আবদুল লতিফ

  ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

পরীর দেশে নুহা

নুহাদের বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট্ট একটা খাল। খালের দুই পাড়ে বিশাল বড় বড় শতবর্ষী দুটি গাবগাছ। এই গাবগাছে পরী দেখার গল্প অনেকের কাছেই শুনেছে নুহা। সেই থেকে পরী দেখার খুব ইচ্ছে তার। তাই যারা দেখেছে বলে দাবি করে, তাদের কাছে নুহা অনেক করে জানতে চেয়েছে পরীরা কখন আসে, কীভাবে আসে, কী করলে নুহাও পরীদের দেখতে পারবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু কারো কোনো পরামর্শেই তার পরী দেখার সৌভাগ্য হয়ে ওঠেনি।

সেদিন ছিল মঙ্গলবার, অমাবস্যার রাত, ঘুটঘুটে অন্ধকার। মাঝরাতে থালাবাসনের টুংটাং শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিল নুহা। সাহস করে দক্ষিণের জানালাটা আস্তে করে একটু ফাঁক করতেই স্পষ্ট দেখতে পেল খালের ওই পাড়ের গাবগাছটার গোড়ায় বসে খালের পানিতে থালাবাসন ধোয়ায় ব্যস্ত ধবধবে সাদা শাড়ি পরা কজন মহিলা। অন্ধকারে তাদের অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছিল। গাছের আশপাশ তাদের রূপের স্নিগ্ধ আলোয় ভাসছিল। নুহার বুঝতে আর বাকি রইল না যে সেই কাঙ্ক্ষিত পরীর দেখা সে এত দিনে পেয়ে গেছে। ভালো লাগার পাশাপাশি একটু ভয়ও পাচ্ছিল। কিন্তু মুহূর্তেই তার ভয় কেটে গেল, যখন একটা পরী হাসিমুখে তার দিকে তাকিয়ে নাম ধরে ডেকে বলল, ‘এই নুহা তুমি ভয় পাচ্ছো কেন, তুমি না আমাদের খুঁজছিলে?’ আসো আসো বাচ্চাদের সঙ্গে খেলবে অনেক মজা হবে।

ততক্ষণে ছোট্ট একটা বাচ্চা পরী যার ঘনকালো চুলের সুন্দর বিনুনিতে ফুল গুঁজে রাখা, এসে হাত বাড়াতেই নুহা তার হাত ধরে পেছন পেছন হাঁটতে শুরু করে। দুজন গিয়ে গাবগাছের একেবারে মাথার ওপরে উঠে গেল। সেখানে গিয়ে নুহা তো অবাক! এত সুন্দর পরিবেশ কখনো দেখেনি সে! সুবিশাল বাগানে এক একটা তাজা ফুল গাছই এক একটা বসার চেয়ার। সেই চেয়ারে বসেই তারা খাওয়া-দাওয়া করে। আর ফুলের ঘ্রাণে চারপাশ মণ্ডম করছে।

সেখানে যাওয়ার পর আরো অনেক বাচ্চা পরী এসে ভিড় করল। নুহাকে পেয়ে সবাই অনেক খুশি। একটু পরে নুহাকে নিয়ে সবাই সুগন্ধি সাবান দিয়ে ভালো করে হাত-মুখ ধুয়ে এসে একসঙ্গে খেতে বসল। খাওয়া শেষে আবার সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ করে স্কুলব্যাগ কাঁধে গল্প করতে করতে স্কুলের উদ্দেশে চলল।

বাচ্চা পরী দেখতে আরো অনেক বেশি কিউট। ছোট ডানাগুলো মেলে যখন উড়তে থাকে, তখন দৃষ্টি ফেরানো কঠিন হয়ে পড়ে। বাচ্চা পরীদের সঙ্গে নুহাও কখন যে ডানা মেলে উড়তে শুরু করেছে, তা টেরই পায়নি। উড়ে উড়ে আকাশের মেঘগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছিল তারা আর বলছিল, যারা খাওয়ার সময় খাওয়া, পড়ালেখার সময় পড়ালেখা, খেলার সময় খেলা আর ঘুমের সময় ঘুমায়, তাদের শরীর ও মন থাকে সুস্থ এবং তাদের জীবন সদা হাসি-আনন্দে ভরা থাকে, তাই পরীরা সব সময় এসব নিয়ম মেনে চলে।

গল্প করতে করতে তারা স্কুলে পৌঁছে যায়। স্কুলে পৌঁছে নুহা তো আরো অবাক। এটা কি স্কুল না স্বর্গোদ্যান! কত রকম ফুল আর ফলের গাছ যে স্কুল চত্বরে আছে তা বর্ণনাতীত। নুহা একটা বিষয় লক্ষ করল পরীদের সবকিছুতেই ফুলের ছোঁয়া থাকে। দেখতে দেখতে একসময় স্কুলের বিশাল বড় ডিজিটাল পর্দায় ভেসে উঠল নুহার হাসিমুখের ছবি। স্পিকারে ঘোষণা এলো- আজ আমরা নুহাকে পেয়ে ভীষণ আনন্দিত, তাই এখন আমরা সবাই নুহাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেব। তখনই চারপাশে এক অদ্ভুত সুন্দর আলো জ্বলে ওঠে। আকাশ থেকে বৃষ্টির মতো ফুলের পাপড়ি ঝরতে শুরু করে। সবাই একসঙ্গে হাততালি দিয়ে নুহাকে শুভেচ্ছা জানায়।

এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য, অসাধারণ অনুভূতি! সবার হাতে হাতে নুহার জন্য পুষ্পসজ্জিত বর্ণিল গিফট বক্স এবং প্রতিটা বক্সের গায়ে নুহার হাসিমুখের সুন্দর সুন্দর ছবি। সবাই নাচে-গানে মেতে উঠল, সঙ্গে নুহাও। নুহাকে বরণ অনুষ্ঠানের পরেই স্কুল ছুটি হয়ে যায়। অনুষ্ঠান শেষে সবাই তাদের গিফট বক্সগুলো একে একে নুহার হাতে তুলে দিতে শুরু করে। তখনই মা এসে ডাকলেন, নুহা উঠো উঠো স্কুলের সময় বয়ে যাচ্ছে। মায়ের ডাকে ঘুম ভেঙে গেলে ঘুম ঘুম চোখে নুহা তার গিফট বক্সগুলো খুঁজতে থাকে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close