অলোক আচার্য

  ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

মামদোর কবলে টামদো ভূত

পরীক্ষার ছুটির পর মামার বাড়ি যাওয়ার প্ল্যান হলো। আমি রাজি হইনি। কারণ সেখানে আমার সমবয়সী কেউ ছিল না। সারাদিন চুপচাপ বসে থাকতে হয়। এখানে রঞ্জু, মনিদের সাথে দিনগুলো টপ করে পার হয়ে যায়। কিন্তু আমার মতের আর কে দাম দেয়! এক সকালে ছুটলাম মামার বাড়ির উদ্দেশ্যে। আমার মামার বাড়ি যে গ্রামে সেখানে খুব বেশি উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। কারণ মাঝখানে দুটা বড় নদী পার হতে হয়। তারপর বালিতে হাঁটতে হয় ঘণ্টা দেড়েক! এতসব ঝক্কি ঝামেলা মাথায় নিয়ে যখন শেষবার নৌকা থেকে নামলাম তখন আমার মাথায় আমার স্কুলব্যাগ রাখা ছিল। নৌকা থেকে নামতে যাব এমন সময় মনে হলো কী যেন একটা আমার ব্যাগের উপর চেপে বসল। যাই হোক সেটা মাথা উচু করে দেখার সুযোগ ছিল না। পথ চলতে গিয়ে সেটা আর বুঝতে পারলাম না। সব আগের মতোই মনে হল। সন্ধ্যানাগাদ মামার বাড়িতে পৌঁছালাম। মামার বাড়িতে আপ্যায়নের কোনো কমতি ছিল না। আমাকে খুশি করার সবরকম ব্যবস্থাই করা হচ্ছিল। কিন্তু আমার মন ঠিক বসছিল না। সারাদিনের ধকলে খাওয়ার পরপরই চোখ ভারি হয়ে এল। আমাকে মা-বাবার রুমের পাশেই ছোট্ট একটা রুম থাকার জন্য দেওয়া হলো। আমার রুমে গিয়ে চুপচাপ শুয়ে আছি। লাইটটা বন্ধ করতে সাহস পাইনি। ভয় করে। শুয়ে শুয়ে ভাবছি কীভাবে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যাওয়া যায়। হঠাৎ একটা কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ হলে আমি চমকে উঠি। মনের অজান্তেই বেরিয়ে আসে, অ্যাই কে কে? কেউ নেই। ব্যাগের পাশে একটা গ্লাস টেবিলে গড়াগড়ি খাচ্ছে। একটু খটকা লাগল। ঠিক সেই সময়ই একটা কণ্ঠ ভেসে এলো, তুমি কী ঘুমিয়েছ? ঘরে কেউ নেই, অথচ কথা বলছে! আমি দৌড় দেব এমন সময় আবার শুনলাম, আমাকে ভয় পাবেন না। আমি কারো ক্ষতি করি না।

কিন্তু তুই কে?

আমি ভূত। আমি হলাম টামদো ভূত।

বলো কী? মামদো ভূত শুনেছি কিন্তু টামদো ভূত তো শুনিনি।

আমরা মানে টামদো ভূতেরা মামদো ভূতের ভয়ে সারাক্ষণ পালিয়ে বেড়াই। ওরা আমাদের দেখলেই তাড়া করে। এ যেমন আজকে ওর তাড়া খেয়েই তো আপনার স্কুল ব্যাগে ঢুকে পড়লাম। তারপর সোজা এখানে।

কখন ঢুকলি আমার ব্যাগে?

ওই যে আপনি নৌকা থেকে নামলেন যখন।

এবার আমি বুঝলাম তখন নৌকা থেকে নামার সময় কেন ব্যাগটা হঠাৎ ভারি হয়ে গেছিল।

এবার তুমি যাও। আমি ঘুমাব। ভূত কোলে নিয়ে তো ঘুমানো যাবে না।

আমি আপনার কাছে থাকব। বাইরে গেলেই মামদো ভূত ধরে ফেলবে।

ধরলে কী করবে?

ধরা পড়লে রক্ষা নেই। কঠিন যন্ত্রণা দিবে। আমি যাব না।

তুই থাকবি কোথায়? আপনার ব্যাগে! বলিস কী?

আপনারা যে কয়েকদিন এখানে থাকেন সেই কয়েকদিন থাকব। তারপর যেখান থেকে উঠেছিলাম সেখানে নেমে যাব।

তখন তোকে মামদো ধরবে না? না ধরবে না। কারণ তখন মামদো অন্য টামদো ভূতের পিছনে লাগবে। আমাকে কিছু বলবে না।’ ‘আচ্ছা থাক।’

তারপর থেকে এক সপ্তাহ টামদো ভূত আমার ব্যাগের ভিতরেই থাকল। রাতে বের হত। টুকটাক কথা বার্তা হত। সবই মামদো ভূত বিষয়ে। আসার দিন সেই নদীর কাছে ও আমার ব্যাগ থেকে নেমে গেল। আমার কানের কাছে এসে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে লাগল।

কাঁদছিস কেন? কানের কাছে এভাবে

কাঁদবি না। আমি আবার মামার বাড়ি বেড়াতে এলে আসিস। এবার যা। তোর কান্না শুনে আমিও যদি কাঁদি তাহলে বাবা-মা সন্দেহ করবে। টামদো ভূত হাওয়ার সঙ্গে মিশে গেল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close