিকে এগিয়ে গেল। চারদিকে শুধু বই আর বই। সামনে বই পিছনে বই। যেন বইয়ের বিশাল রাজ্য। রাহুল আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলল, আমার তো সব বই পছন্দ আম্মু। শুনে আম্মু হেসে বললেন, সব তো কিনে দিতে পারব না রাহুল। তোমার সবচেয়ে যে বই পছন্দ আমাকে বল আমি সেটা কিনে দেব। হঠাৎ রাহুলের একটি বইয়ে চোখ আটকে গেল। বইয়ের নাম, ‘বিজ্ঞান ও প্রকৃতি’। বইটির প্রচ্ছদে সুন্দর ছবি আঁকা। রাহুল বইটি হাতে তুলে নিল। আম্মুকে বলল, এটা আমার চাই! আম্মু মুচকি হেসে বললেন, আরো কিছু বই তোমাকে কিনে দেব। তুমি পছন্দ কর। তারপর রাহুল দেখে দেখে অনেক বই কিনলো। সেখানে শিশুতোষ বই ছাড়াও আরো অনেক রকমের বই ছিল। তারপর রাহুল বলল, আজ আর কিনব না আম্মু। এখন চলো আমরা মেলা ঘুরে ঘুরে দেখি। তারপর রাহুল আম্মুর সাথে আরো বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল। প্রতিটি বইয়ের প্রচ্ছদ রাহুলকে আকৃষ্ট করছিল। কিন্তু বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে রাহুল সবচেয়ে বেশি চিন্তিত ছিল। কারণ কোন বইটি কী প্রসঙ্গে! রাহুলের কিছুই জানা নেই।
তবে একটি স্টলের দৃশ্য দেখে রাহুলের ভীষণ ভালো লাগল! সেখানে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বসে বই পড়ছে। একজন লেখক সেখানে বসে আছেন। উনার নতুন বইটির ওপর আলোচনা করছেন। রাহুল সাহস করে উনার দিকে এগিয়ে গেল। আম্মু রাহুলকে নিষেধ করলেন না। রাহুল লেখককে গিয়ে বললেন, স্যার! আপনার বইটি অনেক ভালো হবে মনে হচ্ছে। আমি কি একটু পড়তে পারি? লেখক রাহুলকে আদর করে বললেন, অবশ্যই! তুমি পড়তে পারো! রাহুল কিছুক্ষণ বইটি পড়ে। বইটির প্রেমে পড়ে গেল। রাহুল বলল, ওয়াও! কী অসাধারণ বই! রাহুল আম্মুকে বলল, আমি এটা নিতে চাই! আম্মু মুচকি হেসে বললেন, বেশ তো নিয়ে নাও! রাহুল বইটি নিয়ে লেখককের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, প্লিজ! আমাকে অটোগ্রাফ দিন। লেখক হেসে বইয়ে অটোগ্রাফ দিলেন। অটোগ্রাফে লিখলেন- ‘ক্ষুদে পাঠক রাহুল! তোমার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।’
তারপর রাহুল বইমেলাতে আম্মুর সাথে আরো অনেক সময় ঘুরলো। বইমেলা ঘুরতে ঘুরতে রাহুল এক নতুন অনুভূতি লাভ করল। তার মনে হলো, বইগুলো শুধুই বই-ই নয়। এগুলো যেন জীবনের পথপ্রদর্শক। রাহুল ঠিক করল, রাহুল প্রতিদিন অন্তত একবার হলেও বইমেলাতে আসবে। নতুন নতুন বইগুলো সমন্ধে আরো বেশি করে জানবে। কারণ বই মানুষের প্রিয় সঙ্গী। বই মানুষকে কখনো কষ্ট দেয় না। বরং জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিয়ে জীবনকে উপভোগ্য করে তোলে। প্রাণের বইমেলাতে এসে রাহুলের ভীষণ ভালো লাগল। এই ভালো লাগার অনুভূতি সত্যি কোনোভাবেই যেন ব্যক্ত করা যায় না! তারপর রাহুল ভীষণ উচ্ছ্বসিত মনে আম্মুর সাথে বাড়ি ফিরলো!
"