আমিনুল ইসলাম হুসাইনী

  ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

শুঁয়োপোকার ইচ্ছাপূরণ

ওর নাম শুঁয়ো পোকা। দেখতে কিছুটা নাদুস-নুদুস ও লম্বাটে। আর কিছুটা ধীরগতির। সে জন্যে পিঁপড়ের দল ওকে রেলগাড়ি ডাকে।

শুঁয়ো পোকা তেমন কাজ করে না। সারাক্ষণ পাতা চিবিয়ে খায়। খাওয়া শেষ হলে মুখ ভার করে বসে থাকে। আর ভাবে- ইশ, আমি যদি ফড়িং হতাম! মৌমাছির মতো ফুলের সুবাস নিতে পারতাম!

এক বিকেলে কিছু ঝরাপাতা উড়ছিল। তা দেখে শুঁয়ো পোকারও উড়তে ইচ্ছে করে। সে পাতার ওপর লাফাতে থাকে। কিন্তু ডানা না থাকায় উড়তে পারল না। তখন গাছে থাকা একটা গেঁছো শামুক বলল- তোমার তো ডানা নেই, তাহলে উড়তে চাচ্ছো কেন? এমন পাগলামির মানে আছে?

শুঁয়ো পোকা শামুকের ওপর খুব বিরক্ত হল। বলল, নিজের চড়কায় গিয়ে তেল দাও!

এই বলে শুঁয়ো পোকা আবারো লাফ দেয়। আর তখনই পাতা ফসকে মাটিতে পড়ে যায়। ধপাস করে একটা শব্দ হল। শুঁয়ো পোকা কঁকিয়ে ওঠল- ও মাগো! মরে গেলাম গো...!

ভাগ্যিস, গেছো শামুকটা জেদ করে চলে যায়নি। ও জলদি নিচে নেমে এল। কি একটা ওষুধ শুঁয়ো পোকাকে খাইয়ে দেয়। শুঁয়ো পোকার ব্যথা কমে। তখন শামুক বলল- আমার কথায় রাগ কর না। আসলে প্রকৃতি ভালো করেই জানে, কখন তোমার কী প্রয়োজন। সময়ের অপেক্ষা কর। দেখবে, একদিন ঠিক উড়তে পারছো।

পরদিন সকাল।

সূর্য হাসলো পূবের আকাশে। সূর্য তো নয়, যেন টুকটুকে লাল টমেটো। শুয়ো পোকারও ঘুম ভাঙল। ঘুম ভাঙতেই খুউব ক্ষুধা পেল তার। কিন্তু ডালে কোনো পাতা ছিল না। শুঁয়ো পোকা গাছের নিচে তাকাল। দেখল- কি সুন্দর সবুজ ঘাস। নরম রোদে চকচক করছে। শুঁয়ো পোকা বুকে ভর দিয়ে নিচে নেমে আসে। তারপর কুটকুট করে দুর্বাঘাস খেতে শুরু করে।

গাছের নিচে ছিল লাল পিঁপড়ের দল। ওরা শস্যকণা খুঁজছিল। শুঁয়ো পোকাকে দেখতে পেয়ে কি যে খুশি হল। সবাই এক সাথে বলে ওঠল- রেলগাড়ি চলে এসেছে, রেলগাড়ি চলে এসেছে।

ওরা শস্যকণার বোঝাগুলো শুঁয়ো পোকার পিঠে তুলে দিল। আর শুঁয়োকে বলল, খাবারগুলো এখনই ঢিবিতে পৌঁছে দাও। নাহলে এমন কামড় দেব...

শুঁয়ো পোকা কিছুই বলল না। বোঝাগুলো নিয়ে রেলগাড়ির মতো চলতে শুরু করল। এভাবেই কেটে যায় বেশ কিছু দিন। তারপর ঘন কুয়াশার পালকিতে চড়ে নেমে আসে শীত। এক এক করে ঝড়ে পড়ে গাছের সব পাতা। গাছ হয় রিক্ত, বিবর্ণ। তা দেখে শুঁয়ো পোকার দুঃচিন্তা হয়। ভাবে- পাতা না থাকলে খাব কী?

শুঁয়ো পোকার এমন কষ্টের দিনে পিঁপড়েরা এগিয়ে আসে। ওরা নিজেদের জমানো খাবার থেকে কিছুটা শুঁয়োকে দিয়ে দেয়। আর বলে, আমাদের ভুল বোঝ না ভাই। সেদিন তোমাকে দিয়ে কাজ না করালে, আজ কোথা থেকে খাবার দিতাম?

পিঁপড়েরা বিদায় নিয়ে গর্তে চলে যায়। পুরো শীত ওখানেই কাটাবে।

গুবরে পোকারা চলে যায় ফলের বাগানে। গেছো শামুকটাও একটু পরে খোলসে ঢুকে যাবে। তাই শুঁয়ো পোকার কাছে এসে বলল, সাবধানে থেকো। গাছ ছেড়ে কোত্থাও যেয়ো না। দু-একদিনের মধ্যেই তোমার রুপান্তর প্রক্রিয়া শুরু হবে। মানে তুমি খুব জলদি উড়তে পারবে।

এ কথা শুনে শুঁয়ো পোকা কি যে খুশি হল। খুশিতে নাচতে শুরু করল। নাচতে নাচতে বলল, সত্যিই আমি উড়তে পারব?

হ্যাঁ, সত্যিই উড়তে পারবে। তবে তার জন্যে আরেকটু অপক্ষো করতে হবে।

এই বলে গেছো শামুক একটু চুপ থাকল। কিছু একটা ভাবল। তারপর বলল- আরেকটা কথা; তোমার যখন খুব ঘুম পাবে, তখন একটা শক্ত ডাল দেখে ঘুমিয়ে যেয়ো।

শুঁয়ো পোকা মাথা কাৎ করে বলল- আচ্ছা।

ঠিক দুদিন পড়েই শুঁয়ো পোকার খুবই ঘুম পেল। এমন ঘুম আর কখনো আসেনি। শুঁয়ো পোকা শক্ত একটা ডাল বেছে নিল। তারপর সেই ডালে লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

দিন যায়, রাত আসে। সাপ্তাহ পেরোয়। কিন্তু শুঁয়ো পোকার ঘুম ভাঙে না। এভাবে কেটে যায় বেশ কিছু দিন।

এক সকালে।

গেছো শামুক ও পিঁপড়ের দল শুঁয়োকে দেখতে এল। শুঁয়ো তখনো বিভোর ঘুমে।

সূর্য উঠল। চারদিক ফর্সা হলো। শুঁয়ো পোকারও ঘুম ভাঙল। লেপ থেকে মাথা বের করে দেখল- সূর্য উঠে গেছে। ডাল ভরে গেছে সবুজ পাতায়।

শুঁয়ো পোকা লেপ থেকে বের হতে চাইল, কিন্তু পারল না। লেপটা যেন আঠার মতো লেগে আছে। শুঁয়ো পোকা আবারো চেষ্টা করল। কিন্তু লেপ থেকে বের হতে পারল না। তখন গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা পিঁপড়েগুলো বলল- ও শামুক দাদা, শুঁয়ো পারবে তো?

গেছো শামুক মাথা দুলিয়ে বলল, খুউব পারবে। যদিও একটু কষ্ট হচ্ছে। এতটুকু কষ্ট সইতে না পারলে, কী করে ইচ্ছেপূরণ হবে?

পিঁপড়ের দল, গুবরে পোকা এবং গেছো শামুক; সবার দৃষ্টি শুঁয়ো পোকার ওপর। সবার চোখেমুখে কৌতুহল- শুঁয়ো পারবে তো!

ঠিক তখনই শুঁয়ো পোকা লেপের মতো আবরণটাকে ছিঁড়ে ফেলল। কিন্তু একি! এ তো শুঁয়ো পোকা নয়। এ যে আস্ত একটা প্রজাপতি। কি সুন্দর তার গায়ের রঙ। পরির মতো ডানা। সেই রঙিন ডানা ঝাপটিয়ে শুঁয়ো পোকা উড়ছে।

তখন পিঁপড়ের দল হাততালি দিয়ে বলে ওঠে- দেখ, দেখ; রেলগাড়িটা উড়তে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close