নুরুল্লাহ আলম নুর
অদ্ভুত প্রতিচ্ছবি
শহরের এক কোণে পুরোনো বাড়িটা অনেক দিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কেউ সেই বাড়িতে যায় না। লোকমুখে প্রচলিত আছে, বাড়িটার ভেতরে কিছু একটা আছে। কেউ বলে অদ্ভুত আওয়াজ শোনা যায়, কেউ আবার বলে রাত-বিরাতে বাড়িটার জানালার পাশে কালো ছায়া দেখা যায়। রাতের বেলা পথচারীরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেই বাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে চলে যায়।
তবে আবরার সেসব গল্প বিশ্বাস করে না। সাহসী ছেলে, সে সিদ্ধান্ত নিল, এক রাতের জন্য সেখানে থাকবে। বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে ফেলল- এমন কিছুই নেই, সবই মানুষের গুজব।
রাত ১১টা। আবরার বাড়িটায় প্রবেশ করল। বাতাস ভারী হয়ে আছে, আর চারদিক যেন থমথমে। ছাদ থেকে ছিন্ন ভিন্ন কাপড়ের পর্দা ঝুলে আছে, আর মেঝেতে আছে ধুলো আর ভাঙা কাচ। হঠাৎ করেই বাতাসের মাঝে যেন কারো ফিসফিসানি শোনা গেল। আবরার জোরে চিৎকার করে বলল, ‘কে ওখানে?’ কোনো উত্তর নেই। সে সাহস করে বাড়ির ভেতরে আরো গভীরে গেল।
যেতে যেতে একসময়, সে একটি ছোট ঘরে তাকে আবিষ্কার করল। ঘরটা ছিল খুবই অন্ধকার। মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে সে সামনে তাকাল। তাকিয়েই দেখল একটি পুরোনো আয়না। আচমকা তার প্রতিচ্ছবি কেমন যেন বদলে গেল। সেই প্রতিচ্ছবির চোখে ছিল অদ্ভুত দৃষ্টি- যেন সে আবরারকে দেখছে, তার সামনে এসে দাঁড়াতে চাচ্ছে।
হঠাৎ করেই পেছন থেকে কারো নিঃশ্বাস ফেলার শব্দ শোনা গেল। আবরার দ্রুত পেছন ফিরল, কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না। আবার আয়নায় চোখ গেল আবরারের। আয়নার প্রতিচ্ছবির মুখে একটা বিদ্রূপাত্মক হাসি। ঘরের তাপমাত্রা কমতে থাকল। আবরার আতঙ্কে দৌড় দিল, কিন্তু দরজাটা নিজ থেকেই বন্ধ হয়ে গেল।
ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে আবরার আবার আয়নায় তাকালো, এবার আয়নার সেই প্রতিচ্ছবি ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে লাগল। ঠিক সেই মুহূর্তে বাতাসের মধ্যে আবারও ফিসফিস শোনা গেল- ‘তুমি আসার আগে থেকেই আমরা এখানে তোমার অপেক্ষায় ছিলাম।’
"