নুরুল ইসলাম বাবুল
আজকে ছুটুর পুতুল বিয়ে
আজ ছুটির দিন। ভোরবেলা থেকেই খুব ব্যস্ত আছে ছুটু। ঘরদোর পরিষ্কার করছে। নানান রকম রান্নার আয়োজন করছে। এটা-সেটা আরো কত কী! কারণ আজ ওর মেয়ে পুতুলের বিয়ে। বাড়ির বাগানে ছুটুর পুতুল খেলার ঘরদোর। সেখানে বসে বসেই চলছে বিয়ের সব আয়োজন।
ওদের বাড়ির পাশেই সুমিদের বাড়ি। সুমি আর ছুটু একসঙ্গে পড়ে। এবার ক্লাস ফোরে উঠেছে ওরা। একসঙ্গে স্কুলে যায়। বিকেলে একসঙ্গে গোল্লাছুট খেলে। পুতুল খেলে। আজ ওদের পুতুলের বিয়ে।
সকালে ছুটুর মা রান্নার কাজে ব্যস্ত থাকেন। প্রতিদিন নানান খাবার তৈরি করেন তিনি। খুব যত্ন করে খাবারগুলো তৈরি করেন মা। ছুটুর দাদিমাকে সাহায্য করেন। আজও মা রান্না ঘরে ঢুকলেন। ছুটু বাগানে বসে খেলতে খেলতেই দেখতে পেল। তারপর খেলায় মন দিল সে। পাশেই ডালিমগাছ। ছুটুর দাদা গাছের নিচে আরাম করে বসে আছেন। অনেকক্ষণ ধরেই ছুটু বাগানে বসে খেলছে। কিন্তু তা খেয়ালই করেননি ওর দাদা। হঠাৎ ছুটুকে দেখলেন তিনি। দেখেই বললেন, কী করছ, ছুটু।
ছুটু বলল, আমি পুতুল নিয়ে খেলা করছি।
দাদা বললেন, তোমার কয়টি পুতুল আছে, দাদাভাই?
ছুটু জবাব দিল, আমার ৪টি পুতুল আছে।
দাদা অবাক হয়ে বললেন, চারটি পুতুল!
ছুটু বলল, হুম, আমার ৪টি পুতুলের মধ্যে একটি বাবা পুতুল। ১টি মা পুতুল। ১টি ছেলে পুতুল। আর আছে ১টি মেয়ে পুতুল।
দাদা এবার হাসলেন। হাসি থামিয়ে বললেন, তোমার পুতুলগুলোর সঙ্গে আমাকে পরিচয় করে দাও না, দাদু।
ছুটু দাদার কথায় মজা পেল। হেসে হেসে বলল, আচ্ছা।
এরপর পুতুলের বাক্স থেকে একটি পুতুল বের করল ছুটু। দাদার সামনে এনে বলল, এটার নাম বুলবুল। এটা হলো বাবা পুতুল।
দাদা বললেন, ও আচ্ছা, আচ্ছা।
এরপর আরেকটি পুতুল এনে বলল, এটার নাম বুলবুলী। এটি? মা পুতুল।
দাদা বললেন, ও আচ্ছা, আচ্ছা।
এরপর ২টি পুতুল একসঙ্গে এনে বলল, এটা ছেলে পুতুল, নাম অরণ্য। আর এটা মেয়ে পুতুল, নাম মায়া।
দাদা বললেন, ও আচ্ছা, আচ্ছা।
এবার দাদার কথার সুরে সুর মিলিয়ে ছুটু বলল, ও আচ্ছা, আচ্ছা।
একটু থেমে আবার বলল, জানো দাদু, আজ আমার মেয়ে পুতুলটার বিয়ে হবে।
দাদা আরো অবাক হয়ে বললেন, তাই নাকি!
ছুটু বলল, হ্যাঁ, তোমার দাওয়াত থাকল, দাদু।
দাদা মাথা দুলিয়ে বললেন, ঠিক আছে। তা তোমার মায়ামণির বিয়ে কোথায়?
ছুটু বলল, ওই তো, পাশের বাড়িতে।
দাদা শুনতে না-পেয়ে বললেন, কোথায়?
ছুটু এবার আঙ্গুল দিয়ে সুমিদের বাড়ি দেখিয়ে বলল, ওই বাড়ি।
দাদা হাসলেন। ছুটু বলল, জানো দাদু, সুমির ছেলে পুতুলটা দেখতে খুব সুন্দর। আর খুবই ভালো।
এরপর ছুটু দুঃখ করে বলল, কিন্তু ওরা ভীষণ গরিব।
দাদা বললেন, গরিব হয়েছে তো কী হয়েছে, বর ভালো হলেই হলো ।
ছুটু বলল, ঠিক আছে, দাদু। আজকে বিকালেই কিন্তু মায়ামণির বিয়ে।
দাদা বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন, আজই!
ছুটু জোর দিয়ে বলল, জি দাদাভাই। শুভ কাজে দেরি করতে নেই।
দাদা হাসলেন। তারপর বললেন, ঠিক আছে, দাদু। আজই তোমার মেয়ে পুতুলের বিয়ে দেব ।
রান্নাঘর থেকে ছুটুর মা ও দাদি একটু একটু শুনছিল দাদা ও নাতনির কথা ।
দাদি চেঁচিয়ে বললেন, কাকে আজই বিয়ে দিবে?
দাদা হেসে হেসে বললেন, আরে, তুমি আবার আমাদের কথায় কান দিচ্ছ কেন?
ছুটু বলল, দাদি, আজ আমার মেয়ে পুতুলের বিয়ে।
দাদি বললেন, তাই নাকি! তা আমরা দাওয়াত পাব তো?
ছুটু বলল, তোমাদের ছাড়া আমার পুতুলের বিয়েই হবে না।
দাদি খুশি হয়ে বললেন, ঠিক আছে, আমরা রান্না শেষ করে নিই।
বলতে বলতেই সুমি এসে হাজির হলো। সুমিকে দেখে হাসলেন দাদা। তারপর ছুটুকে দেখিয়ে দিয়ে বললেন, দেখ, কে এসেছে।
ছুটু সুমিকে দেখেই ফিক করে হেসে উঠল। তারপর বলল, আয় এখানে। আমি দাদাভাইয়ের সঙ্গে তোর ছেলে পুতুল আর আমার মেয়ে পুতুলের বিয়ের ব্যাপারে কথাবার্তা বলছি।
সুমিও ফিক করে হেসে বলল, তাই নাকি!
সব ঠিকঠাক আছে কি না, তা জেনে চলে গেল সুমি
তারপর সকাল গড়িয়ে দুপুর এলো। দুপুর হেলে পড়তে না-পড়তেই চলে এলো বরযাত্রী। ধুমধাম আয়োজন বিয়ে বাড়িতে। ছুটুর বাবা, মা, দাদা, দাদি সবাই বসে বসে সেই আয়োজনে অংশ নিলেন। ছুটু আনন্দে ভাসতে থাকল। বিয়ের কাজ শেষ হলো ভালোভাবেই। এবার কনে বিদায়ের পালা। এমন সময় বরযাত্রীদের একজন জিজ্ঞেস করল, যৌতুক হিসেবে কী কী দেওয়া হবে?
সুমি চট করে বলল, কোনো যৌতুক নেই।
লোকটি বলল, তার মানে?
সুমি বলল, আমাদের স্কুলের স্যার বলেছেন, যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি।
ছুটু বলল, স্যার আরো বলেছেন, যৌতুক দেওয়া এবং নেওয়া সমান অপরাধ।
উপস্থিত সবাই ওদের কথায় খুশি হয়ে হাততালি দিলেন। যৌতুক নিয়ে কথা বলা লোকটা পেছন থেকে পালিয়ে গেলেন। কনে বিদায়ের কাজ শেষ হলো। ছুটু একটুখানি কেঁদে চোখ মুছে নিলো।
"