মোফাজ্জল হোসেন (শান্ত)

  ০৯ নভেম্বর, ২০২৪

ছুটি দিনের মজা

আজ শুক্রবার। শুক্রবার মানেই ছুটি, শুক্রবার মানেই মজা। সারা দিন লেখাপড়ার বালাই নেই। শুধু খেলাধুলা, আর ঘুরে বেড়ানো। টিনা, লিনা এবং মিনা তিন বান্ধবী। তারা একই স্কুলের একই শ্রেণি অর্থাৎ দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। শুধু তাই নয়, তাদের বাড়িও একই গ্রামে, তাও আবার পাশাপাশি। তারা তিনজন একই সঙ্গে স্কুলে যায়, খেলাধুলা করে এবং একসঙ্গেই ঘুরে বেড়ায়। শুক্রবার মানেই তাদের আনন্দের দিন, আনন্দের যেন শেষ নেই। শুক্রবার সকাল থেকেই তারা খেলাধুলা করে, ঘুরে বেড়ায় এবং বিকেল হলেই তাদের আনন্দ আরো দ্বিগুণ হয়ে যায়। কেননা বিকেল হলেই তারা তাদের দাদিমার নিকট থেকে মজার মজার গল্প শুনতে পারে। দাদিমার বেশ বয়স হয়েছে। বয়স হলেও তিনি ছোটমণিদের গল্প শোনাতে ভালোবাসেন। তাই আজ শুক্রবার বিকেলেও টিনা, লিনা এবং মিনা তাদের দাদিমার নিকট গল্প শুনতে এসেছে। লিনা বলল, ‘দাদিমা আজ তুমি আমাদের কী গল্প শোনাবে?’

দাদিমা বলল, ‘শুনো দাদুরা, আজ তোমাদের আমি এক দুষ্টু রাজার গল্প শোনাব।

লিনা- ‘ঠিক আছে দাদিমা বলো বলো দুষ্টু রাজার গল্প, অনেক মজা হবে।’

দাদিমা- তাহলে শুনো দাদুরা, সে অনেক দিন আগের কথা, এক ছিল রাজ্য। সেই রাজ্যের রাজা ছিল দুষ্টু। তার অত্যাচারে রাজ্যের আকাশ অন্ধকার হয়ে আসছিল। আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করত রাজ্যের মানুষগুলো। সবাই ভীতস্ত্র। স্বাধীনতা যেন চাপা পড়ে আছে। কেউ মুখ ফুটে, দৃঢ় নিঃশ্বাসের সঙ্গে কথা বলতে পারে না সেই রাজ্যে। অন্যায়ই যেন এখানকার ন্যায়। অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই মৃত্যু তার জন্য নির্ধারিত। এই রাজ্যের দুষ্টু রাজার অত্যাচারে অতিষ্ঠ রাজ্যের মানুষ, তাকে সবাই ঘৃণা করে। রাজ্যের মানুষদের ওপর অত্যাচার বেড়েই চলেছে। অত্যাচার যখন তুঙ্গে, ঠিক তখনই সেই রাজ্যে এক যুবকের দেখা মেলে। সে অন্যায়ের সঙ্গে কখনো আপস করতে পারত না। সে দুষ্টু রাজার অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করে এবং প্রতিবাদ গড়ে তোলে তার মতো আরো কিছু যুবকদের নিয়ে। রাজ্যের মানুষদের এই প্রতিবাদে শামিল করতে, তাদের ধারে ধারে যায় তারা। আর বলতে থাকে, ‘আপনারা আর কতকাল এই দুষ্টু রাজার অত্যাচার সইবেন। আপনারা যত দিন চুপ থাকবেন, তত দিন অত্যাচার আরো বেড়েই চলবে। আমরা যদি সবাই এক হয়ে প্রতিবাদ করি, তাহলে এই দুষ্টু রাজার শাসন এখানেই শেষ হয়ে যাবে। তাই আসুন, আমরা এক হয়ে এই দুষ্টু রাজার অত্যাচার রুখে দিই। আপনারা ভয়কে উপেক্ষা করুন, আমাদের বিজয় অতি সন্নিকটে। আপনারা এক হলে এই রাজা পালাতে বাধ্য হবে। মনে রাখবেন, দুষ্টুরা আমাদের ভয় দেখিয়ে, তারাই আঁধারে পালিয়ে যায়।’ যুবকের কথায় কিছু মানুষের ভয় কাটল, সাড়া দিল আহ্বানে। এই খবর দুষ্টু রাজার কানে পৌঁছায়। তারপর...

মিনা- তারপর, তারপর কী হলো দাদিমা?

দাদিমা- তারপর দুষ্টু রাজা সেই যুবককে কারারুদ্ধ করে। দুষ্টু রাজা ভাবে, এই যুবকের কণ্ঠরোধ করলে আর কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস দেখাবে না। কিন্তু সেই যুবককে আটক করার পর রাজ্যের প্রতিবাদ আরো ভারী হয়ে ওঠে। যুবকের ওপর রাজার অত্যাচারও বেড়ে যায়। ওদিকে যুবকের সহযোদ্ধাদের প্রতিবাদ দমনেও দুষ্টু রাজা তার বাহিনীকে লেলিয়ে দেয়। কিন্তু না, তাতেও কাজ হয় না, প্রতিবাদ বেড়েই চলেছে। তাই দুষ্টু রাজা একটা ফন্দি আঁটল...

লিনা- নিশ্চয় সে দুষ্টু ফন্দি এঁটেছে,

দাদিমা- হ্যাঁ দাদু, তুমি ঠিক বলেছো।

সে কারাবন্দি যুবককে প্রস্তাব করে, তুমি রাজ্যের যা চাও, আমি তাই দেব। তবে তুমি শুধু কারাগার থেকে বাহির হয়ে, তোমার সহযোদ্ধাদের ঘরে ফিরিয়ে নেবে, আমার বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ বন্ধ করতে বলবে। তারপর...

টিনা- তারপর যুবকটি কি দুষ্টু রাজার প্রস্তাব মেনে নেয়, দাদিমা?

দাদিমা- না দাদু, তারপর যুবকটি মুচকি হেসে বলল, অত্যাচারীর অত্যাচার আজীবন টিকে থাকে না, তার ধ্বংস সুনিশ্চিত। আমাকে হত্যা করলেও এই প্রতিবাদ বন্ধ হবে না। বরং আপনি নিজেকে শুধরান রাজা মশাই। দুষ্টু রাজা যুবকের কথায় রাগান্বিত হয়ে তাকে হত্যার নির্দেশ দেয়। রাজার নির্দেশে সেই যুবককে হত্যা করা হয়।

এই খবর রাজ্যে ছড়িয়ে পড়লে, রাজ্যের প্রতিবাদ আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। তখন রাজ্যের ছোট-বড়, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষ সবাই এই প্রতিবাদে অংশ নেয়। রাজা তাদের ওপর সৈন্য লেলিয়ে দিলে, প্রতিবাদ আরো বেগতিক হয়। সাধারণ মানুষ সৈন্যদের ওপরও আঘাত করতে দ্বিধা করে না। হতাহতের খবর বেড়েই চলে। একপর্যায়ে সৈন্যরা পিছু হাটে, পালাতে শুরু করে। রাজ্যের মানুষ যাত্রা শুরু করে দুষ্টু রাজার প্রাসাদের দিকে দুষ্টু রাজাকে ধরতে। সৈন্যরা তাদের দমাতে পারছে না। এই খবর দুষ্টু রাজার কানে পৌঁছালে, রাজা ভয়ে তার রাজপ্রাসাদের পেছন দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়। অত্যাচারমুক্ত হয় সেই রাজ্যটি। স্বাধীন রাজ্যের আকাশ ধ্বনিত হয় রাজ্যের মানুষের আনন্দ-উল্লাসে। আর এখানেই গল্পটি শেষ হয়।

দাদিমা- তাহলে দাদুরা এই গল্পটি থেকে তোমরা কি শিখতে পারলে?

টিনা বলল, ‘অত্যাচারীর ফল কখনো ভালো হয় না। তাই আমাদের কারো সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা উচিত নয়।’

লিনা- আমরা অন্যয় দেখে কখনো চুপ থাকব না, অন্যায়ের বিরুদ্ধে চুপ থাকলে অন্যায় বেড়েই চলে।

মিনা- রাজ্যের জন্য যারা কাজ করে, জীবন বিলিয়ে দেয়, মানুষ তাদের ভালোবাসে, যেমন যুবকটিকে রাজ্যের সবাই ভালোবেসেছে।

দাদিমা- হ্যাঁ দাদুরা, তোমরা ঠিক বলেছো। আমাদের কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ করা যাবে না, সব সময় আমাদের সত্যের পথে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে চলতে হবে। তাহলে মানুষ আমাদের ভালোবাসবে। ঠিক আছে দাদুরা এখন সন্ধ্যা হয়ে আসছে, তোমরা এখন ঘরে ফিরে যাও। সবাই উচ্চ স্বরে বলল, ঠিক আছে দাদিমা, তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, দুষ্টু রাজার গল্প শোনানোর জন্য।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close